অনুবাদে: ইললু।
নবম অংশ
ভঁয়ে ভঁয়ে কাপছিল সে।বুঝতে পারছিল মাস,দিনগুলোর সাজানো সংযমের দেয়াল,মনের আটকে থাকা আগ্নেয়গিরি-পৌঁছে গেছে ভেঙ্গে পড়ার সেই মুহুর্তে,অগ্নুৎপাতের অপেক্ষায়,কোন উপায় নেই আর নিজেকে রক্ষা করার।কে এই শয়তান শিল্পীটা,হয়তো বলছে সব মিথ্যা কথাগুলো,মাত্র ঘন্টা দুয়েক কাটিয়ে,কোন রকম শারীরিক যোগাযোগও হয়নি,কি চায় সে?তার কি খারাপ কোন অভিসন্ধি আছে,কেই বা জানে?
হ্রদয়ের ঘন্টাটা কেন তাকে মাতাল করে তুলছে?সে ভাবছে,ঐ লোকটার মনটাও উদ্দাম উষ্ণ জোয়ারে,হয়তো বা সেটা তার বোঝার ভুল।রালফ হার্ট শুধু চেয়েছে একটা মেয়েমানুষ যে জাগিয়ে তুলতে পারে তার মনের নিভে যাওয়া আগুনটাঃ
হয়তো তার ইচ্ছা তাকে এক যৌনদেবী করার,আলোর ছটায়,হাত ধরে সে যেন তাকে নিয়ে যাবে জীবনের নতুন আনন্দে।সে হয়তো জানেও না মারিয়ার চিন্তাটাও তেমন একটাও পার্থক্য নেই,এমন না যে তার,নিজের কোন সমস্যার অভাব নেই(এতগুলো পুরুষ,তবুও কোনদিন সে খুঁজে পায়নি যৌনতার চরম,কতবারই না পুরুষদের যোনী ভেদ করা তার),সকাল বেলায় দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সে।কেন সে ভাবছে লোকটার কথা?কেন সে ভাবছে তার কথা, যে হয়তো একই মুহুর্তে অন্য আরেক মেয়ের “মনের আলো”, খোঁজায় ব্যাস্ত।
“আমি এ জন্যেই ভাবছি তার কথা,আমি তো কথা বলছি তার সাথে”।
অদ্ভুত এক কথা! সে কি লাইব্রেরীয়ান মহিলার কথা ভেবেছে কখনও?নাকি,সে ভেবেছে কখনও ফিলিপোনো মেয়েটার কথা,একমাত্র যার সাথে কম আলাপ আলোচনা হয়নি,দেয়ার নেয়ার কথা নিয়ে?সে ভাবেনি,ওরাই তো সেই মানুষগুলো যাদের সাথে আছে তার কিছুটা আন্তরিকতা।
মনটাকে সে ঘুরিয়ে নিতে চাইলো অন্যদিকে,বেশ গরম দিনটায়,গতকাল বাজারে যাওয়া হয়নি তার।গতকাল বেশ লম্বা একটা চিঠি লেখলো সে বাবাকে,তার পচ্ছন্দের জায়গাটার বিবৃতি দিয়ে যেটা সে কিনতে চায়-পরিবারের সবাই খুশী হবে সেটা জেনে।তার যাওয়ার সঠিক কোন তারিখ ছিল না চিঠিটায়,তবে লিখলো খুব শিঘ্রীই ফিরে যাচ্ছে সে।ঘুমানো-জেগে উঠে আবার ঘুমানো,এ ছাড়া নতুন তেমন আর কিছু নেই।বুঝতে পারলো খামারের বইটা শুধু সুইসদের জন্য,ব্রাজিলিয়ান্দের কাজে সেটা একেবারেই অচল-ওটাতো আলাদা একটা পৃথিবী,
সেখানে সুইজারল্যান্ড অচল।
যতই সময় কাটলো,মনে হলো আগ্নেয়গিরি,ঝড় সরে গিয়ে পৃথিবীটা হয়ে উঠছে স্বাভাবিক।
