Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ওমর খৈয়ামঃ কথা -সংগ্রহিত।

Share on Facebook

ওমর খৈয়ামঃ

ফারসি সাহিত্যের মধ্যযুগের কবি ওমর খৈয়াম। গিয়াস উদ্দিন আবুল ফাতাহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম সাধারণ্যে ওমর খৈয়াম নামে পরিচিত। ওমরের জন্ম সম্পর্কে শুধু এইটুকু জানা যায় যে, উত্তর খোরাশানের নিশাপুরে একাদশ শতকের কোন একসময় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নিশাপুরেই তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়। এখানেই ১১২৩-২৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয় এবং ঁকেতা সমাধি¯’ করা হয়।

ওমর মূলত ও প্রধানত একজন বিজ্ঞানী। জ্যোর্তিবিজ্ঞান, অঙ্কশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, ভুগোল নিয়ে গবেষণায় তিনি নিজেকে সর্বÿণ নিয়োজিত রেখেছেন। তবুও কবি হিসেবেই তাঁর সমধিক পরিচিতি। তার কারণ বোধ হয় ওমরের কবিতা কেবল ভাষা আর ভাবের ফুলঝুরি নয়, এগুলো রচিত হয়েছিল গভীর দর্শন অনুভূতি থেকে।

কবি হিসাবে খৈয়ামকে আবিস্কার করেছিল ইউরোপের মানুষ। ফার্সি ভাষাভাষীদের বাইরে ষোড়শ শতকে প্রথম টমাস হাইড নামে একজন ব্রিটিশ অরিয়েন্টালিস্টের মাধ্যমে খৈয়াম ইউরোপের বোদ্ধা মহলে জনপ্রিয় হন। তার প্রায় দুই’শ বছর পর ১৮৫৯ সালে এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড নামে একজন ব্রিটিশ সাহিত্যিক প্র থম খৈয়ামের কবিতা সম্ভার ইংরাজিতে অনুবাদ করেন। বিখ্যাত সে অনুবাদ কর্মটি কবি হিসেবে খৈয়ামের খ্যাতি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়। ইউরোপের সমাজ সাহিত্যে অনেকখানি প্রভাব বি¯Íার করতে সÿম হয় ওমরের কাব্য যাদু। ওমরের কবিতা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে রাতারাতি সেখানে গড়ে ওঠে খৈয়াম ফ্যান ক্লাব, খৈয়াম বার, থিয়েটার ইত্যাদি।

খৈয়াম বাংলাতে আসে অনেক পরে। কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও কান্তি ঘোষ, সৈয়দ মুজতবা আলী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সিকান্দার আবু জাফর, নরেন দেবসহ আরো অনেকে ওমরের রুবাইয়াতগুলো অনুবাদ করেছেন। অনুবাদগুলোর মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদটি বিশিষ্টতার দাবিদার। আওলাদ হোসেন তাঁর ‘ওমর খৈয়াম : মর্মবাণী ও জীবন রহস্য’ গ্রন্থে’ কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেছেন, ‘কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।’

রুবাইয়াৎঃ

‘রুবাই’ এক ধরণের চতুষ্পদী শ্লোক। বিশেষ ছোট আকৃতির সমিল সুরেলা ফার্সি কবিতা। এ চতুষ্পদী শ্লোকের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্ ছত্রে অন্ত্যমিল থাকে এবং তৃতীয় ছত্র থাকে স্বাধীন। অর্থাৎ এর মিল বিন্যাস হয় ‘ক-ক-খ-ক’। এ কবিতাগুলো স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। মূল পর্বের মাত্রা সংখ্যা হয় সাধারণত ৩। লয় থাকে দ্রুত।

রুবাই শব্দের বহুবচন রুবাইয়াৎ। রুবাই কবিতার জন্ম ইরানে। ইরানি আলংকারিকদের মতে, এ কবিতার তৃতীয় ছত্রে মিল না দেওয়ার কারণে চতুর্থ ছত্রের শেষ মিলে বেশী ঝোঁক পড়ে। শেøাক সমাপ্তিতে পরিপূর্ণ গাম্ভীর্য ও তীÿèতা পায়। এই খর্বাকৃতির রুবাইগুলোর মধ্য

