কাশ্মীরি হিন্দুদের দুর্দশার ওপরে তৈরি হিন্দি সিনেমা দ্য কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারি বাসভবনে চড়াও হয়েছে বিজেপি। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বেলা একটা নাগাদ বিজেপির যুব সংগঠন ভারতীয় যুব মোর্চার প্রায় ২০০ কর্মী–সমর্থক পুলিশের বাধা এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে চড়াও হন। তাঁরা সরকারি বাসভবনের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। সদরে রং লেপে দেন। ব্যারিকেড ভেঙে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য।
ঘটনার পরপরই আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা ও উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আপকে ভোটে হারাতে না পেরে বিজেপি এখন কেজরিওয়ালকে খুন করতে চাইছে।
আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের গোড়ায় উত্তপ্ত কাশ্মীর উপত্যকা থেকে পণ্ডিতদের (হিন্দু) হত্যা ও বিতাড়নের ওপর তৈরি হয়েছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমা। অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, পল্লবী যোশি অভিনীত এই সিনেমার পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সিনেমার ভূয়সী প্রশংসাই শুধু করেননি, নির্মাতাদের ডেকে তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এই সিনেমা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর নির্যাতনের এক ‘সত্য’ দলিল। সিনেমায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা হয়েছে মুসলমানদের, বহু সমালোচক যা ‘একপেশে’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছেন। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে এই সিনেমা ‘বিনোদন করমুক্ত’ করা হয়েছে। কোনো কোনো রাজ্যে সরকারি কর্মীদের এই সিনেমা দেখার জন্য বিশেষ ছুটির সুযোগও দেওয়া হয়েছে। বিজেপির সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় সিনেমাটি ইতিমধ্যেই ২০০ কোটির বেশি ব্যবসা করেছে।
কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিজেপির বিরোধ করমুক্ত করা নিয়ে। দাবিটি মুখ্যমন্ত্রী মানেননি। বিধানসভায় এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা বেচে কেউ কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, আর বিজেপি সেই সিনেমার পোস্টার সাঁটছে।’ তিনি বলেন, সবাইকে সিনেমাটি দেখাতে হলে পরিচালক তা ইউটিউবে আপলোড করে দিন। কিংবা দূরদর্শনে দেখানো হোক। সবাই নিখরচায় দেখতে পাবে। কেজরিওয়াল এ কথাও বলেন, বিজেপির সাহায্যে পরিচালক এক ‘উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যে ছবি’ তৈরি করেছেন।
পণ্ডিতদের পুনর্বাসনে বিজেপি কিছুই করেনি। বরং তাঁর সরকার ২৩৩ জন অস্থায়ী কাশ্মীরি পণ্ডিত শিক্ষকের চাকরি পাকা করেছে। ১৯৯০ সালে উপত্যকায় পণ্ডিতদের হত্যাকে ‘গণহত্যা’ বলা যায় কি না, সেই প্রশ্নও কেজরিওয়াল তুলেছিলেন। সরকারি হিসাবে গত তিন দশকে ৮৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত উপত্যকায় খুন হয়েছেন। কাশ্মীরি মুসলমান খুন হয়েছেন ১১ হাজার ৬৩৫ জন।
কেজরিওয়ালের এসব মন্তব্য কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ‘অবমাননা’ বলে বিজেপির অভিযোগ। বিক্ষোভের হেতুও ছিল তা। দিল্লি পুলিশ জানায়, বিজেপির প্রায় ২০০ কর্মী–সমর্থক কেজরিওয়ালের বাসভবনে চড়াও হন। ঘটনাস্থল থেকে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ৩১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,