Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কেমন গণতন্ত্র চাই এখন (২০২১)

Share on Facebook

পৃথিবীর দেশে দেশে নানা মাত্রার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক দেশে শাসকেরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিসর্জন দিচ্ছে। এমন বিভ্রান্তি ছড়ানোরও চেষ্টা চলছে যে গণতন্ত্রের কোনো সংজ্ঞা বা মূলনীতি নেই। কিন্তু আসলেই কি তাই? প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের যুগ থেকে শুরু করে মানবজাতি সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ও সর্বাধিক ন্যায়সম্মত শাসনব্যবস্থার অন্বেষণে যে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, সেখানে গণতন্ত্রের স্থান ও গুরুত্ব কোথায় !

বাংলাদেশে বিরাজমান শাসনে গণতন্ত্রের মোড়ক থাকলেও মর্মবস্তুর দিক থেকে তা কতটা গণতান্ত্রিক, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থকেরা একেই বাংলাদেশের নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বলে দাবি করেন। কিন্তু আসলে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝেন, তাঁরা কী চান? আমাদের স্মরণ করতে হবে যে গণতন্ত্রের চারটি মূলনীতি হচ্ছে জনগণের সার্বভৌমত্ব, প্রতিনিধিত্ব, দায়বদ্ধতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা; আর গণতন্ত্রের তিনটি অনিবার্য উপাদান হচ্ছে সবার ভোটাধিকার; আইনসভা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদের জন্য নিয়মিত অবাধ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, বহুদলীয় নির্বাচন এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা। বাংলাদেশের নাগরিকেরা কি এর চেয়ে ভিন্ন কিছু আশা করেন?

বাংলাদেশের নাগরিকেরা গণতান্ত্রিক শাসনের কী রূপ চান, তা বোঝার উপায় হচ্ছে ইতিপূর্বে সম্পাদিত জনমত জরিপের সাহায্য নেওয়া। ২০১৭ সালে রিজলভ-এর একটি প্রকল্পের অধীনে (প্রধান গবেষক—আলী রীয়াজ ও ক্রিস্টিন সি ফেয়ার) এপ্রিল মাসের ১২ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৭টি পরিবারের মধ্যে আমরা একটি জরিপ চালিয়েছিলাম, যেখানে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গণতন্ত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল এই মুখোমুখি জরিপে আমরা দেখতে পাই যে বাংলাদেশিদের মধ্যে গণতন্ত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। জরিপটিতে গণতন্ত্রের সূচক হিসেবে চারটি মূল বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ ছিল—সম্পত্তির অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধি, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা। উত্তরদাতারা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়েছেন, এর পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা। ৬৩ শতাংশ একে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ৩০ শতাংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন। এর প্রায় কাছাকাছি সমর্থন পাওয়া গেছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে; ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের একটি মূলনীতি; ৬১ শতাংশের বেশি এই লক্ষণকে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ৩১ শতাংশ একে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।

গণতন্ত্রের লক্ষণগুলোর মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা। উত্তরদাতারা নির্বাচিত নেতৃত্বের পক্ষে জোর সমর্থন দিয়েছেন। ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার নেতৃত্বের পক্ষে জোর সমর্থন জানিয়েছেন। যেখানে ৩৯ শতাংশ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ধর্মীয় নেতার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব তা সেক্যুলারই হোক বা ধার্মিক, খুব কমই এর পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছেন। এই ফল গণতন্ত্র বিষয়ে মানুষের ধারণা এবং গণতান্ত্রিক শাসনের লক্ষণকে চিহ্নিত করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে এই জরিপ চালানো হয়েছিল ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তিন বছরের বেশি সময় পরে। ২০১৪ সালের নির্বাচন অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক ছিল না, কিন্তু মানুষের কাছে এই উপাদানগুলোর গুরুত্ব অবসিত হয়নি। তাঁরা তখনো এসব বৈশিষ্ট্য দিয়েই গণতন্ত্রকে চিহ্নিত করেন।

