প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার ব্যবস্থাপনা দেখতে ৫০০ কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনও প্রশ্ন তুলেছে। আবার যাঁদের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের অনেকের চাকরি বদলিযোগ্য। তাঁদের এই প্রশিক্ষণ কতটা কাজে লাগবে, সে প্রশ্নও আছে।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের সপ্তাহে তিন দিন খিচুড়ি ও তিন দিন বিস্কুট (মিড ডে মিল) দেবে সরকার। এ জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি প্রায় ১৯ হাজার ২৮২ কোটি টাকার কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার, যা আগামী জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
এই প্রকল্পের অধীনে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ বছরে মোট ৫০০ জনকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যার জন্য ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, প্রয়োজন হলে দেশের মধ্যেই কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন অনেক দূর এগিয়েছে।
অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান স্কুল ফিডিং প্রকল্পেও বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পেও তা থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত নয়। এখন আলোচনা করে ঠিক হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণে যে ব্যয় হবে, তা অপচয় নয় বরং দক্ষতা বাড়াবে। প্রতিটি প্রকল্পেই কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয় থাকে। তিনি বলেন, কীভাবে বিভিন্ন দেশে এটি (মিড ডে মিল) চালু আছে এবং ব্যবস্থাপনা করছে, সেটা দেখার জন্য প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি এখনো অনুমোদন হয়নি।
বর্তমানে দেশের ১০৪ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন কেবল বিস্কুট দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি উপজেলায় খিচুড়িও দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে।
করোনার কারণে এমনিতেই দেশে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারের নতুন নীতিও হলো, বিদেশে প্রশিক্ষণ কমিয়ে দেওয়া। সেখানে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়ার এমন কর্মসূচির প্রয়োজন আছে। এ জন্য মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হতে পারে। সুষম খাদ্যের বিষয়ে দেশেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো বিশেষজ্ঞ আছেন। কিন্তু এত লোককে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই এসব অনর্থক খরচ বাদ দেওয়াই যুক্তিসংগত। এ ছাড়া যাঁদের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের অনেকের চাকরি বদলিযোগ্য। প্রশিক্ষণের পর বদলি হয়ে গেলে ওই প্রশিক্ষণ কতটা কাজে লাগবে, সে প্রশ্নও আছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: সেপ্টম্বর ১৬, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,