কিয়েভে টেলিভিশন ভবনে রাশিয়ার হামলা
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির রাজধানী কিয়েভে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ভবনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এসব তথ্য জানায়।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্থন হেরাশচেঙ্কো বলেন, রাশিয়ার বাহিনী কিয়েভে একটি টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে। এতে ওই টিভির কার্যক্রম পরিচালনায় সামান্য ব্যাহত হয়েছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবার পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিয়েভে টেলিভিশন ভবনে রাশিয়ার হামলার ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় টিভি চ্যানেল ১+১ জানিয়েছে, ফের কার্যক্রম শুরুর জন্য কাজ করা হবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, হামলার পর ইউক্রেনের টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
এর আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে ওই শহরের বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছিল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকে দেশজুড়ে ভয়াবহ সংঘাত চলছে।
ষষ্ঠ দিনে গড়ানো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম পাঁচ দিনে ৫৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
কিয়েভে উৎকণ্ঠা আতঙ্ক, সুপারমার্কেটে পণ্য নেই
রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানীর দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এ নিয়ে রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দারা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। কি হতে যাচ্ছে তারা তা জানেন না। রোজকার জীবন যাপনে পণ্য সরবরাহ ঠিকঠাক থাকবে কিনা তা অনিশ্চিত।
এমন অবস্থায় মঙ্গলবার কিয়েভে সুপারমার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হামলে পড়ে সেখানকার বাসিন্দারা। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার হিড়িকে কয়েকটি সুপারমার্কেটের তাকগুলো খালি হয়ে গেছে।
এমন একটি সুপারমার্কেট হলো কিয়েভের পেচেরস্কি জেলার সিলপো, যেখানে দেখা যায় থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা শূকরের মাংস, ফ্রেঞ্চ চিজ, সুইস চকলেট ও আম ছাড়া সব পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে। মার্কেটের তাকগুলো খালি পড়ে রয়েছে। কমমূল্যের কোনো খাদ্যপণ্য নাই সেগুলোতে। রুটি, শাকসবজি, তেল ফুরিয়ে গেছে।
ওই সুপার মার্কেটের কনস্টানটিন নামের ক্যাশিয়ার বলেন, আগামীকালও আমরা ডেলিভারির প্রত্যাশা করছি। কিন্তু কৌশলগতভাবে তা সহজ নয়। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে নয়, ফার্মেসির সামনেও দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বাসিন্দারা প্রেসক্রিপশন হাতে ধৈর্য্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এক দমকল কর্মী লিওনিড গঞ্চারেঙ্কো বলেন, একজন বের হচ্ছেন। অন্যজন ভেতরে যাচ্ছেন। তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক রোগী। খাদ্যপণ্য ও ফার্মেসিতে লোকজনের ভিড় থাকলেও কিয়েভের রাস্তাগুলো ফাঁকা।
মারিওপোল দখলে মরিয়া হয়ে রাশিয়া
হাজার হাজার রুশ সেনা ও রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিওপোল দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও তারা সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পেরেছেন বলে খবর মেলেনি।
কেন রাশিয়া ইউক্রেনের এ শহর দখলে মরিয়া তা উঠে এসেছে বিবিসির বিশ্লেষণে।
এ বন্দর নগরীতে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ সেনারা এখানে ভয়াবহ গোলা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে ওই শহর রয়েছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায়।
এদিকে দোনেৎস্কভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিস পুশিলিন বলেন, আমাদের যোদ্ধারা পুরো শহর ঘিরে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
মারিওপোলে সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো— এ শহর আজভ সাগরের এমন এক জায়গায় অবস্থিত যা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রাশিয়ান বাহিনী এবং পূর্ব ইউক্রেনে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনাদের বিভক্ত করে রেখেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে স্থলবাহিনীর মাধ্যমে ব্যাপক আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হামলার শুরুর পর থেকে। যদি মারিওপোল মস্কো দখল করতে পারে তবে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ায় থাকা তার সেনাদের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি করতে পারবে।
আরেকটি বিষয় হলো— মারিওপোল অন্যতম প্রধান বন্দরনগরী। স্বাভাবিক সময়ে, এখানকার জাহাজ বিশ্বজুড়ে শস্য রপ্তানি করে। এদিকে শহরের হাইওয়েতে জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বেশ কিছু রুশ ট্যাংক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলে যদি এ শহর দখল করা যায় তবে তা রাশিয়াকে বিশেষ সুবিধা দেবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকে দেশজুড়ে ভয়াবহ সংঘাত চলছে।
ষষ্ঠ দিনে গড়ানো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম পাঁচ দিনে ৫৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ মার্চ ০১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,
