পাই দিবস গাণিতিক ধ্রুবক পাই (π)এর সম্মানে উদযাপনের দিন। পাই-এর মান প্রায় ৩.১৪ বলে প্রতি বছর ১৪ই মার্চ (৩/১৪) পাই দিবস হিসাবে পালিত হয়।
পাই দিবস কখনও কখনও ১৪ই মার্চ দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে উদযাপন করা হয়। ঐ দিন দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটকে পাই মিনিট নামে আখ্যায়িত করা হয়। দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়। পাই সেকেন্ডে পাই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পাইয়ের মানের (৩.১৪১৫৯২৬) কাছাকাছি সময়ে দিবসটি উদযাপন করা সম্ভব হয়।
পাই দিবস আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রদানের জন্য সুখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনেরও জন্মদিন। এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন আরেক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিভেন হকিং।
১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো পাই দিবস পালিত হয় সানফ্রানসিসকোর একটি বিজ্ঞান জাদুঘরে। জাদুঘরের বৃত্তাকার স্থানে এর কর্মচারী ও দর্শনার্থীরা মিলে কেক (পাই) খেয়ে দিনটি উদযাপন করেন। ঐ জাদুঘরের কর্মকর্তা ল্যারি শ এই দিবস উদযাপনের উদ্যোক্তা বলে তাকে “পাই-এর রাজপুত্র” বলা হয়। ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অনেক সময় তাদের নতুন শিক্ষার্থীদের গ্রহণপত্র পাই দিবসে ডাকে দিয়ে থাকে।
(সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া)
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ১৪, ২০২১
রহস্যময় সংখ্যা পাইয়ের ইতিহাস সুপ্রাচীন, প্রায় চার হাজার বছর আগে এ সংখ্যার উদ্ভব। ১৭০৬ সালে ওয়েলশ গণিতবিদ উইলিয়াম জোনস এই সংখ্যার জন্য প্রথম গ্রিক অক্ষর পাই ব্যবহার করেন। এরপর ১৭৩৭ সালে সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী লিওনহার্ড অয়লার এই সংখ্যাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তখন থেকে প্রকৌশলী, পদার্থবিদ, স্থপতি, ডিজাইনার থেকে শুরু করে অনেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাই ব্যবহার করে আসছেন। কম্পিউটার আবিষ্কারের আগপর্যন্ত পাইয়ের মান সবচেয়ে নির্ভুলভাবে বের করেন ডি এফ ফার্গুসন। ১৯৪৪ সালে তিনি ৬২০ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বের করতে সমর্থ হন। আজ পর্যন্ত ১ ট্রিলিয়নের বেশি ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বের করা সম্ভব হয়েছে। গণিতবিদেরা এখানেই থেমে থাকতে চান না
১৯৮৮ সালে এই পাইয়ের জন্য একটি দিন ঠিক করেন পদার্থবিদ ল্যারি শ। যেহেতু পাইয়ের মানের প্রথম তিনটি অঙ্ক ৩.১৪, তাই দিবসটির জন্য বছরের তৃতীয় মাসের ১৪তম দিন অর্থাৎ ১৪ মার্চকে তিনি মনোনীত করেন। দিনটি আবার আলবার্ট আইনস্টাইনেরও জন্মদিন। ২০০৯ সালে শ-র কর্মস্থল সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বিজ্ঞান জাদুঘরে উদ্যাপিত হয় প্রথম পাই দিবস। মার্কিন জাতীয় প্রতিনিধি পরিষদ আইন পাস করে দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। গণিতবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষকেরা আশা করেন, এই ছুটি পৃথিবীব্যাপী গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে অবদান রাখবে।
২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর ইউনেসকো ১৪ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণিত দিবস (আইডিএম) ঘোষণা করে। প্রতিবছর গণিত দিবসের জন্য একটা করে নতুন থিম থাকে। আন্তর্জাতিক গণিত ইউনিয়ন ২০২১-এর মূল থিম নির্ধারণ করেছে: উন্নত বিশ্বের জন্য গণিত। আন্তর্জাতিক গণিত ইউনিয়ন (আইএমইউ) একটি অলাভজনক বৈজ্ঞানিক সংস্থা। যার প্রধান লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী গণিতের প্রচার ও প্রসার। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ করে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ৯০।