দিয়ে কবি তাঁর মৃন্ময় চিন্তা-ভাবনা, বিবিধ অনুভূতি ও দর্শন ুতীব্রতারস সাথে সুতীÿèভাবে প্রকাশ করতে সÿম হন।

আমাদের আলোচ্য খৈয়াম এক হাজারেরও বেশী রুবাই রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। দর্শন বা বিজ্ঞান দিয়ে যে ভাব তুলে ধরা যায় না খৈয়াম তা রুবাইয়ের অবয়বে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আর তাই যুক্তি ও আবেগের করুণ রসের প্রভাবে তাঁর রুবাইগুলি হয়ে উঠেছে অনন্য।

রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামঃ

মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল খৈয়ামের রুবাই বা চতুষ্পদী কবিতাগুলোকে বলেছিলেন ‘চিন্তা-উদ্দীপক পারস্য উপসাগরের মনিমুক্তা’। ভাবুক ও চিন্তাবিদ ওমর অবকাশ যাপনের উদ্দ্যেশ্যেই রুবাইগুলি রচনা করেছেন। রাজনীতিবিদ চার্চিল যেমন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় স্কেচ রচনায় হাত দিয়েছিলেন। তবে, অবকাশ যাপনের সময় কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অথবা যেকোনো কারণেই রুবাইসমূহ রচনা করেন না কেন তবুও এই রুবাইগুলোর মধ্যে ওমরের জীবন সম্পর্কে সুগভীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।
ওমরের কাব্য ভাবনাকে মূলত ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়:

১. ‘শিকায়াত্-ই-রোজগার’, অর্থাৎ গ্রহের ফের বা অদৃষ্টের প্রতি অনুযোগ।

২. ‘হজও’ অর্থাৎ ভন্ডদের, বকধামিৃকদের প্রতি শেøষ-বিদ্রæপ ও তথাকথিত আলেম বা জ্ঞানীদের দাম্ভিকতা ও মূর্খদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ।

৩. ‘ফিরাকিয়া’ ও ‘ওসালিয়া’ বা প্রিয়ার বিরহে ও মিলনে লিখিত কবিতা।

৪. ‘বাহারিয়া’ বা বসন্ত, ফুল, বাগান, ফল, পাখি ইত্যাদির প্রশংসায় লিখিত কবিতা।

৫. ‘কুফরিয়া’ বা ধর্মশাস্ত্র বিরুদ্ধ কবিতা।

৬. ‘মুনাজাত’ বা প্রার্থনামূলক কবিতা।

মূলত এ ছয় ধরণের কাব্য ভাবনার আকারে এসেছে বিস্তৃত অনুষঙ্গ।

জন্ম-মৃত্যু প্রসঙ্গ:

জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ওমরকে জীবনের মূলগত সমস্যাই পীড়িত করেছে। তিনি জীবনের একটা অর্ ও তাৎপর্য নির্ণয় করতে চেয়েছেন। আমরা কোত্থেকে এসেছি, কেন এসেছি, আবার কোথায় চলে যাবÑ মানব জীবনের এই চির পুরাতন ও চির নতুন রহস্য উন্মোচিত ও উদঘাটিত করবার প্রয়াস পেয়েছেন।

ওমরের উপলব্ধি, এ জগতে মানুষের আস-যাওয়া নিতান্ত অর্থহীন। কোন এক অন্ধকার লোক থেকে মানুষ এ জগতে আবির্ভূত হয়, তারপর স্বল্পকালের জন্য খেলা খেলে আবার মহাকালের কোলে বিলীন হয়ে যায়। মানুষের শক্তির দম্ভ ও ঐশ্বর্য কিছুই চির¯স্থায়ী নয়।

‘এই সে প্রমোদ-ভবন যেথায় জলসা ছিল বাহ্রামের, হরিণ যেথায় বিহার করে, আরাম করে ঘুমায় শের! চির জীবন করল শিকার রাজ-শিকারী যে বাহ্রাম,
মৃত্যু-শিকারীর হাতে সে শিকার হল হায় আখের!’(৯৫)

