Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আমাদের উন্নত বিশ্বে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে দেবে (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।

এমন প্রশ্ন উদয় হওয়ার কারণ হচ্ছে ইউভাল নোয়া হারারির একটা হাইপোথিসিস। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী এখন যেভাবে সব চলছে, সেভাবে চললে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম বিশ্বের সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের ফারাকটা আকাশ-পাতাল হয়ে যাবে। এই দুই বিশ্বের মাঝখানে যে গহ্বরটা আছে, সেটা এখনো অদক্ষ সস্তা শ্রমের একটা নড়বড়ে সেতু দিয়ে পেরোনো যায়, কিন্তু কিছুদিন পর সেটা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। কাকতালীয়ভাবে এই কল্পিত সেতু ভাঙার সময়, আর ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশে পা ফেলার সময়টা কাছাকাছি। অর্থাৎ একটু এদিক-ওদিক হলেই আমরা আর সেতুটা পাব না। সে ক্ষেত্রে ওপারে গিয়ে আমাদের উন্নত দেশে প্রবেশ করার স্বপ্নটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

হারারি যে আমাদের এত কম সময় দিচ্ছেন, তার কারণ অসীম সম্ভাবনাময়, অমিত শক্তিমান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উল্কাসম উত্থান। হারারির আশঙ্কা, স্বল্প দক্ষ মানুষেরা এখন যেসব কাজ করে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনেক কম খরচে, অনেক কম সময়ে এবং অনেক ভালোভাবে করতে পারবে। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে হাজির হবে, যাঁদের শ্রম-ঘামে আমাদের অর্থনীতির চাকা ঘোরে, স্বল্প দক্ষ সেই পোশাকশ্রমিক বা রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা তখন বেকার হয়ে যাবেন। আমরা যেহেতু তাঁদের জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা করতে পারিনি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেসব কাজ করতে পারে না, সে রকম কাজ করার জন্য তাঁদের তৈরি করতে পারিনি, তাই হারারির এত ভয়।

হারারি স্বীকার করছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে তার ভিত্তি মূলত স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের সস্তা শ্রম। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলে এলে এই সস্তা শ্রমের আর কোনো প্রয়োজন হবে না। যেমন এখন এই সস্তা শ্রমের শার্ট বিক্রি করে যে উপার্জন হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট এবং থ্রি–ডি প্রিন্টারের বিকাশ ঘটলে সেটা আর হবে না। আমেরিকানরা তখন আমাজন থেকে শার্টের কোড কিনে নিউইয়র্কের কোনো থ্রি–ডি প্রিন্টারে তা প্রিন্ট করে ফেলবে। ‘জারা’ বা ‘প্রাডা’র গুদামঘরগুলোতে তখন থ্রি–ডি প্রিন্টার বসে যাবে। কেউ চাইলে নিজের ঘরেও সেই প্রিন্টার বসিয়ে নিজের শার্ট নিজে বানিয়ে নিতে পারবে।

তখন বাংলাদেশের চাকরি হারানো মানুষগুলোর কী হবে? হারারি বলছেন, তাঁদের যদি উঁচু মানের দক্ষতা থাকত, যেমন তাঁরা যদি ফ্যাশনেবল শার্ট ডিজাইন করতে পারতেন বা কম্পিউটার কোড লিখতে পারতেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁরা নতুন চাকরি পেয়ে যেতেন। কিন্তু সে রকম দক্ষতা অর্জনের তো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি যে শিক্ষার্থীরা এখন লেখাপড়া করছেন, তাঁরাও যে বিশেষ কোনো দক্ষতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরোচ্ছেন, তা–ও তো নয়। তাহলে দুলতে থাকা নড়বড়ে সেতুটি ভেঙে পড়ার আগে বাংলাদেশ কীভাবে সেই গহ্বর অতিক্রম করবে?

হারারি যেটার ওপর জোর দিচ্ছেন, সেটা হচ্ছে সময়। চীন বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশও তো একসময় সস্তা শ্রমের সেতু দিয়ে এ গহ্বর পার হয়ে গেছে। সেই সময় অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে নেওয়া হচ্ছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সময়ের এত তাড়া ছিল না। তখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এভাবে ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলেনি।

তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটরা এভাবে স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের কাজ কেড়ে নিতে উদ্যত হয়নি। সস্তা শ্রম বেচে আমরা এখন যা পাই, তার প্রায় সবই কিছুদিনের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উন্নত দেশের প্রযুক্তি-দৈত্যদের কাছে চলে যাবে। আমাদের মতো গরিব দেশ হবে আরও গরিব, ধনীরা আরও ধনী। হারারির মতে, তখন গরিব–ধনীর ফারাকটা এত বেশি হবে যে আর কোনো গরিব দেশের পক্ষে ধনী দেশের কাতারে যাওয়া সম্ভব হবে না। কোনো দেশ যদি ধনী হতে চায়, তাহলে তাকে এখনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সামাল দিতে পারে এমন মানবসম্পদ তৈরি করে ওই নড়বড়ে সেতুটা পার হয়ে যেতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধাক্কায় একবার যদি ওই সেতু ভেঙে পড়ে, তাহলে আর কারও কিছু করার থাকবে না।

হারারি অবশ্য এটাও বলেন, খাদের এ পাড়ে রয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য অনিবার্য নয়। কঠোর পরিশ্রম করে সঠিক পথে এগোলে আমরা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটা পার হতে পারি এবং পার হওয়াটা জরুরি। পার হতে না পারা মানে কিন্তু আগের জায়গায় থাকা নয়, বরং বহু দূর পিছিয়ে যাওয়া।

এখন শোষণ করার জন্য হলেও তো আমাদের প্রয়োজন হয়, কিছুটা হলেও মর্যাদা পাই। কিন্তু ওই সেতু ভাঙার পর কারও আর আমাদের শোষণ করারও প্রয়োজন পড়বে না, আমরা হয়ে পড়ব অপ্রাসঙ্গিক। হারারি বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন ব্যবস্থা করবে যে তখন শোষণ করার জন্য তো নয়ই, এমনকি পণ্য বিক্রির জন্যও আর গরিব দেশগুলোর প্রয়োজন হবে না। ফলে আমাদের বাঁচা-মরা বা ভালো-মন্দে ধনী দেশগুলোর কিছুই যাবে–আসবে না।

আমরা যদি সত্যিই ওই গহ্বর পার হতে চাই, তাহলে এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সামাল দেওয়া। তাকে তো আর আটকানো যাবে না, কিন্তু সে যেসব কাজ করতে পারবে না, সেসব শিখে নিতে পারলে তাকে বশে আনাটা সহজ হবে। তার জন্য চাই দ্রুততম সময়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ জন্যই এখন অন্য যেকোনো মেগা প্রজেক্টের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষার মেগা প্রজেক্ট। দ্রুততম সময়ে এ রকম একটা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে তা সফলভাবে শেষ করতে পারলে ভেঙে পড়ার আগে নিশ্চয়ই আমরা ওই সেতু পার হয়ে যেতে পারব।

ছোটবেলায় গল্প শুনেছিলাম: এক দৈত্যের প্রাণভোমরা ধরার জন্য কোনো এক রাজপুত্রকে না থেমে, পেছনে না ফিরে, খুব দ্রুত সরু একটা সাঁকো পার হয়ে যেতে হবে। থামলে, পেছন ফিরলে বা গতি কমালে সাঁকো ভেঙে তিনি পানিতে তলিয়ে যাবেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাণভ্রমর কবজায় আনতে হলে আমাদেরও এ ছাড়া গত্যন্তর নেই।

****সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৪, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