দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। চলমান কারফিউ আরও শিথিল করেছে সরকার। মহাসড়কগুলোয় যান চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আজ বুধবার থেকে চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও আজ থেকে খুলবে। পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৯৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়। একপর্যায়ে সরকার গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন তিন ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। গতকাল ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে চার ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। যদিও সারা দেশে জেলাভেদে এই বিরতি কমবেশি আছে।
■ আজ ও আগামীকাল সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
■ ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল।
গতকাল দেশের কোথাও সংঘাত, সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ আরও শিথিল করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ প্রথম আলোকে জানান, এই এলাকাগুলোয় কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে আজ বুধবার ও আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অর্থাৎ দিনের বেলায় সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ (জেলা প্রশাসক) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
অফিস চলবে ৪ ঘণ্টা
কারফিউ জারি হওয়ায় গত রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি দিয়েছিল সরকার; কিন্তু কারফিউ শিথিল হওয়ার পর আজ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো অফিস চলবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, আজ ও আগামীকাল সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসের জন্য বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এই সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন।
জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে, যা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। এর মানে হলো জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস ও কর্মীরা তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী চলবেন।
ব্যাংক চলবে সীমিত পরিসরে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা নির্দেশনা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালই ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলেছে, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব ব্যাংকের কিছু শাখা বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ও সীমিত আকারে সেবা প্রদান করবে। এ সিদ্ধান্ত কেবল আজ ও আগামীকালের জন্য। ব্যাংকগুলো নিজেরা নির্ধারণ করবে কোন কোন শাখা খোলা রাখবে।
সড়ক ও রেলপথ পরিস্থিতি
দেশের মহাসড়কগুলোয় গতকাল থেকে আবারও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দু-একটি মহাসড়কে গতকাল ব্যক্তিগত গাড়ি, কাভার্ড ভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার কিছু গাড়ি চলতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ও দূরপাল্লার বাস চলেছে। পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়েতেও পণ্যবাহী যান চলাচলের খবর পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল পর্যন্ত যান চলাচল শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, কারফিউ শিথিল থাকার সময়ে শহরে ও দূরপাল্লায় বাস চলাচল করবে।
টানা প্রায় পাঁচ দিন রেল চলাচল বন্ধ থাকার পর তেলবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী পাঁচটি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আজ বুধবার অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কবে
কোটার সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় মন্ত্রণালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মোট চার দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। পরদিন ১৭ জুলাই সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যত তাড়াতাড়ি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট। আশা করতে পারেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে।
একই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলে দেওয়া যাবে না।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৩,২০২৪
রেটিং করুনঃ ,