প্রতাপশালী সম্রাট বাহ্রামের জলসাঘরে হরিণ বিহার করে, বাঘ আরাম করে ঘুমায়। আর যে সম্রাট বাহরাম শিকারে এমন নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন, তিনিও নিপুণ শিকারী হয়ে মৃত্যুর হাতে শিকার হয়েছেন।

ওমরের এ মৃত্যু ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় ২২, ৩৮, ৪১, ৭০, ৭৫, ৮০, ১১০, ১১৪, ১৬১, ১৯১ ইত্যাদি রুবাইয়ে।

মানব জীবনে প্রকৃতির প্রভাব সম্পর্কে ওমরের মনোভাব:

ওমর মনে করেন প্রকৃতিও আশ্চর্য ছলনাময়ী। প্রকৃতি মানুষের সাথে দারুণ প্রতারণা করে থাকে। যে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মাধুর্যে মানুষ মুগ্ধ ও মোহিত, সেই প্রকৃতি কি নিষ্ঠুর! শাহানশা’র রক্তের উপর ফুটে উঠেছে গোলাপ ; গালে তিল ছিল যে সুন্দরীর, তার উপর ফুটে উঠেছে নার্গিস।

‘দেখতে পাবে যেথায় তুমি গোলাপ লালা ফুলের ভিড়, জেনো, সেথায় ঝরেছিল কোন শাহানশা’র রুধির। নার্গিস আর গুল-বনোসা’র দেখবে যেথায় সুনীল দল,

ঘুমিয়ে আছে সেথায়Ñ গালে তিল ছিল যে সুন্দরীর।’(২২)

‘সবুজ ঘাস হ”েছ কোন গুল-বদনীর কবরে ঢাকা নীল চাদর, নৃত্য-পাগল ঝর্ণাতীরে সবুজ ঘাসের ঐ ঝালর

উন্মুখ কার চুমো যেন দেব-কুমারের ঠোঁটের পরÑ হেলায় পায়ে দলে না কেউÑ এই যে সবুজ তৃণের ভিড় হয়ত কোন গুল-বদনীর কবর-ঢাকা নীল চাদর।’ (৭০)
সুতরাং প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ,বর্ণ, স্পর্শে আমাদের অভিভূত ও আবেগ বিহŸল হওয়ার কোন হেতু নেই। ওমরের প্রকৃতি সম্পর্কে এ ধরণের মনোভাব এছাড়াও ফুটে উঠেছে ২, ২০, ৬৬, ৭০, ৭১, ৭৬, ৯০ ইত্যাদি রুবাইয়ে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে মনোভাব:

মানুষের যত জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-তত্ত¡ সব মিথ্যে। আসল সত্য এই যে, মানুষকে একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এবং মাটির তলে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে হবে। তাই ওমরের কাছেÑ

‘মুসাফিরের এক রাত্রির পাš’-বাস এ পৃথ্বিতল।’ (৩৮)

ওমর মনে করেন মানুষ অজ্ঞানে আছে, চারিদিকে মহাশূণ্যতা বিরাজমান।

‘অজ্ঞানেরই তিমির তলের মানুষ ওরে বে-খবর! শূণ্য তোরা, বুনিয়াদ তোর ঁগা া শূণ্য হাওয়ার ’পর। ঘুরিস অতল অগাধ খাদে, শূণ্য মায়ার শূণ্যতায়,

পশ্চাতে তোর অতল শূণ্য অগ্রে শূণ্য অসীম চর। (৪১)

জগতের অনিত্যতা:

এই জগতের সকল কিছু অনিত্য এবং মৃত্যুর পর কি আছে তা কবির অজ্ঞাত। তাই তিনি ÿণবাদী দর্শনে উপনীত হয়েছেন।

‘সব ক্ষণিকের আসল ফাঁকি সত্য মিথ্যা কিছুই নয়’

