লেখা:রয়টার্স মস্কো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কিয়েভকে বিধ্বংসী অস্ত্র সরবরাহ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, কিয়েভকে বিধ্বংসী অস্ত্র দিলে তা যদি রাশিয়ার জন্য হুমকি বলে মনে হয়, তবে বৈশ্বিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার না করার পক্ষে যুক্তি দেন।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ব্যাচেস্লাভ ভোলোদিন সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থন বিশ্বকে একটি ভয়ানক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ভোলোদিন বলেন, ওয়াশিংটন ও ন্যাটোর সরবরাহ করা অস্ত্র যদি তাদের দেওয়া হুমকি অনুযায়ী বেসামরিক শহরগুলোতে আঘাত হানতে এবং নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যবহার করা হয়, তবে আরও শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশ আগে স্থানীয় সংঘাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেনি, এমন যুক্তি এখানে অকার্যকর। কারণ, এসব দেশ আগে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েনি, যেখানে তাদের জনগণের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়েছিল।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার সেনাদের হামলার পাল্টা-জবাব দিতে কিয়েভকে কয়েক শ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। তবে জার্মানির পক্ষ থেকে তাদের লেপার্ড ট্যাংক কিয়েভকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সেনারা দেশটির এক-পঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। মস্কো বলেছে, এ অঞ্চল আর ফেরত দেবে না তারা। কিয়েভের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শান্তি আলোচনায় বসতে হলে ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্র মেদভেদেভের কণ্ঠেও ছিল ভোলোদিনের কথার সুর। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বাহিনীর পরাজয় হলে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থন নিয়ে আলোচনা করেন মেদভেদেভ। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিগুলো কখনো বড় যুদ্ধে হারে না। কারণ, এর ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করে। মেদভেদেভ ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ
গত শুক্রবার ইউক্রেন কন্টাক্ট গ্রুপের বৈঠকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ৫০টি দেশ একত্র হয় জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে। বৈঠকের আগে প্রত্যাশা ছিল, জার্মানি লেপার্ড ট্যাংক ইউক্রেনকে দিতে রাজি হবে, তবে তা হয়নি। লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে জার্মানিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বার্লিনে কয়েক শ মানুষ জার্মানিকে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে ফেডারেল চ্যান্সেলারি ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে দেশটির নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে কিয়েভে ট্যাংক পাঠানো নিয়ে এখনো নতুন চুক্তির আশা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার প্রায় ৫০টি দেশ ইউক্রেনকে কয়েক শ কোটি ডলার মূল্যের ভারী সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে আছে সাঁজোয়া যান ও যুদ্ধাস্ত্র। কিয়েভকে রাশিয়ার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতেই তা দেওয়া হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ট্যাংক সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে জার্মানি। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ‘আমরা এখনো বলতে পারি না কখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং সিদ্ধান্ত কী হবে। লেপার্ড ট্যাংকের কথা ওঠার পর এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক চায় ইউক্রেন। বেশ কয়েকটি মিত্রদেশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সুরে সুর মিলিয়ে বলেছে, জার্মানির ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের চেয়ে ক্ষমতায় অনেক বড় প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধে খুব দরকার।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইউক্রেন বলেছে, ‘বৈশ্বিক সিদ্ধান্তহীনতা’য় তাদের দেশের মানুষেরা মারা যাচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভের লড়াইয়ের ক্ষমতা জোরদার করতে ইউক্রেনকে লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহ করার সিদ্ধান্তে জার্মানি স্থগিত করায় ইউক্রেন এ কথা বলেছে। ইউক্রেনের কথা, এই সিদ্ধান্তহীনতায় তাদের দেশের বেশি লোক মারা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক গত শনিবার টুইট করেছেন, ‘আজকের সিদ্ধান্তহীনতা আমাদের আরও বেশি লোককে হত্যা করছে। যত দেরি হবে, তত বাড়বে ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু। দ্রুত চিন্তা করুন।’
রয়টার্স জানায়, নতুন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকতে কিয়েভকে বলা হয়েছে। এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে গোলাবর্ষণ বাড়িয়েছে। দেশটির দনবাসের শিল্প এলাকার বাইরে জাপোরিঝঝিয়া ও সুমি অঞ্চলে হামলা বাড়িয়েছেন রাশিয়ার সেনারা। মস্কোর দাবি, সাম্প্রতিক লড়াইয়ে তারা আরও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ২২, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,