হঠাৎ ছিটকে আসা আবেগের স্রোত তাকে কিছুটা এলেমেলো করে দিলেও সহজ হয়ে এসেছে সে-ফিরে গেছে পুরোনোয়।বাবা মা,একজন পুরুষ অপেক্ষা করছে তার জন্যে,পুরোনো মালিক জানিয়েছে ব্যাবসা বেশ রমরমা।সে রাতেই বাড়ী ফিরে গেলেও,যা পয়সা আছে তাতে সহজেই একটা খামার বাড়ীর ব্যাবসা চালিয়ে নিতে কোন অসুবিধা হবে না।দূর্যোগের সময়গুলো পেছনে ফেলে,একাকীত্ব,ভাষার যুদ্ধ,আরব লোকটার প্রথম রাত্রি,নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া,এটাই তার গল্প,এটাই তার জীবন।স্বপ্নগুলো জানা আছে তার,সে যুদ্ধ করে যাবে স্বপ্নের আকাশটাকে কাছে টেনে আনতে।আর ঐ স্বপ্নে কোন পুরুষ নেই,অন্ততঃ কোন পুরুষ নেই যারা তার মাতৃভাষা জানে না।
ঝড়টা থেমে গেল যখন,মারিয়া বুঝতে পারলো ওটা তারই তৈরী করা ঝড়।কেন সে বলে নি, “আমি একা,আমি তোমার মতই ভুগছি যন্ত্রনায়।গতকাল তুমি খুঁজে পেয়েছ, আমার ‘মনের আলো’,প্রথমবারের মত আমাকে আন্তরিক ভাবে কেউ কিছু বলেছে”।
রেডিওতে একটা পুরোনো গান চলছিল, ‘আমার ভালবাসার মৃত্যু হয়,তার জন্মের আগে’।সেটাই ঘটে যাওয়া তার জীবনে,সেটাই তার ভাগ্য।
মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়া,কেটে যাওয়া দুটো দিনঃ
“আবেগ মানুষকে বদলে দেয় সম্পুর্ন,খাওয়াদাওয়া থেমে যায়,চোখ হারায় ঘুম,শান্তি ও পালায় মন থেকে।বেশীর ভাগ মানুষ ভয় পায়,তছনছ হয়ে যায় তাদের জীবনের সুর,স্রোতের জোয়ারে ভেসে যায় তাদের পুরোনো জগতটা।জীবনটাকে কেউই ঠেলে দিতে চায় না অনিশ্চয়তার দিকে।সবাই ধরে রাখতে চায় তাদের ঘুণধরা জীবনটা,অনেকে সর্মপণ করে নিজেকে আবেগের স্রোতে,যাতে নতুন এসে যেন বদলে দেয় তাদের সমস্যাগুলো।অনেকের ধারণা বিলিয়ে দাও নিজেকে আবেগের কাছে,সেখানেই লুকোনো সব সমস্যার সমাধান।খুঁজে নাও আরেকজন,তাদের সুখের আকাশ-লুকোনো দুঃখটাও।তারা যেন নেশাগ্রস্ত,আনন্দ খুঁজে নেয় পাওয়ায়,না পেলে হতাশায়।কোন কিছু না ভেবে আবেগে ভেসে যাওয়া আর নিজের ধ্বংস,দুটো একই কথা”
তৃতীয় দিন সেটা,যেন মৃতলোক থেকে ফিরে এলো রালফ হার্ট,কিছুটা অসময়ই বলা যায়,মারিয়া তখন আরেকজন খদ্দের এর সাথে।তাকে দেখে,সে বেশ নম্র ভাবেই প্রত্যখান
করলো খদ্দের এর নাচের প্রস্তাব,আরেক জনের জন্যে অপেক্ষা করছে সে।
মনে হলো,চলে যাওয়া ঐ তিনটা দিন তার অপেক্ষা ছিল শুধু ঐ লোকটার জন্য।আর কিছু চিন্তা করে সে নিজেকে সপে দিল ভাগ্যের খেলায়।কোন অভিযোগ ছিল না-সুখী সে,ঐ প্রাচুর্যতা প্রাপ্য তার,এ শহরটা তো ছেড়ে যাবে সে শীঘ্রীই।সে জানে ভালবাসার কল্পনা করার প্রশ্নই আসে না,জীবনের এ সময়টা চাওয়ারই বা কি আছে?
