প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ, বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম তাঁর ফার্সী ভাষায় লিখা তাঁর এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এর অর্থ অনেক কবির সাথে এর বাংলা অর্থও করেছেন।
প্রসিদ্ধ ইরানী কবি ওমর খৈয়াম ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- লিখেছেন।
” নেকি ও বদি কেহ্ দর নেহাত বেশর আস্ত্
শাদি ও গমি কেহ্ দন কজা ও কদর আস্ত্
বা চরখে মাখুন হাওয়ালে কান্দার রাহে আকুল্
চর্ খ্ বজ্ তু হেজারবার বিচারে তর আস্ত্ “
নূরুন নাহার বেগম নামে একজন লেখিকা বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন-
“মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে ভালো ও মন্দ এই দুই এর সমষ্টতে।
এই পৃথিবী গঠিত হয়েছে সুখ ও দুখের সমন্বয়ে।
এসবের জন্য ঐ দূরের আকাশকে কখনো দায়ী করো না।
কেননা, সে তোমার চেয়েও আরো অনেক অসহায়। ”
ওমর খৈযামের মতে মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে ভালো ও মন্দ এই দুই এর সমষ্টতে আর সুখ ও দুঃখের মিশ্রনে,কিন্তু মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ দিক গুলি সম ভাবে বন্টন হয় নাই, আর তা যদি হত তখন পুরা মানব জাতি একই রকমের হতো, থাকত না কোন ভিন্ন সত্বা, মানুষের চাওয়া ও পাওয়াগুলিও হতো একই রকমের। নিরানন্দ মানব জাতির জগৎ। একই ভাবে মানুষের মধ্যে সুখ ও দুঃখ সম ভাবে বন্টন হয় নাই, আর তা হয় নাই বলেই প্রতিটি মানুষের মধ্যে বৈচিত্রতা, কোন মানুষের সাথে কোন মানুষের মিল নেই।
বিশেষ করে আমরা যখন কোন বড় ধরণের দুঃখ বোধের মধ্যে পড়ি, বড় ধরনের আঘাত বা কোন ঘটনা মর্মান্তিক ভাবে আমাদেরকে আঘাত করে, ভয়াবহ শোকের মধ্যে নিমজ্জিত হই তখন আমরা ঐ দূরের আকাশের পানে চেয়ে থাকি, সহায়তা চাই, প্রার্থনা করি বা অযথাই আহাজারি করতে থাকি।
ওমর খৈয়াম বুঝাতে চেয়েছেন দূরে আকাশ যাকে তিনি সুষ্টিকর্তা হিসাবে রূপকে এনেছেন তিনি সবই দেখেন, বুঝেন আর শেষ বিচারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন।
জগতের বিচারে যদি কারো কোন কারণে ফাঁসির আদেশ হয়, কোন ব্যাক্তি যদি হঠাৎ কোন মরণ ব্যাধি ঘিরে ধরে তখন আমাদের সকল প্রার্থনার মধ্যে, সকল সহযোগিতা চাওয়ার মধ্যে কি সব সময় ফাঁসির আদেশ বাতিল হয় ! সব সময় কি মরণ ব্যাধি দূর হয় !!
ওমর খৈয়ামের মতে আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, ভালো- মন্দের বন্টন, সুখ-দুঃখের বন্টন অসম ভাবে আসবেই আর এ সব নিয়ে আহাজারি, হায় হায় মাত্তম করে কোন লাভ হওয়ার কথা নয়, যে ভাবে ভালো- মন্দের, সুখ-দুঃখের বন্টন আমাদের মধ্যে হয়েছে তা আর খন্ডনের কোন উপায় মানুষের আওতার মধ্যেও নেই।
Richard Le Gallienne নামে একজন কবি ওমর খৈয়ামের এই বিখ্যাত রোবাইয়াৎ টি ইংলিশে অনুবাদ করে লিখেছেন –
Look not above, there is no answer there;
Pray not, for no one listens to your prayer;
Near is as near to God as any Far,
And Here is just the same deceit as There. ”
একই ভাবে Richard Le Gallienne ও এই বিখ্যাত রোবাইয়াৎ টি অনুবাদ করে যা লিখেছেন তার সার সংক্ষেপ হলো- উপরের দিকে না তাকিয়ে সমাধান নিজেরই মধ্যে আছে কেননা আহাজারির কোন উত্তর সেখান থেকে পাওয়া যাবে না।
বাংলায় কবি কান্তি ঘোষ এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এর শেষের দুই লাইন অনুবাদ করে লিখেছের-
হস্ত জুড়ে তার কাছেতে
চাইছ কিবা ভাগ্য- দ্বীন !
নিয়ৎ- সুতোয় বন্ধ ও যে
তোমার মতই শক্তিহীন।
ওমর খৈয়াম বুঝাতে চেয়েছেন, ভালো- মন্দের সমন্ময় আর সুখ ও দুঃখের আগমন যে ভাবেই আসুক না কেন সব কিছুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে জীবনকে হতাশায় আবদ্ধ না রেখে চেয়েছেন মানুষকে প্রাণ-বন্ত রূপে, সাফলতাকে সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যা্ওয়ার কথাই বলেছেন। তিনি চান নি কোন মানুষ যেন দুঃকের ভারে, শোকের ভারে পাথর হয়ে যেন না যায়, মূক, বধির হয়ে না থাকে, আনান্দ, সুখ বা ভালোকে সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই ছিল ওমর প্রত্যাশা।
নিজের শক্তীশালী অন্তরের শক্তিকে জাগ্রত করে, সঠিক চিন্তা চেতনার প্ররিস্ফুন ঘটিয়ে জগতে তথা সৃষ্টি-কর্তার সৃষ্টি রহস্যের সঠিক অর্থ উদ্ধরের মধ্যে দিয়ে জীবনকে অধিক অর্থ-বহ করার কথাই বলেছেন ওমর খৈয়াম।
আকাশের মত, আমাদের বিরাট অসাহায়ত্ব ধারণের কথা নয়। আকাশের মত বিশালও নই আমরা। ক্ষদ্র একটি বালুকণার চেয়েও বহু ক্ষদ্র, যদি আকাশকে তুলনায় আনি।
রেটিং করুনঃ ,