কবি আরও উপলব্ধি করেছেন যে, মানুষ অদৃষ্টের হাতে ক্রীড়নক মাত্র। নিয়তি-তাড়িত মানুষ যেন নিয়তিরূপ দাবার ঘুঁটি।

আমরা দাবা খেলার ঘুঁটি, নাই রে এতে সন্দ’ নাই! আসমানী সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই। এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব,
খেলার শেষে তুলে মোদের রাখবে মুত্যু বাক্সে ভাই! (১৬২)

কবির মতে জীবনটা যেন একটা পুতুল খেলা। আমরা মানুষ মাত্রেই নিয়তির হাতে পুতুল মাত্র। জন্মসূত্রে মানুষ নিয়তির নাগপাশে বন্দী। যে নিয়তি মানুষের সুখে-দূঃখে সমনির্বিকার। নিয়তিকে খন্ডন করা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অযথা হা-হুতাশ করে লাভ নেই।

পাপ-পূণ্য:

এই জীবন যেহেতু অর্থহীন, মানুষ যদি নিয়তির হাতেμীড়নক হয় এবং মৃত্যুর পর মানুষের যদি কোন অ¯িÍত্ব না থাকে তবে ওমরের পÿে কোন মূল্যবোধে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। এজন্যই তিনি পাপ পূণ্যে সমান উদাসীন। কল্পিত স্বর্গ নরকে তাঁর আ¯’া নেই। এই জীবনেই মানুষের দুঃখ ও দাহ তাঁর কাছে নরক এবং সুখ ও শান্তি স্বর্গ বলে প্রতিভাত।

‘বুকের কুন্ডে দুখের দাহ তারেই আমি নরক কই, মুহূর্তের যে মনের শান্তি আমি বলি স্বর্গ তায়।’ (৮৮)

মোল্লা-পুরোহিত:

মোহমুক্ত ওমরের দৃষ্টিতে সমাজপতি ও শহরের মুফতি, নীতিবাগিশ ও মোল্লা-মৌলভী, পীর-দরবেশ ও সুফীসাধক, জ্ঞাণী পন্ডিত, দার্শনিক সকলেই ব্যাঙ্গ-বিদ্রæপের পাত্রে পর্যবসিত হয়েছে।

ওমরের মতে, রক্ত চোষা শহরের মুফতির চেয়ে পানশালার মাতাল নিঃসন্দেহে উত্তম।

‘হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম ত নও,
পানোন্মত্ত আমার চেয়ে তুমিই বেশী বেহুঁশ হও।
মানব-রক্ত শোষ তুমি, আমি শুষি আঙুর-খুন, রক্ত-পিপাসু কে বেশী এই দু’জনেরই, তুমিই কও!’ (১৩৪)

ওমরের মতে এই মূঢের দল অজ্ঞানতায় নিমজ্জ্বিত্ তাই ফতোয়া দিযে তারা মুক্তিবুদ্ধির ধারকদের কাফের বানিয়ে চলে।

‘ফতোয়া দিয়ে কাফের করে তাদের তারা এক কথায় শুভ্র-মুক্তবুদ্ধি যারা, নয় গর্দভ তাদের ন্যায়। (১৩৮)

তাই কবির উপদেশ আনাড়ির হাতের সুধার চেয়ে জ্ঞানীর হাতের গরল পিয়ে নেওয়া ভাল।

‘যোগ্য হাতে জ্ঞানীর কাছে ন্য¯Í কর এই জীবন,
নির্বোধদের কাছ থেকে ভাই থাকবে তফাত দশ যোজন!

