করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ টিকা পেয়ে গেছেন। সেখানে সংক্রমণ আগের চেয়ে কমে আসছে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকেই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ধীরে ধীরে গতি ফিরে পাচ্ছে অর্থনীতি। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে দেখুন, অনেক দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় টিকা পাচ্ছে না এসব দেশ। পেলেও কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীও টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
করোনাকালে এমন পরিস্থিতি উন্নত ও উন্নয়নপ্রত্যাশী বিশ্বের মধ্যকার বৈষম্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, যা আগামী দিনগুলোয় আরও প্রকট হতে পারে। বৈষম্যের চিত্র এতটাই মারাত্মক যে করোনার ধাক্কা সামলে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে যখন ক্লাব-রেস্টুরেন্ট চালু হচ্ছে, তখন ভারতে অক্সিজেনের অভাবে কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর মিছিল দেখা যাচ্ছে। শোচনীয় পরিস্থিতিতে পড়েছে ব্রাজিলও।
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে টিকা দেওয়া। তবে টিকার বেশির ভাগ ব্যবহার হয়েছে উন্নত দেশগুলোয়। টিকা প্রাপ্তিতে এ বৈষম্য দূর করতে গত বছর প্রায় ১৯২টি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় কোভ্যাক্স নামে সহযোগিতামূলক বৈশ্বিক উদ্যোগ শুরু করেছিল। এমনকি ভারতের কারখানায় গরিব দেশগুলোর জন্য করোনার টিকা উৎপাদনে ৩০ কোটি ডলার দিয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা বৈশ্বিক মানবাধিকার।
তবে টিকার প্রাপ্তি ও বৈষম্য দূর করার পথে এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এসব উদ্যোগ, যার কারণে উন্নয়নপ্রত্যাশী দেশগুলোয় সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষত, ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে টিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস ভারত। এখন দেশটি নিজেই মানবিক সংকটে পড়েছে। বেড়েছে টিকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা। এ কারণে করোনার টিকা রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রেখেছে ভারত। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স। কেননা, এ উদ্যোগের আওতায় বেশির ভাগ টিকা ভারত থেকে সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
ব্রাজিলে এখন প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন। অথচ দেশটিতে পর্যাপ্ত টিকা নেই। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ব্রাজিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে পরিমাণ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, পেয়েছে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ।
দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশ ও ঘানার মতো দেশগুলো শুরুর দিকে চুক্তি কিংবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা পেতে শুরু করেছিল। এসব দেশের অনেক মানুষ টিকার
প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এখন টিকা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও ঘানার অনেক মানুষ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালওয়ির মাত্র ২ শতাংশ মানুষ করোনার টিকা পেয়েছেন। দেশটির চিকিৎসক ও টিকা বিশেষজ্ঞ বোস্টন জিম্বা বলেন, এটা নৈতিকতার বিষয়। এটা (বৈষম্য) নিয়ে উন্নত ও ধনী দেশগুলোকে ভাবতে হবে।
শুধু সরবরাহ ঘাটতি নয়, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রক্রিয়াগত সমস্যা এবং টিকা নিতে মানুষের মধ্যকার অনীহা সংকট আরও জটিল করে তুলছে। এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার জানিয়েছে, করোনার টিকার একটি ডোজ উৎপাদনে যদি এক ডলার ব্যয় হয়, সেই টিকা কারখানা থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো থেকে শুরু করে সংরক্ষণ, প্রয়োগে আরও ৫ ডলার প্রয়োজন হয়। অনেক দেশেই টিকা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। টিকাদানকর্মীদের বেতন-ভাতা, প্রশিক্ষণে খুব সামান্য বিনিয়োগ করা হয়। এসব সমস্যা দেশে দেশে সংকট আরও জটিল করে তুলেছে। প্রয়োজনীয় টিকা না পাওয়া দেশগুলো মহামারি দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে লাখো-কোটি ডলারের লোকসান হতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ০৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,