আফগানিস্তানের গজনি শহর দখলে নিয়েছে তালেবান। এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১০টির রাজধানী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণে গেল। আজ বৃহস্পতিবার এক আফগান আইনপ্রণেতা ও তালেবানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনি শহর। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে শহরটির অবস্থান। কৌশলগত কারণে গজনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শহরটি কাবুল-কান্দাহার মহাসড়কসংলগ্ন অবস্থিত। কাবুলের সঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ এই সড়কপথ দিয়েই হয়ে থাকে।
গজনির প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান নাসির আহমেদ ফকিরি এএফপিকে বলেন, ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তার মধ্যে গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও কারাগার রয়েছে।’
নাসির জানান, গজনির বিভিন্ন অংশে এখনো আফগান সেনাদের সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে। তবে শহরের বেশির ভাগ এলাকাই তালেবানের দখলে চলে গেছে।
তালেবানও গজনি দখলের কথা নিশ্চিত করে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তালেবানের মুখপাত্র এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে গতকাল বুধবার জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমদজাইকে সরিয়ে আফগানিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল হায়বাতুল্লাহ আলিজাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গতকালই আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বাদাখসান প্রদেশের রাজধানী ফাইজাবাদের দখল নেয় তালেবান। গজনি ও ফাইজাবাদ ছাড়াও ফারাহ, পুল-ই-খুমরি, জারাঞ্জ, কুন্দুজ, তাকহার, সার-ই-পল, তালুকান ও সেবারঘান দখল করেছে তালেবান।
গজনি ও ফাইজাবাদের পতনের পর প্রচণ্ড চাপে রয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলের বড় শহর মাজার-ই-শরিফ। তালেবান যোদ্ধারা শহরটির কাছাকাছি চলে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গতকাল মাজার-ই-শরিফ সফর করেন। শহরটি রক্ষায় তিনি সেখানকার তালেবানবিরোধী যোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
দক্ষিণাঞ্চলের কান্দাহার শহরে তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। শহরে মুহুর্মুহু রকেট হামলা হচ্ছে। সেখানকার এক চিকিৎসক বলেন, লড়াইয়ে আফগান বাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হয়েছেন। একের পর এক তাঁদের লাশ আসছে। তালেবানের আহত যোদ্ধারাও চিকিৎসা চাইছেন। বুধবার তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কান্দাহারের কারাগার দখলে নিয়েছে। কারাগারটি থেকে শতাধিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
হেলমান্দেও উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। প্রদেশটির লস্করগাহ শহরের আঞ্চলিক পুলিশ সদর দপ্তর তালেবান দখলে নিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে তালেবান ৩০ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে বলে জানান তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ওই কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করছে। তালেবান দ্রুত বিভিন্ন এলাকা দখল করছে। এ প্রেক্ষাপটে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হতে কতটা সময় লাগতে পারে, তা মূল্যায়ন করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়নে কাবুল পতনের সম্ভাব্য যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, তা একদম চূড়ান্ত নয় বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী আরও প্রতিরোধ গড়ে তুলে চলমান যুদ্ধের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ১২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,