জ্ঞানী হাকিম বিষ যদি দেয় বরং তাহাই করবে পান, সুধাও যদি দেয় আনাড়িÑ করবে তাহা বিসর্জন’ (১৪৪)

আনন্দ-স্ফুর্তি, ভোগ:

এই দুনিয়ায় কোন কিছুর মূল্য নেই, কোন কিছুর অর্থ নেই। সুতরাং এই অর্থহীন দুনিয়ায়, যে দুনিয়ার মানুষ এক রাত্রির মুসাফির মাত্র, ওমর আনন্দে বিভোর হতে চেয়েছেন। এই দুনিয়ার সরাইখানায় এক রাত্রির মুসাফিরের পÿে সুরাপান করে সাকির সাতে বিলাসলীলায় মত্ত হয়ে সময়টুকু কাটানোই সব চাইতেুদ্ধিমানেরব কাজ। তাই ওমর বলেন,

‘অনন্ত কাল ঘুমাবি কাল, পান করে নে মদ আজি!’ (২৮)

‘আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙিন গুল রেখোনা আর পান-পাত্র বেকার, উপচে পড়ক– সুখ ফজুল। পান করে নে, সময় ভীষণ অবিশ্বাসী, শত্রæ ঘোর,
হয়ত এমন ফুল মাখানো দিন পাবি না আজের তুল!’ (৮)

ওমরের এ ভোগবাদী দর্শনের কারণেই তার কবিতায় বার বার এসেছে সরাইখানা, সুরা ও সাকি প্রসঙ্গ। তাঁর ১০, ১৩, ১৫, ৪০, ৬৩, ৯৩ ইত্যাদি রুবাইয়ে তাঁর এ জীবনমুখী ও ভোগবাদী দর্শনের পরিচয় মেলে।

ক্ষণবাদী দর্শন:

এই নিখিল নাস্তির মধ্যে ওমর মানুষের কাছে কোন মিথ্যা সান্ত¦না বা আশ্বাসের বাণী বহন করে আনেন নি। জগৎ ও জীবনকে অসার জেনেও তিনি একে আনন্দ স্বরূপে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তাই তিনি প্রকৃতির পটভূমিতে সুরা ও সাকি নিয়ে মশগুল হতে চেয়েছেন। ওমরের এ জীবন দর্শনকে ক্ষণবাদী জীবন দর্শন বলা চলে। এ দর্শনের মূলে একটা গভীরতর নৈরাশ্য ও বেদনা লুকায়িত আছে। কেননা এই সৃষ্টি যে নিরর্থক, এ কথা তিনি মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে পারেননি। এই জীবনের সকল স্মৃতি একেবারে শূণ্যে বিলীন হয়ে যাবে, এও বিশ্বাস করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তাই তিনি এ ক্ষণকালীন জীবনের জন্যে একটা আর্তি ও কাতরতা অনুভব করেছেন।

‘আবার যখন মিলবে হেথায় শরাব সাকীর আঞ্জামে হে বন্ধুদল, একটি ফোঁটা অশ্রæ ফেলো মোর নামে! চμাকারে পাত্র ঘুরে আসবে যখন, সাকীর পাশ,
পেয়ালা একটি উলটে দিও স্মরণ করে খৈয়ামে।’ (২০)

এই রূপ-রস-আলো-গন্ধময় জগতে প্রাণ বারবার ফিরে আসতে চায়, কিন্তু মন জানে কোনদিনও সে ফিরে আসতে পারবে না। তাই প্রাণ স্মৃতির রেশটুকু ধরে রাখতে চায়। কিন্তু‘ প্রাণের যদি একেবারেই বিলুপ্তি ঘটে তবে স্মৃতির অস্তিত্ব থাকবে কোথায়! তাই তাঁর মনে এই প্রশ্ন ধ্বনিত হয়েছে, ‘কেন জন্মে আবার মরতে হয়?’

বিদ্রোহ:

জীবনের কোন সদুত্তর খুঁজে পাননি ওমর খৈয়াম। বিশ্বের কোন নিয়ম-নীতি খুঁজে না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, ধর্ম-সমাজ-ন্যায়-নীতি সকল কিছু নিয়ে উপহাস ও বিদ্রুপ করেছেন।

কবির প্রশ্ন জাগে স্বর্গে শ্রেষ্ঠ মদের প্রতিশ্রæতি খোদা নিজেই দিয়েছেন, তবে ধরায় কেন তা পান করা যাবে না-

‘স্বর্গে পাব শরাব-সুধা এ যে কড়ার খোদ খোদার, ধরায় তাহা পান করলে পাপ হয় এ কোন বিচার?’ (৫৩)

