৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্য বার্ষিকী, দেশের জাতীয় পত্রিকা সহ টিভি চ্যানেলগুলি তাঁর মৃত্য বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানান অনুষ্ঠান ও আলোচনার খবরাদী পরিবেশন করেছেন তবে অনেক কথা না বলে, অনেক আলোচনা না করে, এটিকে আমরা বলি ক্ষমতার পালা বদল।
জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দর্শণে কী ধরণের মানুষ ছিলেন তা প্রত্যক্ষ্য ভাবে আমার পক্ষ্যে জানা সম্ভব হয় নি বা হওয়ার কথাও ছিল না, আর তিনি কেমন ছিলেন সে বিষয়েও আমার কিছু বলার নেই বিশেষ করে দেশের জনগন এখন দুই মেরুর রাজনৈতিক দর্শণে বিভক্ত।
শিশু বেলার একটি দিনের কথা মনে পড়ে গেল, তখন বেশ শিশু সবে প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলে, আমাদের স্কুলটি ছিল সৈয়দপুর সেনানীবাসের পাশে, আর সেনানীবাসের পাশেই সৈয়দপুর বিমান বন্দর, দেশে তখন সামরিক শাসন।
সৈয়দপুর বিমান বন্দর অবতরণের পরে জিয়াউর রহমানে হয় তো নীলফামারীর কোন প্রতন্ত্য গ্রামে ছুটে যাওয়ার আগে কোন পূর্ব সূচি ছাড়া, কোন স্তরের নিরাপত্তা বলয় ছাড়াই তিনি আমাদের স্কুলের দ্বিতলার শেষ করিডোরে এসে থামলেন, আমি নিজে তখন শ্রেণী কক্ষে জানালার পাশে, অনেকটাই জিয়াউর রহমানের মুখোমুখি, সাথে আমাদের প্রধান শিক্ষক, আরও সামরিক কর্মকর্তাগন।
আমি বেশ সুক্ষ্য দৃষ্টি দিয়ে তাঁর দিকে তাকালাম, জিয়াউর রহমানের পরনে সামরিক পোষাক, হাতে একটি বেতের ছড়ি আঁকা বাঁকা গাঢ় খয়ারী কালো রঙের, শ্রেনী কক্ষের দিকে তাকিয়েই আমাকে জীজ্ঞাসা করলেন কেমন আছো তুমি ! কি নাম তোমার !
জিয়াউর রহমান কেমন মানুষ ছিলেন সেটি আমার ভালো জানা না থাকলেও তখন থেকে বুঝেছিলাম শিশুদের প্রতি ছিল তাঁর একটি অন্য ভালোবাসা, স্নেহ বোধ ! নানান ব্যস্ততায় থেকে আমি কেমন আছি প্রশ্নটি নাও করতে পারতেন !
তিনি ছুটে বেড়াতেন গ্রামের পরে গ্রাম, মাঠের পরে মাঠ, জেলা প্রশাসক তৎকালিন মহকুমা প্রশাসক গন তাঁর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারতেন না, এমন কি অনেক সেনা অফিরারও রোদে বৃষ্টিতে তাল মিলিয়ে চলতে পারতেন না।
কুঁড়ে ঘরে প্রবেশ করে তিনি অনেকের সাথে মাটির থালায় পানি ভাতও খেয়েছেন, তাঁদের দূর্দশার কথা শুনেছেন, চেষ্টা করেছেন গ্রামকে বাঁচাতে, সমৃদ্ধ শালী করতে, গ্রামের মানুষকে শান্তীতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানের পক্ষ্য নেওয়া চীনের যে মরণ অস্ত্র ব্যাবহৃিত হয়েছিল সাধারণ জনগনের উপর কিম্বা হত্যাযজ্ঞ, যে চীন বাংলাদশের জাতিসঙ্গের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দিয়েছিল, যে চীনের সাথে তখন কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না, সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল জিয়াউর রহমানের দূরদর্শিতায়, তেমনি ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সাথেও প্রচ্ছদ ছবিটি সে কথা বলে।
এখন দেশ পরিচালানায় শুরু হয়েছে ভিন্ন কৌশল, প্রতন্ত্য গ্রামে ছুটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না আর, এক সাথে পনেরো – বিশটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর একটি স্থানে স্থাপন করে এক সাথে প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্ববোধন করা যায় ! প্রতন্ত্য গ্রামে, বা ছোট শহরে না গিয়েও ভিডিও আলোচনার মাধ্যমে গন সংযোগ চালানোরও ব্যবস্থা হয়েছে আজকাল !
তবে যতদিন এদেশের মানুষ মাটির থালায় অপুষ্টিকর খাবার খাবে, মাটির ঘরে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুমাবে ততদিন সরকার প্রধানদের ছুটে যেতে হবে প্রতন্ত্য গ্রামে, প্রতন্ত্য অঞ্চলের মানুষদের পাশে।
জিয়াউর রহমান অনেকটাই মুছে গেছেন সময়ের গতিতে আবারও শংকা জাগে যদি কখনও জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল যদি ক্ষমতায় বসে তবে কি সময়ের গতিতে আবারও মুছে যাবে শেখ মুজিবরের নাম !
নোটঃ ছবি দুইটি নিজ ক্যমেরায় ধারণ কৃত, যা রক্ষিত আছে দিল্লীতে ইন্দিরা গান্ধী ম্যামোরিয়ালে।
লেখার তারিখ : মে ৩১, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,