লেখক:ইফতেখার মাহমুদ।
অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জোগান ও বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তালিকায় বাংলাদেশের নাম।
খাদ্যঘাটতিতে থাকা বিশ্বের ৪৫টি দেশের তালিকায় আবারও এসেছে বাংলাদেশের নাম। ওই তালিকায় আফ্রিকার ৩৩টি, এশিয়ার ৯টি, লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ২টি এবং ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে ইউক্রেনের নাম রয়েছে। উৎপাদন ও আমদানি হ্রাস এবং খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব দেশকে খাদ্যঘাটতির তালিকায় রেখেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
জাতিসংঘের এই সংস্থা চলতি মাসে ‘শস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং খাদ্য পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি ৪ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে। তিন মাস পর পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এফএওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম তালিকায় যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জোগান, বন্যার কারণে ফসল উৎপাদন হ্রাস এবং খাদ্যের আমদানি খরচ ও মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়। এই তালিকায় ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশের নাম রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের আয় কমে গেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে। এর মধ্যে আবার মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্যের জোগান দিতে হচ্ছে। মে ও জুনের বন্যার কারণে ফসল, সম্পদ, বাড়িঘর, গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। এতে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম চাপ হিসেবে বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আটা ও ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। অন্যান্য আমদানিনির্ভর খাদ্যের দামও বাড়তির দিকে। বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খাদ্যের উৎপাদন দশমিক ৪ শতাংশ কম হয়েছে। ২০২১ সালে ধান, গম, ভুট্টাসহ দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ টন। চলতি বছর তা কমে ৬ কোটি ২৩ লাখ টন হয়েছে।
জানতে চাইলে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গমের আমদানি কমেছে। আমরা চেষ্টা করছি গমের আমদানি বাড়ানোর। এ জন্য বেসরকারি খাতকে আরও বেশি সহযোগিতা ও উৎসাহ দিচ্ছি। আশা করি, ভবিষ্যতে গমের আমদানি বাড়বে, দাম কমে আসবে। সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিও বাড়ানো হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে চাল ও গমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ওএমএসে চাল বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কিন্তু এবার এ সময়ও এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই তিন মাসের জন্য বাড়তি ৩ লাখ ৬০ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরকার বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীদের ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে তিন লাখ টন চাল দেশে এসে পৌঁছেছে। তবে সরকার দেশ–বিদেশ থেকে মোট ৩২ লাখ টন চাল ও গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাল আসছে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে। আর গম আসছে রাশিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া ও কানাডা থেকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের দরিদ্র পরিবারগুলো বিপদে আছে। ওএমএস কার্যক্রম রাজধানী ও শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে আছেন। তাঁদের কাছে সহজে কম খরচে খাদ্যপণ্য পৌঁছাতে হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এফএওর ওই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বুরকিনাফাসো, বুরুন্ডি, ক্যামেরুনসহ ৩৩টি দেশ। রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা ও মধ্য আমেরিকার দেশের মধ্যে রয়েছে হাইতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্বে দানাদার খাদ্যের উৎপাদন ২ শতাংশ কমেছে। এ বছর ১৭২ কোটি ২০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ৭২ লাখ টন কম।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ১০, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,