কবির যুক্তি, মানুষ পাপ না করলে তবে খোদার দয়ালু স্বত্তা ব্যর্থ হবে। পাপ করি বলেই খোদা হয়ে ওঠেন করুণাময়। নিজে করুণাময় সাজার জন্য তিনি মানুষকে দিয়ে পাপ করায়Ñ

‘আমরা যদি পাপ না করি, ব্যর্থ হবে তাঁর দয়া,

পাপ করি তাই ÿমা করে করুণাময় নাম খোদার।’ (১২৩)

কবি নিজেকে বিবেচনা করেছেন এক সংকটময় মানুষ হিসেবে। মসজিদে যে অযোগ্য, গির্জার শত্রæ। তার স্বর্গের আশা নেই, মর্ত্যেও শান্তি নেই।

‘এক হাতে মোর তসবী খোদার, আর হাতে মোর লাল গেলাস, অর্ধেক মোর পূণ্য ¯œাত, অর্ধেক পাপে করল গ্রাস। পুরোপুরি কাফের নহি, নহে খাঁটি মুসলিমওÑ
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ।’ (৫০)

কবির মন্তব্য স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে আসার ব্যাপারে ¯্রষ্টা তাঁর মত নিলে তিনি কিছুতেই আসতেন না। সম্ভব হলে আসা যাওয়ার রীতিটাই বন্ধ করে দিত।

‘স্রষ্টা যদি মত্ নিত মোর আসতাম না প্রাণান্তেও এই ধরাতে এসে আবার যাবার ইচ্ছে নেই মোটেও।
সংক্ষেপে কই, চিরতরে নাশ করতাম সমূলে
যাওয়া-আসা জন্ম আমার, সেও শূন্য শূন্য এও!’ (১৩)

ওমরের এ ধরণের বিদ্রোহী ভাবধারার রুবাইগুলো দিয়ে তাঁর অন্তরের ধুমায়িত ÿোভকে প্রকাশ করেছেন। তবুও ধর্ম-সমাজ-ন্যায়-নীতি নিয়ে তাঁর এ হাসি-ঠাট্রার অন্তরালে একটি কাতরতা প্র”ছন্ন রয়েছে। বাঙালির কবির ভাষায় বলা যায়

‘বাহিরে যবে হাসির ছটা

ভিতরে থাকে আঁখির জল।’ রবীন্দ্রনাথ

ওমর খৈয়ামের দার্শনিক মতবাদঃ

ওমর খৈয়ামের দার্শনিক মতবাদ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তাঁর অসংখ্য চতুষ্পদীর ভেতরে বিভিন্ন ভাবধারার বিচিত্র অভিব্যক্তির পরিচয় আমরা পূর্বোক্ত আলোচনায় পেয়েছি। খৈয়ামের এ রুবাইগুলো থেকে পÐিত-সমাজ তাঁর মানস-কাঠামো নির্ণয়ের জন্যে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন।
চতুষ্পদীগুলির মধ্যে কোথাও তিনি আশাবাদে উজ্জ্বল, কোথাও আবার নৈরাশ্যবাদে বিবর্ণ। কখনও তিনি অদৃষ্টবাদে উৎকণ্ঠিত আবার তার পরেই অজ্ঞেয়বাদে বিব্রত। কোথাও তিনি তপস্যাবাদে মন্ত্রণামুখর, কোথাও আবার ভক্তিবাদে গদগদ কণ্ঠ (১৪৩*)। কোনো কোনো ÿেত্রে পরিহাসপ্রিয়তায় তিনি লঘুপÿ। এ থেকে নির্ণয় করা একরকম দুঃসাধ্য তাঁর সত্যিকার মতাদর্শ কি! তিনি সুফীদের মরমীবাদে প্রচার করতে চেয়েছেন, না এপিকিউরিয় দর্শন অনুসারে দেহবাদের পÿে ওকালতি করেছেন? না কি দার্শনিক জেনোর মতানুসারে সুখ-দুঃখে নিরাসক্তি সম্বন্ধেই তাঁর পÿপাতিত্ব? এ নিয়ে তর্কের ¯Íুপ জমে উঠেছে শুধু, দৃঢ়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