আমাদের জরিপের এই ফল বিস্ময়কর ছিল না, বরং পূর্ববর্তী জরিপগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণই ছিল। ২০০৩ সালের শেষের দিকে ইউএসএআইডি কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ উত্তরদাতাই (৬২ শতাংশ) ‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত সরকার’কেই উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। অন্য বিকল্পগুলোর মধ্যে ‘সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, ইসলামিক আইন দ্বারা পরিচালিত সরকার’ ২১ শতাংশের সমর্থন পেয়েছিল। এরপরই আছে ‘করিতকর্মা সামরিক নেতা কর্তৃক পরিচালিত সরকার’, যা ১১ শতাংশের সমর্থন পায়। ৩ শতাংশের সমর্থন পায় ‘বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ এবং ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ দ্বারা পরিচালিত অনির্বাচিত সরকার, যারা জানে কোনো দেশের উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়’। এক দশক পরও এই মনোভাব প্রায় একই রকম ছিল। ২০১৩ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ বাংলাদেশিই গণতন্ত্রকে সমর্থন করছে, যেখানে ২৭ শতাংশ ‘কঠোর শাসক’কে অগ্রাধিকারে দিয়েছে।

ইউএসএআইডি পরিচালিত জরিপে উত্তরদাতারা গণতন্ত্রকে অধিক নম্বর দিয়েছেন, ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হিসেবে (৭৯ শতাংশ), সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য (৬৯ শতাংশ), শৃঙ্খলা ও সুরক্ষার জন্য (৬৯ শতাংশ), দেশকে একতাবদ্ধ রাখার জন্য (৬৮ শতাংশ) এবং সবাইকে নিজ নিজ উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাগুলো নিরসন করার জন্য (৫৯ শতাংশ)।

গভর্ন্যান্স ব্যারোমিটার সার্ভে বাংলাদেশ ২০১০ (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত)–এর জরিপে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ উত্তরদাতাই মনে করেন, গণতন্ত্রের তাৎপর্যপূর্ণ আদর্শই হচ্ছে নির্বাচন। এরপরই আছে অবাধ গণ-বিতর্ক (৭১ শতাংশ), সম্মতির দ্বারা শাসন (৬০ শতাংশ), সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের ক্ষমতা (৫০ শতাংশ) এবং সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষমতা (৪০ শতাংশ)।

তারও ১০ বছর আগে ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকশন সিস্টেম (আইএফইএস) পরিচালিত একটি জরিপে উত্তরদাতাদের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি তালিকা প্রদান করে প্রশ্ন করা হয়, ‘বাংলাদেশে নিম্নোল্লিখিত অধিকারসমূহ সংরক্ষণকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?’ গ্রামীণ অঞ্চলের উত্তরদাতারা ব্যাপকভাবে বেছে নেন ‘যে কেউই ভোটদানের জন্য একাধিক দল ও প্রার্থীদের থেকে কাউকে বেছে নিতে পারবে’ এই উত্তরটিকে। অন্যদিকে শহুরে অঞ্চলের উত্তরদাতারা ‘নিয়মিত নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া’কেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হিসেবে নির্বাচন করেন।

গণতন্ত্রের লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে ২০০২ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত বৈশ্বিক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা গণতন্ত্রের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেছেন: জনগণ প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করতে পারবে (৮১ শতাংশ) ; নিরপেক্ষ দ্বিদলীয় নির্বাচন (৭১ শতাংশ) এবং কোনো রকম সেন্সরশিপ ছাড়াই সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে (৬৪ শতাংশ)।

গণতন্ত্র বিষয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা, যা প্রায় দুই দশক ধরে অপরিবর্তিতই থেকেছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান শাসনব্যবস্থার পার্থক্য কোথায়, তা বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই। যেকোনো নাগরিকই তা বুঝতে পারেন। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই যে সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরনের নেতাদের হাতেই এ দেশের গণতন্ত্র গুরুতর সংকটে পতিত হয়েছে। গণতন্ত্র এখানে ধারাবাহিক অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে বিগত তিন দশকে এবং বর্তমানে তা পশ্চাদ্‌যাত্রায় শামিল হয়েছে। সেই পথ থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলোর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক শাসনের লক্ষণ কী, তা বোঝা দরকার এবং তার ভিত্তিতেই গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর তাদের করণীয় নির্ধারণ করা উচিত।

লেখক: আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর; সম্প্রতি প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গ্রন্থ নিখোঁজ গণতন্ত্র: কর্তৃত্ববাদের পথরেখা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ০৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