এর আগের “ পার্থক্য খুঁজে বের করা” পোষ্টটিতে শেষ লাইগুলি ছিল
এক অর্থে ক্ষুদ্রই বৃহৎ। মহৎ। এমন একটি ব্যাখ্যা মনে এসেছে।
তবে সেদিন সেটা লেখা হয় নি।
সেই লেখার সূত্র ধরে আজকের লেখাটি। আর আমাদের একজন কবি এস এইচ মং মারমা অপেক্ষায় ছিলেন কবে তিনি পরের লেখাটি পড়তে পারবেন।
ক্ষুদ্রই বৃহৎ এবং মহান এ ধরণের অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। আজ শুধু এটি কথোপোকথনের একটি লাইনের উদাহরণ দিলাম। এ জগতেই ছিলেন তাঁরা দেবী তুল্য।
এমন দেবী তুল্য দুই মানবীদের মধ্যেকার কথাকোপনের একটি লাইন। যা আশির বা নব্বই এর দশকের কথাকোপন। তখন নিজে একে বারেই ছোট। বিবিসি বাংলা বিভাগের রেডিও থেকে শুনা। যা আজও কানের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে আছে।
২০০১ সালের জুনের ১ তারিখের নেপালের মর্মান্তিক ঘটনাটি ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে মর্মাহত করে প্রবল ভাবে, যদিও ঘটনাটি আমেদের দেশের ছিল না।
নিজের দুই চোখ দিয়ে ক্ষনিক ক্ষনের জন্য জীবনে প্রথম কোন রানীকে দেখা। তৎকালিন নেপালের রানী ঐশ্ব্যারীয়া রাজলক্ষী দেবী শাহ। তিনি একজন রানী ছিলেন। এবং তাঁর সম্পর্কে কোন বিবরণ দেওয়ার আমার কোন দক্ষতাও নেই। তিনি ছিলেন একজন রানী। জীবনের প্রথম সত্যিকারের দেখা একজন রানী।
নেপালের রানীর যার সাথে কথোপোকথন, তিনি ছিলেন আর একজন দেবী মানবী। দুই অক্ষরের বিশ্ব ব্যাপী তাঁর নাম। তাঁর কোন বর্ণনা দেওয়া আমাদের সাজে না। যোগ্যতাতেও না। মাদার তেরেছা।
তখন কোলকাতায় একটা রেওয়াজ ছিল যে, ভারতে কোন গন্যমান্য অতিথি আসলে অনেকেই মাদার তেরেছার আশ্রমে আসতেন।
নেপালের রানী ঐশ্ব্যারীয়া রাজলক্ষী দেবী শাহ মাদার তেরেছার আশ্রমে আসলেন। মাদার তেরেছার সাথে কথোপোকথন হচ্ছে রানী ঐশ্ব্যারীয়ার মুখমন্ডল অভ্যাস বশতই হাস্যোজ্জ্বল।
মাদার তেরেছা তাঁর আশ্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে একবার তিনি বললেন ” গত কাল একজন ভিক্ষুক, তার ভিক্ষার অর্জন থেকে একটি টাকা আমার আশ্রমের অনাথ শিশুদের জন্য দান করেছেন। ”
কথাটি শুনার পর রানী ঐশ্ব্যারীয়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখমন্ডলে একটা কালো ছায়ার আবরণ চলে আসে। রানীর ভিতরের মন ধাক্কা দিল যে, অনাথদের জন্য ভিক্ষুকের যে সামর্থ্য সে তুলনায় রানীর সামর্থ খুবই নগন্য। ক্ষুদ্র। রানী ক্ষুদ্র হতে থাকলেন নিজের কাছে। অনুভব করতে পারলেন এ বিশ্ব কত বড় ! একজন ভিক্ষুক কত বৃহৎ এবং মহান হতে পারে !
কিন্তু নেপালের সেদিনের রানী ঐশ্ব্যারীয়া রাজলক্ষী দেবী শাহ কটাক্ষ করে বলতে পারলে না যে, ভিখারীর চেয়ে পাঁচ গুন বেশি পাঁচ টাকা আমি অনাথ আশ্রমে দান করে দিলাম।
রানী ঐশ্ব্যারীয়া রাজলক্ষী দেবী শাহ নিজের কাছে ক্ষদ্র হলেন বটে, কিন্তু তিনি তাঁর মনকে, অর্জিত জ্ঞানকে দরিদ্র করলেন না। বরং একজন রানীর মতই নিজেকে বৃহৎ এ মহানদের কাতারে নাম লিখালেন্
আমরা কি অনেকেই পেরেছি যে একজন বৃদ্ধার জীর্ণ ঘরটি নিজেরা কিছুটা ক্ষদ্র হয়ে বৃদ্ধার ঘরটি মেরামত করে দিতে !! বাসযোগ্য করে দিতে !!
বহু পুরাতন আমলের মসজিদ ঘরটি নামাজ আদায়ে প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা কি অনেকেই পেরেছি যে নিজেরা কিছুটা ক্ষুদ্র হয়ে আমাদের ধন ভান্ডার কিছুটা ক্ষুদ্র করে পুরাতন আমলের মসজিদ ঘরটিকে আরো আলোকিত করতে !!
আমাদের দেশে কি সেই কোন ভিখারি আছেন যিনি কোন অনাথদের আশ্রমের জন্য পাঁচটি টাকা দান করতে চান !!
একজন ভিক্ষুক তাঁর ভিক্ষা করা অর্জিত অর্থ থেকে পাঁটি টাকা দান টাকা দান করতে চাইলেন, আমাদের দেশে কি এমন কোন সামর্থবান মানব আছেন যিনি তা সাদরে গ্রহন করবেন!!
আমরা অনেকেই নিজ নিজ স্থানে অনেক বড় হতে পেরেছি, কিন্তু প্রকৃত অর্থে ক্ষদ্র হতে পারি নি।
রেটিং করুনঃ ,