রালফ একটা ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল,মারিয়া দিল একটা ককটেল ফল রসের অর্ডার।বারের মালিক কিছুটা অবাক হয়েই ভাবছিল,কি ভাবে বদলে গেল মেয়েটা।ভাবছিল যেন শুধু বসে বসে ড্রিঙ্ক না করে,আশ্বস্ত হলো কিছুটা, যখন নাচতেগেল তারা।নতুন কোন কিছুই করছিল না তারা,তার চিন্তার কোন কারণ ছিল না তাই।
রালফের হাত দুটো ছিল মারিয়ার কোমরে,গালটা ছুঁয়ে যাওয়া তার গাল,গানের সুরটা বেশ উঁচু সুরে-কথা বলাটা ছিল নিষ্প্রয়োজন।ফলের রসের ককটেল আর কতটুকু সাহসই বা এনে দিবে,অন্ততঃ সাজিয়ে কথা বলার মতন নয়।এখন শুধু সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াঃতারা কি হোটেলে যাবে?যৌনবিহারে কি মত্ত হবে তারা?খুব একটা কষ্টকর তেমন কিছু হবে না,সে তো বলেছে শরীর সমন্ধে তার কোন কৌতুহল নেই,আবার অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করলে শরীরের অভাব সরিয়ে নেবে আবেগের আকাশ।ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না সে,কেন নিজেকে সে ঠেলে দিচ্ছে ঐ যন্ত্রনার দিকে।
একটা ভাল মা এর মত ব্যাবহারটা হবে তার,রালফ হার্ট যন্ত্রনায় ভেঙ্গে পড়া আরেক পুরুষ।তার চরিত্রটা সে যদি কোপাকাবানায় শেখায় ঠিকমত অভিনয় করে,চিন্তার কিছু নেই।তবুও কেন জানি বেশ বিপদজনক ঐ মানুষটার ছোঁয়া,শরীরের গন্ধটা-সে যেন যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করে আছে তার জন্যে।
“সারা রাত্রিটা কাটাতে চাই তোমার সাথে,তিনজন খদ্দেরের পয়সাটাই আমি দেব,চিন্তা করো না”। বারের মালিক ঘাড়টা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল,বুঝতে পারলো ব্রাজিলের মেয়েটা ভালবাসার খাঁচায় আটকে পড়া।অবাক মারিয়া এটা দেখে যে বেশ্যাবৃত্তির আইনকানুনগুলো রালফের বেশ ভালই জানা।
“আমার বাড়িতে চল”।
সেটাই ভাল হবে ভাবলো সে,যদিও তা মিলানের দেওয়া সব উপদেশের বাইরে,কিন্ত এ ক্ষেত্রে না হয় হলো সেটা ব্যাতিক্রম।জানা যাবে সে বিবাহিত কি না,তার প্রাচুর্যতা,খ্যতির বহরটাও বোঝা যাবে,কোন একদিন খবরের কাগজে লিখতে গিয়ে নামকরা ব্যাক্তিদের খাতায় তার নামটাও তুলে ধরা যাবে।
“অদ্ভুত একটা কারণ নিজেকে বোঝানোর জন্যে”।
ঘন্টা আধেক পরে জেনেভার কলোগনী নামের একটা ছোট এলাকায় পৌছালো তারা,গীর্জা,
বেকারী,অফিস আদালত,সবই সাজিয়ে বসানো,একটা দোতালা বাড়ী,কোন এর্পাটমেন্টে না।বুঝলো বেশ ধনীই লোকটা,দ্বিতীয়ত বিবাহিত হলে সে নিশ্চয় একটা বারবনিতা বাড়ীতে নিয়ে যেতে পারতো না।
তা হলে ধনী আর একা।
একটা হল ঘর,সিড়িটা ছাড়িয়ে হেটে গেল তারা দোতালায়।পেছনের ঘরটা বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকা।একটা ঘরে বেশ বড় একটা খাবারের টেবিল,দেয়াল ভরা ছবির পর ছবি।আরেকটা ঘরে সোফা,চেয়ার,বইপত্র,পড়ে থাকা ময়লা গ্লাস,এশট্রে উপচে পড়া সিগারেট।
“কফি খাবে”?
