সরকার দেশের সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। অসন্তুষ্টির মূলে রয়েছে তিনটি বিষয়—প্রথমত, চাহিদার তুলনায় কম খাদ্য উৎপাদন; দ্বিতীয়ত, চালের বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং তৃতীয়ত, কম সরকারি মজুত। বাজারমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে খাদ্য সংগ্রহ করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পরও ৫ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল আমদানি করা যায়নি।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে গত ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ আটজন মন্ত্রী এবং দশজন সচিব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের কার্যবিবরণী ঈদের আগে অন্তত ২০টি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে দেশের পুরো খাদ্য পরিস্থিতি। ওই দিনের বৈঠকে মন্ত্রী ও সচিবদের কে কী বলেছিলেন, তা–ও তুলে ধরা হয়েছে কার্যবিবরণীতে।
কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেওয়া, করোনা মহামারিতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সব সময়ের জন্য সরকারি মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ লাখ টন রাখার ব্যাপারে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সরাসরিই বলে দেন, ‘খাদ্য সমস্যা হলে দেশ অস্থির হবে এবং কোনোভাবেই খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।’
খাদ্য অধিদপ্তর বৈঠকে জানায়, খাদ্য মজুত যা আছে, তা খুবই সামান্য। গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি খাতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ১০ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৫৮ হাজার টন গম।
খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, এ বছরের বোরোর মৌসুমে খাদ্য মজুত বাড়াতে হবে এবং করোনার পরিপ্রেক্ষিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্যসহায়তা দিতে খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম বিস্তৃত করতে হবে।
ভারতীয় চাল মন্থরগতিতে আসছে
সরকারিভাবে চাল আমদানির যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, তাতে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বৈঠকে তথ্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক দরপত্র ও সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পর্যায়ে দেশে চাল পৌঁছেছে ৩ লাখ ২০ হাজার টন। তবে ভারত থেকে ছোট ছোট বার্জ ও জাহাজে করে আমদানির কারণে চাল আসার গতি অত্যন্ত মন্থর।
বলা হয়েছে, দেশে চালের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও চালের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৭ জানুয়ারি চাল আমদানির করভার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। এর অবশ্য মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ৩০ এপ্রিল। বৈঠকে বলা হয়েছে, ৩০ এপ্রিলের পর আমদানি করা চাল বাংলাদেশে আসতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে আর চাল আসছেও না।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ২২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,