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে জ্ঞাতে–অজ্ঞাতে আমরা গণিতের দ্বারস্থ হচ্ছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণিতের প্রায়োগিক ব্যবহারের কয়েকটি উদাহরণ: সার্চ ইঞ্জিনগুলো জটিল গাণিতিক মডেলের মাধ্যমেই ইন্টারনেটকে পরিচালনা করে; সিটি স্ক্যান, এমআরআইয়ের মতো মেডিকেল ইমেজিং ডিভাইস গাণিতিক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সংখ্যাসূচক তথ্য থেকে ইমেজ তৈরি করে; মানব জিনোমের ডিকোডিং হলো গণিত, পরিসংখ্যান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের সম্মিলিত কার্যক্রমের ফল; গণিতের মাধ্যমে আমরা কৃষ্ণগহ্বর ও সৌরজগতের প্রথম ছবি পেতে সমর্থ হই; সুরক্ষিত যোগাযোগের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি সংখ্যাতত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল; গণিতশাস্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে; আমাদের স্মার্টফোনের সফটওয়্যারের পেছনেও রয়েছে গণিতের অবদান।
পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে অপটিমাইজ করতে গণিতশাস্ত্র ব্যবহৃত হয়; মহামারির বিস্তার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে গণিতের সাহায্য নেওয়া হয়, গণিত আমাদের কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার বুঝতে, নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে; স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার কার্যকরী পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় গণিতের মডেল কাজে লাগে; জনগণের ইচ্ছাকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে গণিত সাহায্য করে; গণিতশাস্ত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, হারিকেন প্রভৃতি) ঝুঁকি অনুধাবন এবং আগাম প্রস্তুতিতে সহায়তা করে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে গণিত অপরিহার্য। যেমন বৈশ্বিক পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যে তার প্রভাব বুঝতে গণিতের মডেল ব্যবহৃত হয়; গণিত শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নত ভবিষ্যৎ অর্জনে সহযোগী ভূমিকা রাখে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ ও মানচিত্র অঙ্কন করা যায়; গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা প্রতিটি নাগরিককে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে; বৈশ্বিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে গণিত অপরিহার্য; শান্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারের জন্য স্টিয়ারিং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য।
গণিত যাপিত জীবনে অবদান রাখছে। শিল্প এবং সংগীতে রয়েছে গণিতের উপস্থিতি; দাবার কৌশলে আছে গণিত; বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণিতের অবদান লক্ষণীয়; নির্মাতা, কৃষক, শ্রমিক, বিপণিবিতান, ক্রীড়াবিদ প্রতিদিনই কিছু না কিছু গাণিতিক ধারণা ব্যবহার করে থাকেন; গণিত জিপিএস স্যাটেলাইটভিত্তিক নেভিগেশনের মাধ্যমে আমাদের পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে; আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস পেতে উন্নত বায়ুমণ্ডলীয় মডেল ব্যবহার করা হয়; গণিত পেনশন সিস্টেমকে টেকসই করে তোলে; মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রেও রয়েছে গণিতের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।
বিগত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ গণিত সমিতি আন্তর্জাতিক গণিত দিবস উদ্যাপনে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন নরওয়ের এনটিএনইউ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক আন্তর্জাতিক গণিত ইউনিয়নের মহাসচিব ড. হেলগে হোলডেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশে ফ্রান্সের উপরাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্ক টেকোর, বিশেষ অতিথি ফ্রান্সের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ইমেরিটাস অধ্যাপক মিশেল ভাল্ডস্মিট। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় গণিত ও গণিত গবেষণা উন্নয়নে সহযোগিতা ও বিশ্বব্যাপী গণিত পরিবারের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির জন্য ২০২১ সালে তিনি বার্ট্রান্ড রাসেল পুরস্কার পান।
লেখক: অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম আহ্বায়ক, আন্তর্জাতিক গণিত দিবস উদ্যাপন কমিটি ২০২১, সহসভাপতি, বাংলাদেশ গণিত সমিতি
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ১৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,