মাথা নেড়ে মারিয়া অসম্মতি জানালো।
“আমাকে অন্যভাবে বিচার করার সময় হয়নি এখনও।আমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি,যা ভেবেছি তার উল্টোটা করে যাচ্ছি।আমি একটা পতিতা,বন্ধু,মায়ের চরিত্রেই সাজিয়ে নেই নিজেকে।যদিও আমার মনে আমি একটা মেয়ে যার দরকার স্নেহ,আদর।কিছুক্ষন পর না হয় কফি হবে”।
“কফি হবে বাগানের ধারে আমার ষ্টুডিওতে,ওখানে বই,ছবিগুলোতে ছড়িয়ে আছে আমার সারা মনটা,আমার স্বপ্নগুলো”।মারিয়া ভাবছিল তার নিজের থাকার জায়গাটা,পেছনে কোন বাগান নেই,কোন বই নেই ঘরে,লাইব্রেরী থেকে ধার করে আনা কটা বই ছাড়া,বই কিনে পয়সা নষ্ট করার মত প্রাচুর্যতাও তার নেই।কোন ছবি সাজানো নেই দেয়ালে,সাংহাই সার্কাস দলের একটা পোষ্টার ছাড়া(ভবিষৎ এ সার্কাসটা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা তার)।
হুইস্কীর একটা বোতল হাতে তুলে নিয়ে রালফ,আমন্ত্রন করলো তাকে।
“না ধন্যবাদ”।
নিজে ঢেলে নিল রালফ কিছুটা গ্লাসে-এক চুমুকেই সবটুকু ঢেলে দিল গলায়।মজা করে জ্ঞানগর্ভ কথা বলা আরম্ভ করলো,ভঁয় মারিয়ার,সে তো জানেই কি হবে-এরপর এখন যে তারা একা।
পরিস্থিতিটাকে কিছুটা আয়ত্বে আনার চেষ্টা করলো মারিয়া,আরও কিছু হুইস্কী ঢেলে নিল রালফ,বেশ অসংলগ্ন কথাবার্তা তার,
“তোমাকে বড়ই দরকার আমার”।
নিস্তব্ধতা,বাতাস ছুঁয়ে যাওয়া নিস্তব্ধতা চারপাশে,ভেঙ্গে দিও না ঐ নিস্তব্ধতা,দেখাই যাক না,কি ঘটে।
“তোমাকে দরকার আমার,তোমার ঐ স্বর্গীয় আলোটা দরকার আমার,হয়তো তুমি ভাবছ কথার নেশায় মাতাল করতে চাচ্ছি তোমাকে।জিজ্ঞাসা করো না, ‘কেন আমি।এমন কি বিশেষত্ব খুঁজে পেলে আমার মধ্যে’?তোমার মাঝে বিশেষ তেমন কিছু নেই,অন্ততঃ চোখে পড়ে নি,তবুও অদ্ভুত একটা রহস্য লুকোনো-আর কোন কথা মনে আসছে না আমার”।
“কিছুই জানার ইচ্ছা ছিল না,আমার”,মিথ্যাটাই বললো,সে।
“আমি যদি একটা কারণ খুঁজতে চাই,তা হলে আমি বলবো,আমার সামনে বসে আছে একটা মেয়ে,জীবনের চড়াই উতরাই জয় করা যার,নিজেকে এক সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে,হয়তো তবুও সম্পুর্ন ব্যাখাটা হয়তো দেয়া হবে”।
পালানোর কোন উপায় ছিল না,আমার।থেমে থাকেনি রালফ,বলে গেলঃ
“আমার কথাগুলো কি?ছবিগুলো,আমার সৃষ্টি,পৃথিবীর গ্যালারীগুলো অধীর আগ্রহে যার জন্যে অপেক্ষা করে থাকে।আমার স্বপ্নগুলো সার্থক,আমার গ্রামের লোকজনের কাছে তাদের প্রিয় সন্তান,ছেঁড়ে আসা বৌদের কাছে আমি আজও প্রিয় মানুষ,স্বাস্থ্যের সমস্যা নেই কোন,দেখতে শুনতে খারাপ নই,একটা মানুষের চাওয়াগুলো…।অথচ আমি নিজেই একটা মেয়েকে বলছি,যার সাথে দেখা এক ক্লাবে,একটা বিকেল কাটানোর জন্যে, ‘তোমাকে দরকার আমার,একাকীত্ব কি অভিশাপ,জানা নেই’।