ওমর খৈয়ামকে নিজেদের দলভুক্ত করবার জন্য বিভিন্ন চিন্তা-গোষ্ঠী যতরকমের তর্ক উপ¯ি’ত করেছেন তার ভেতরে কয়েকটি দল বিশেষভাবে উলেøখযোগ্য।

অধ্যাপক আর্থার জে. আরবেরির মতে ওমর খৈযাম নিছক দেহবাদী। তিনি পার্থিব জীবনের হতাশা উদ্দেশ্যহীনতা প্রভৃতি বিশেষভাবে লÿ্য করে এপিকিউরিয় দর্শনের অনুসারী। তিনি মনে করেন জীবন সংÿিপ্ত সুতরাং ভোগই জীবনের চরম এবং পরম লÿ্য। এই মতাদর্শই তাঁর অধিকাংশ চতুষ্পদীতে প্রতিফলিত। ওমরের পাঠক সাধারণের বেশীরভাগ এ মতের সমর্থক।

তবে আরবেরির দলের এ মতামত নিয়ে বেশ সমালোচনাও পরিলক্ষিত হয়। ওমরের মতো এপিকিউরিয় দর্শনেও মৃত্যুর পর আত্মার বিনাশের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে মানুষ মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত হয়ে জীবনকে ুখীস করতে পারে। কিন্তু, ওমরের সাথে এপিকিউরিয়ানদের সুখের ধারণায় ব্যাবধান রয়েছে। ওমর সুখ বলতে ইন্দ্রিয়জ সুখের কথ া বলেছেন। কিন্তু এপিকিউরাস সুখ বলতে বুঝিয়েছেন যা সমগ্র জীবনব্যাপী ¯স্থয়ী হয়। এপিকিউরিয়নদের মতে, আমাদের বিশেষ কোন ই”ছা বা আকাক্সÿার বশবর্তী হওয়া উচিত নয়। যদি বিশেষ কোন সুখ পরিণামে বৃহত্তর দুঃখে ধাবিত করে তবে তা পরিত্যাজ্য। বৃহত্তর

সুখের আশায় আমাদের দুঃখকে বরণ করা উচিত। ওমরের সুখ ধনাত্মক কিন্তু এপিকিউরিয়ানদের সুখ শেষ অবধি ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

এপিকিউরিয়ানদের সমান্তরলে একটি দল ওমরকে সঙ্গে চার্বাক দর্শনের সাদৃশ্য খোঁজেন। চার্বাকের কথা ‘যাবেজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋণং কৃতংৃত্বাঘ পিবেৎ’। কিš‘ নিজের সুখলাভের জন্য ওমর এতখানি স্বার্থপর নন। নিজের সুখের জন্য অন্য কাউকে কষ্ট দেয়ার মত সংকীর্ণমনা তিনি হতে পারেন না।

এপিকিউরিয়ান এবং চার্বাকপন্থীদের সঙ্গে ওমরের মূলগত ব্যবধান এ জায়গায় যে, শেষজীবনে ওমরের মনোভাবের দারুণ পরিবর্তন ঘটে। তিনি পরম সত্তার অ¯িÍত্বে প্রত্যয়ী হন। সুতরাং ওমরের সাথে এপিকিউরাস ও চার্বাকের তুলনা করা যথার্থ হবে না।

