করোনা মহামারিতে ভারতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম বছরেই ২৩ কোটি ভারতীয় দারিদ্র্যসীমার মধ্যে পড়ে গেছে। দৈনিক ৩৭৫ রুপির কম আয়ে যাঁদের জীবন ধারণ করতে হয় তাঁদের দরিদ্র হিসেবে ধরা হয়েছে।
তাঁদেরই একজন রশিদা জলিল। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ভয়ে আছেন তিনি। সাত সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবেন কী করে? করোনাভাইরাস মহামারিতে তাঁর মতো অসংখ্য ভারতীয় নাগরিকই দারিদ্র্যের কবলে পড়ে গেছেন। ৪০ বছর বয়সী এ নারীর স্বামী আবদুল জলিল (৬৫) ও সন্তানেরা এক বেলা খেয়ে কোনোরকম দিন পার করছেন। নয়াদিল্লির ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তাঁরা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে রশিদা বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকি, আমি দুশ্চিন্তায় অসহায় হয়ে পড়ি। স্বামী যেটুকু আয় করে, তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়।’
গত আট সপ্তাহে ভারতে করোনাভাইরাসে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। করোনার কবলে পড়ে দেশটিতে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দরিদ্র ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষুধার মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
রাইট টু ফুড কর্মসূচির পরিচালক অঞ্জলি ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারতের দরিদ্ররা এখন দুটি সমস্যার মুখোমুখি। একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য সমস্যা, আরেকটি হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। বিশাল এক স্বাস্থ্যসংকট সৃষ্টির পাশাপাশি অনেককেই তাঁর পরিবারের চিকিৎসার প্রয়োজনে জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে ফেলতে হয়েছে।’
ভারতের সেন্টার ফর মনিটরিং দ্য ইন্ডিয়ান ইকোনমির তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসেই দেশটিতে ৭৩ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অর্থাৎ দেশটির সমস্যা আরও প্রকট হবে। কারণ, যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে ছিলেন না। লাখো মানুষ সরকারি সুবিধার বাইরে রয়েছেন।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অমিত বাসোল বলেছেন, ‘গত বছর অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছে। তাদের ঋণ করে চলতে হয়েছে। তাদের খাওয়া কমিয়ে দিতে হয়েছে। এর দ্বিতীয় ঢেউ খুব অনিশ্চিত, চাপযুক্ত পরিস্থিতির মধ্যেই চলে আসছে।’
দিল্লিতে লকডাউন শুরুর পর থেকে নির্মাণশিল্প থেকে কাজ হারিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে আবদুল জলিলকে। শুরুতে দৈনিক ৫০০ রুপি আয় হলেও এখন তা ১০০ রুপিতে নেমে এসেছে।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, গত বছরের লকডাউনে ভারতে ১০ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বিধিনিষেধ উঠে গেলে ১৫ শতাংশ মানুষ গত বছরের শেষ পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ পাননি। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ নারী কর্মী। যাঁরা চাকরি ফিরে পেয়েছেন তাঁদের বেতন কমে গেছে। ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তাঁদের আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া জলিলের মতো ১০ কোটি ভারতীয়ের কোনো রেশনসুবিধা নেই।
ভারতে টানা তিন দিন করোনা শনাক্ত দুই লাখের নিচে রয়েছে। গতকাল রোববার করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৩ জনের। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৪৬০ জনের। টানা পাঁচ দিনের মতো করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা রেকর্ড ৪ লাখ ১৪ হাজার হয়েছিল। ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৮ লাখের বেশি। ভারতে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজারের বেশি। এদিকে, দিল্লিতে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৭ জুন পর্যন্ত শেষ হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ৩১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,