কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকার ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলেন, নির্বিচার গুলি করে মানুষ হত্যার দায় সরকার এড়াতে পারে না। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে ও গণমাধ্যমকে সংবাদ প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান তাঁরা।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এ কথা বলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বললেন, কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। কারফিউ দিয়ে বললেন, দেখামাত্র গুলি। পাকিস্তান আমলেও এমন কথা শুনিনি। এই সরকার গুলি ছাড়া কিছু বুঝে না। আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের সংবাদ, ছবি প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা ব্যক্তিদের ছবি সব গণমাধ্যমে এলেও কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ও বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, নির্বিচার গুলি করে নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশকে গাজা উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। গণহত্যা বন্ধ করুন, না হলে বাংলাদেশের মানুষ গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে। শ্রীলঙ্কার চেয়েও করুণ পরিণতি হবে।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৪ তারিখ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিলেন, আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে ছাত্রলীগ যথেষ্ট। এরপরই হেলমেট পরে রিভলবার হাতে গুলি চলল। আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পরল। তরুণসমাজ ও জনগণ এই সরকারের পাশে নেই, এটা প্রমাণিত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চার সংবাদকর্মী নিহত ও দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হয়েছে বলে সমাবেশে জানান ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা টাইমসের নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদির দুটি অবুঝ সন্তান রয়েছে। নয়া দিগন্তের নিহত তোরাবের নববিবাহিত স্ত্রীর হাতের মেহেদি শুকায়নি। রাষ্ট্র এই পরিবারগুলোকে কী জবাব দেবে?
বিএফইউজে ও ডিইউজের পক্ষ থেকে ১৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন কাদের গনি চৌধুরী। সেগুলোর মধ্যে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, গণমাধ্যমের ওপর থেকে সব ধরনের চাপ তুলে নিতে হবে, অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম।
বিএফইউজে-ডিইউজের নেতারা অভিযোগ করেন, তাঁরা মাইক লাগিয়ে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা কারফিউর কথা বলে মাইক ব্যবহারে বাধা দেন। পরে মাইক ছাড়াই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলেন, সাংবাদিকেরা আন্দোলন করতে যাননি, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকদের মাইক বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না।
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৪,২০২৪
রেটিং করুনঃ ,