সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অযথা রাস্তায় ভিড় না করতে অনুরোধ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অনেকে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীরা ভুলপথে যাবেন না বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস (সীমা অতিক্রম) করে যাচ্ছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ কথা বলেন।
কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা। তখন তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটাব্যবস্থা বাতিল করেন। বিচার বিভাগ থেকে সম্প্রতি কোটাব্যবস্থা নিয়ে একটি নির্দেশনা এসেছে। ছাত্ররা মনে করেছেন এটি ঠিক হয়নি, তাই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন।
আসাদুজ্জমান খান বলেন, পুলিশকে বলা হয়েছে, তাঁরা মেধাবী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। শিক্ষাথীদের সঙ্গে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে তাঁরা কষ্ট পান।
আসাদুজ্জমান খান বলেন, সরকার তাঁদের (আন্দোলনকারীদের) কথা শুনবে। কিন্তু শোনার একটা সীমা থাকে। তাঁরা সেই সীমা পার করে ফেলেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা কয়েক দিন ধরে একই কাজ করছেন। অথচ প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত। মামলার পরবর্তী রায় না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত থাকবে। মানে হাইকোর্টের নির্দেশনা এখন অচল।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, রায় যেখানে নেই, আন্দোলন কেন? শিক্ষার্থীদের বোঝা উচিত, জানা উচিত, তাঁদের মা–বাবাও রাস্তায় বের হন, কেউ হাসপাতালে যান। কেউ চাকরির জন্য বের হন। মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই অনগ্রসর মানুষের জন্য কোটাব্যবস্থা রয়েছে। তবু উচ্চ আদালত জানিয়েছেন, কোটাব্যবস্থা স্থগিত।
আসাদুজ্জমান খান বলেন, এরপর আর রাস্তায় থাকার প্রয়োজন নেই। তাঁরা আদালতে এসে কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন। এখন আর তাঁদের রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে না সরলে পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি তিনি। তবে বলেছেন, তাঁরা কী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবেন? পুলিশ কখন অ্যাকশনে যায়, যখন দেখে অগ্নিসংযোগ হচ্ছে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, অনৈতিকভাবে কেউ পরিস্থিতি তৈরি করছে। তখন পুলিশ অ্যাকশনে যাবে বলে জানান মন্ত্রী।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আসাদুজ্জমান খান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিবছর ২৬ জুন এ দিবস পালন করা হয়, তবে বাস্তবতার কারণে এবার তা ১১ জুলাই করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মশিউর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন: ওবায়দুল কাদের।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা জনজীবনকে জিম্মি করে আইনি পন্থায় না গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি।
আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা গতকাল (বুধবার) শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরে সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান রাখার আহ্বান জানিয়েছিলাম। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে, তা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, বিষয়টি নিয়ে যখন বিজ্ঞ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, তার প্রতি কোনো রকম সম্মান প্রদর্শন না করে তথাকথিত বাংলা ব্লকেডের কর্মসূচি দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।’
সুপ্রিমকোর্টকে পবিত্র সংবিধানের অভিভাবক বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই বিষয়ে তিনি বলেন, এই সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন। সর্বোচ্চ আদালত যখন সরকার পক্ষ, আন্দোলনকারী ও মামলাকারী সবার বক্তব্য শুনে এই বিষয়ের চূড়ান্ত বিচারিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আন্দোলনের নামে জনগণের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি বেআইনি।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১১, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,