করোনা সংকট মোকাবিলা করে টিকে থাকাই এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে এসব দেশে বৈষম্য বাড়ছে। তাই তাদের শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে মানসম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালক (আফ্রিকা বিভাগ ও স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি) পল আকিউমি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি।
আগামী ৩ থেকে ৭ অক্টোবর পাঁচ দিনব্যাপী চতুর্বার্ষিক আঙ্কটাড মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হচ্ছে। এবারের সম্মেলন সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ও ক্যারিবীয় দেশ বার্বাডোজ থেকে ভার্চ্যুয়াল উপায়ে অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন উপলক্ষে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আঙ্কটাড।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আঙ্কটাডের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইসাবেল ডুরান্ট এবং পরিচালক (আফ্রিকা ও এলডিসি) পল আকিউমি।
করোনার কারণে সংকটে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আঙ্কটাড বাংলাদেশের জন্য কী করছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে ইসাবেল ডুরান্ট জানান, এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর সংস্থা কাজ করছে। রাজস্ব আদায়ে সফটওয়্যার তৈরি, বাণিজ্য সহজীকরণ ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের কোনো সংস্থা সরকার নয়। এসব সংস্থা শুধু সহায়তা করতে পারে। আমরা দৃশ্যমান নই, কিন্তু পেছনে থেকে কাজ করে থাকি।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য করোনার টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসাবেল ডুরান্ট বলেন, ‘আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কোনো নীতি পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা শুধু টিকার মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার পক্ষে কথা বলতে পারি। আমি মনে করি, এ নিয়ে ডব্লিউটিওতে আলোচনা হতে পারে। শুধু মেধাস্বত্বের অধিকার নিলেই হবে না, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের টিকা বানানোর সক্ষমতাও থাকতে হবে। কারণ, এর সঙ্গে বিনিয়োগ জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারি। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
ইসাবেল ডুরান্ট উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বৈষম্য কমাতে কিছু পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো হচ্ছে—জনমুখী সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল, নারীদের জীবনযাত্রায় বৈষম্য কমানো এবং অর্থনীতিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি। সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক দুই পর্যায়ের অর্থনীতিতেই বৈষম্য আছে বলে মনে করেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসাবেল ডুরান্ট বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে বৈষম্য কত কমাতে হবে, তা আঙ্কটাড ঠিক করতে পারে না। আঙ্কটাডের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকে।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হলে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে—সেই প্রসঙ্গে পল আকিউমি বলেন, এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশ বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। যেমন শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার ও ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা। এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশ কী ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে, আঙ্কটাড সেটি নিরূপণ করে দিতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আঙ্কটাড কাজ করছে। তাঁর মতে, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া একটি দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরিতেও মনোযোগ বাড়াতে হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,