তামজিদ হোসেন (২৭) নামের এক তরুণকে আটক করেছিলেন র্যাবের সদস্যরা। এরপর মুঠোফোনে তাঁর বোনকে বলেছিলেন তামজিদকে ‘ক্রসফায়ারেও দেওয়া হতে পারে।’ ‘ভাইকে বাঁচাতে হলে দুই কোটি টাকা রেডি’ করতে বলা হয়। কোনো টাকা নেই জানালে ‘১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে’ যেতে বলা হয় বোনকে।
অপহরণ করে টাকা আদায়ের অভিযোগে এক নারী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) চার সদস্যকে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানা–পুলিশ। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর তিনজন ও বিমানবাহিনীর একজন সদস্য রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য পলাতক রয়েছেন। অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ল্যান্স করপোরাল দুলাল মৃধা, সৈনিক রোকন মিয়া, ল্যান্স করপোরাল মো. রনি ও সৈনিক সাগরকে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ। আর রানু বেগম নামের ওই নারীকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে তিনজন সেনাবাহিনী ও একজন বিমানবাহিনীর সদস্য হওয়ায় তাঁদের নিজ নিজ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিচার নিজ নিজ বাহিনীর আইন–কানুন অনুযায়ী হবে।
র্যাব সদস্যদের হাতে অপহরণের শিকার তামজিদ হোসেনের বোন রাইয়ানা হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে হাতিরঝিল থানায় ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিদের কারও নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে থানা–পুলিশও কোনো তথ্য দেয়নি।
মামলার এজাহারে রাইয়ানা হোসেন বলেছেন, ‘আমার বড় ভাই তামজিদ হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আমাদের বর্তমান বাসা থেকে উত্তরা যাওয়ার কথা বলে বের হয়। বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দেয়। নিজেকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানায়, আমার বড় ভাই র্যাব হেফাজতে আছে। আপনি থানা–পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানাবেন না। যদি থানা–পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানান, তাহলে আপনার বড় ভাইকে মেরে ফেলা হবে। এই কথা বলে ফোনের লাইন কেটে দেওয়া হয়।’
এজাহারে রাইয়ানা আরও লিখেছেন, ‘পরে অনেকবার তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি বারবার আমার ফোন কেটে দেন। দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে ওই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমাকে জানান, আমার বড় ভাইকে র্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁর নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।’
বড় ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, জানতে চান রাইয়ানা। জবাবে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনার ভাই র্যাবের কোন অফিসে আছে বলা যাবে না। তাঁকে ক্রসফায়ারেও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘এর কিছুক্ষণ পর র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি মোবাইলে ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাঁকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই বাঁচার আকুতি জানান। পরে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত দুই–তিনজন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না আমার কাছে জানতে চান। আমি তাঁদের বলি আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? একপর্যায়ে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলেন। থানা–পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দেন।’
এজাহারে রাইয়ানা বলেছেন, ‘বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে আমার নম্বরে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত নম্বর থেকে কল করে আমার সঙ্গে ভাইকে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাই তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তাঁকে খুব মারধর করা হচ্ছে। এ সময় তাঁদের দাবি করা টাকা দিয়ে দিতে বলেন। আমরা তখন তাঁর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, হাত–পা–চোখ বাঁধা থাকায়, তিনি কোথায় আছেন বলতে পারবেন না।’
মামলায় উল্লেখ করা রাইয়ানার মুঠোফোন নম্বর ধরে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে। এই চারজনকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাটি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে তিনি থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ০৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,