যাঁরা নীরবে পড়াশোনা করতে পারেন না, গান বা সুর শুনতে শুনতে পড়তে পছন্দ করেন, তাঁদের পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় সিএসইউ গ্লোবালের পক্ষ থেকে ওয়ান পোলের করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর নিউইয়র্ক পোস্টের।
নতুন এ গবেষণার আওতায় গান শোনা ও পড়াশোনার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, যাঁরা গান শুনতে শুনতে পড়াশোনা করেন, তাঁদের পরীক্ষার ফল জিপিএ–৩ দশমিক ২–এর ওপরে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই (৪৯ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা পড়াশোনার সময় নিয়মিত গান শুনতেন। ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, পুরোপুরি নীরবতার মধ্যে না থেকে কোনো শব্দের মধ্যে তাঁদের পড়াশোনাটা ভালো হতো।
শুধু গানই নয়, কেউ কেউ পড়াশোনার সময় অন্য শব্দও শুনতে পছন্দ করতেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ প্রকৃতির শব্দ, ২৬ শতাংশ বাস্তব জীবনের শব্দ এবং ২৪ শতাংশ মানুষ পডকাস্ট শুনতে পছন্দ করতেন।
সিএসইউ গ্লোবালের শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ–বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক ক্রিস্টিনা অ্যাগভেন্ট বলেন, বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশোনার অভ্যাসে যুক্ত করতে পারেন। হতে পারে তা স্পটিফাইয়ে থাকা যন্ত্রসংগীত, ইউটিউবে হালকা ধরনের কিংবা বৃষ্টির শব্দ বাজিয়ে প্রশান্তিময় মেডিটেশন।
শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ পড়ার ধরনের সঙ্গে মানানসই পথ বেছে নিতে হবে বলে মনে করেন ক্রিস্টিনা অ্যাগভেন্ট।
পড়তে পড়তে যাঁরা গান শোনেন, তাঁদের মধ্যে শাস্ত্রীয় সংগীত শোনেন ৩১ শতাংশ, রিদম অ্যান্ড ব্লুজ শোনেন ২৮ শতাংশ এবং লোকসংগীত শোনেন ২৮ শতাংশ মানুষ। গান শুনতে শুনতে পড়াশোনা করা মানুষের মধ্যে ৫৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে আর ৪১ শতাংশের বয়স ৫৮ থেকে ৭৬ বছরের মধ্যে।
যাঁরা গান শুনতে শুনতে পড়েন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মনে করেন, এটি থেরাপির মতো কাজ করে। ৭৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, পড়াশোনা রপ্ত করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। যাঁরা পড়তে পড়তে গান শোনেন, তাঁদের মধ্যে ৮১ শতাংশ বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁরা অনেক বেশি করে তাঁদের শেখার অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করতে পারেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী মানুষের দুই–তৃতীয়াংশ, যাঁরা বলেছেন স্কুলে পড়াশোনায়ও মনোযোগী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এখনো গান শুনতে শুনতে পড়েন।
গান শুনতে শুনতে যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁরা আরও বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে তাঁদের পড়াশোনার যে সূচি, তার চেয়েও বেশি সময় ধরে পড়াশোনা করতে পছন্দ করেন তাঁরা।
যাঁরা গান শোনেন, তাঁদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, পরীক্ষার সময় তাঁরা অপেক্ষাকৃতভাবে সুস্থির থাকতেন। আর ৮০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, নিয়মিত ক্লাসের জন্য নিজেদের তুলনামূলক বেশি প্রস্তুত মনে হয় তাঁদের।
প্রতি তিনজন মার্কিন নাগরিকের মধ্যে দুজন বলেছেন, তাঁরা কাজ করার সময় গান শুনতে পছন্দ করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী মানুষের মধ্যে ৮৯ শতাংশ বলেছেন, গান শুনতে শুনতে কাজ করলে সে কাজ অনেক ফলপ্রসূ হয় বলে মনে করেন তাঁরা।
৮৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, সংগীত তাঁদের আরও বেশি করে কাজের অনুপ্রেরণা দেয়।
জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা পড়াশোনার সময় যে গানগুলো শুনতে পছন্দ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে আছে অ্যাগনেস ওবেলের ‘রিভারসাইড’, বব সেগারের ‘অ্যাগেইনস্ট দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ড্রেকের ‘গডস প্ল্যান’।
৫৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, স্কুলগুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের গান শুনতে শুনতে পড়াশোনার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া।
ক্রিস্টিনা অ্যাগভেন্টও তেমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘পড়ার সময় সুর শোনার বিষয়টি কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। এর মধ্য দিয়ে তারা মূল বিষয়বস্তুর ওপর তাদের মনোযোগ বাড়াতে পারে। আমি সবাইকে বিভিন্ন সুর ও শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করব, যেন নিজেদের পড়াশোনার পরিবেশের জন্য সহায়ক বিষয়টিকে তারা বেছে নিতে পারে।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৮, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,