অন্য একটি মতের উদগাতা খৈয়ামের ফরাসী অনুবাদক জে. বি. নিকোলাস এবং তাঁর সমর্থকগোষ্ঠী। তাঁদের ব্যাখ্যা হল, ওমর খৈয়াম সুফীবাদের মরমীবাদে বিশ্বাসী। তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন, সে সময়ে পারশ্যের সর্বত্র সুফীবাদের দার্শনিক মতবাদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তাছাড়া ওমর জীবনের দীর্ঘকাল নির্জনে কাটিয়েছেন। কাজেই তাঁর চিন্তাধারা অর্ন্তমুখীন হতে বাধ্য। এবং সেই নির্জন পরিবেশে অর্ন্তমুখীন চিন্তা সুফীবাদের মরমীবাদে পরিস্ফুট হবে নিঃসন্দেহে। তাঁরা বলেছেন, সরাইখানা, মদ, পানপাত্র, সাকি Ñএসবই রূপক। রূপকের সাহায্যেই ওমর মরমীবাদের প্রচার করেছেন। তাঁর অন্যান্য ভাবধারার চতুষ্পদীগুলির উলেøখ করে তাঁরা বলেছেন, ওমর বিভিন্ন ভাবধারায় কাব্য রচনা করেছেন তা’ সত্যি, কিন্তু তাঁর বিশেষ ঝোঁক যেদিকে সেটাই তাঁর আসর মত। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন তা ঠিক। কিন্তু নৈরাশ্যবাদ ব্যাপকতর। কাজেই নিঃসন্দেহে বলা চলে তিনি সুফী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন।

এ মতবাদের বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন খৈয়ামের অন্যতম অনুবাদক জন পেইন। এক সুদীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি যুক্তি খন্ডন করে বলতে চেয়েছেন, ওমর খৈয়াম শুধু সুফীবাদের মরমীবাদে আকৃষ্ট ছিলেন তা ঠিক নয়। ওমরের মতবাদ ইসলামী আদর্শ সুফীবাদ এবং উপনিষদের মতাদর্শের সমন্বয়।

উপনিষদের আদর্শে ওমর কিভাবে অনুপ্রাণিত হলেন তা প্রমাণ করার জন্যে জন পেইন বলেছেন, তৎকালে পারশ্যে প্রচলিত সুফীবাদ মরমীবাদের আবরণে বৈদিক সর্বেশ্বরবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই মত প্রমাণ করবার জন্যে তিনিজোরাস্টারের ধর্মনীতি, বৈদিক আদর্শ, ব্রাহ্মন্যবাদ, উপনিষদের যুক্তি, বৈশ্য শান্ডিল্য শঙ্করা প্রভৃতি ভারতীয পন্ডিতের ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে আর্য প্রভাব ও প্রভুত্ব কী ভাবে পারশ্য পর্যন্ত বি¯Íৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলে কি ভাবে বৈদিক আদর্শ ফল্গুধারার মত প্র”ছন্নভাবে পারশ্যবাসীদের অবচেতন মনে সম্পৃক্ত ছিল তা নিয়ে একটি দীর্ঘ গ্রন্থই রচনা করেছেন।

এ প্রধান দলগুলোর বাইরের একদল মনে করেন, ওমর খৈয়াম আদৌ ঈশ্বরবাদী নন। তাঁদের মতে, ওমর নিরীশ্বরবাদী। চিরকাল তিনি তাঁর এই মতবাদই পোষণ করে এসেছেন। তিনি আসলে ছিলেন বিজ্ঞানী। কাজেই ঈশ্বরবাদ নিয়ে নিশ্চিন্তে নিষ্ক্রিয় বসে থাকা তাঁর

প্রকৃতি বিরুদ্ধ। চতুষ্পদীগুলির ভেতর দিয়ে তিনি নিরীশ্বরবাদ সরাসরি প্রচার না করলেও তথাকথিত ঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধে তিনি ধারালো মন্তব্য করেছেন। এইজন্যে উগ্র মোলøা সমাজের হাত থেকে আত্মরÿা করতে তাঁকে নাকি মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করতে হয়েছে। এমনকি নিশাপুর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতেও তিনি বাধ্য হয়েছেন।

মোট কথা ওমর খৈয়ামকে কেউ সরাসরি নিজের দলভুক্ত করতে পারেননি। সে চেষ্টার কোনো আবশ্যকতা আছে বলেও মনে হয় না। ওমর কাব্যের যাঁরা পাঠক, তাঁরা কাব্যের

রসাস্বাদন করতে করতে কবির

তারিখ: অক্টোবর ২৬, ২০১৮

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪,সোমবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