“আমি জানি”।
“না,জান না তুমি একাকীত্ব,প্রতিনিয়ত আমন্ত্রনে একাকীত্ব,ককটেল পার্টিতে,থিয়েটারের প্রিমিয়ারে…মেয়েরা যখন পাগল তোমাকে নিয়ে,অবাক হয়ে যায় তোমার আঁকা ছবি দেখে,তবুও তুমি একা।এমন কি তারা সুন্দরী,বুদ্ধিমতী,শিক্ষিতাও।কিন্ত কেন জানি আমার ভেতরে লুকোনো কেউ দূরে ঠেলে দেয় বলে, “যেও না,ওখানে ঘর নেই তোমার।
সময় কাটবে শুধু,খুঁজে পাবে না নিজেকে ওদের আনন্দে।বাড়িতে বসে,নিজের ষ্টুডিওতে,
আলোটা খুঁজি,তোমার মাঝের আলোটা,আমাকে নতুন করে নিয়ে গেল আমার পুরোনোয়”।
“তোমাকে এমন কি দিতে পারি আমি,যা তোমার নেই”?
কিছুটা লজ্জা পেল সে অন্যান্য মেয়েদের কথায়,ভুলে যাওয়া উচিত হবে না পয়সা দিয়ে তাকে সাথে এনেছে সে।আরও কিছুটা হুইস্কী ঢেলে নিল,সে।মারিয়া কল্পনায় যোগ দিল তার সাথে,মদের ঝাঁঝ গলায়,পেটের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল হয়তো,ধীরে ধীরে মারিয়াও বেশ মাতাল,মদ না খেয়েই।
বললো রালফ,তেমন জড়ানো না কথাগুলো,
“ভালবাসা কেনা যায় না,তোমার ভালবাসা কিনে নিতে পারবো না,কিন্ত যৌনবিহার,শরীর নিয়ে অনেককিছুই বলেছ আমাকে।আমাকে শেখাও শরীরের কথা,শরীরের গানগুলো,না হয় শেখাও আমাকে ব্রাজিলের জানাগুলো।যাই হউক না কেন,আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই,শুধু তোমার সাথে”।
তারপর।
“ব্রাজিল বলতে শুধু দুটো শহর জানি,আমার জন্মের শহরটা আর রিও ডি জেনোরো,
আর শরীরের কথা বলছো,কিইবা শেখাবো তোমাকে,তেইশ বছর বয়স আমার,তুমি
না হয় আরও ছয় সাত বছরের বড়,জীবনটায় শেখা তোমার এমন কিছু নয়।পুরুষেরা আমাকে পয়সা দিয়ে নিয়ে যায় তাদের চাওয়াগুলো পূরন করার জন্যে,আমার চাওয়াগুলো তো সেখানে কোন চাওয়া নয়”।
“আমার জীবনে পুরুষের কল্পনার এমন কিছু নেই যা আমি করিনি,একটা মেয়ে,দুটা মেয়ে,
এমন কি তিনটা মেয়ে একসাথে নিয়ে যৌনবিহার করেছি,মনে হয় না তেমন কিছু একটা শিখেছি আমি”।
আবার একটা নিস্তব্ধতা,এবার মারিয়ার কথা বলার পালা,তবে সে কোন সাহায্য করলো না মারিয়াকে,যেমন সে ও সাহায্য পায়নি কোন।
“তুমি কি চাও আমাকে একজন পেশাদার হিসেবে”?
“আমি চাই তোমাকে যে ভাবে বলবে তুমি”।
না,সেটা সে বলবে না,যদিও তাই শোনার ইচ্ছা ছিল তার।ফিরে এলো তার মনের যুদ্ধ,
আগ্নেয়গিরি,এলোমেলো করে দেয়া ঝড়টা।নিজের ফাঁদ থেকে তার নিজেরই রক্ষা পাওয়া অসম্ভব,না পেয়েই মানুষটাকে হারাবে সে।
“মারিয়া,আমি বলতে চাচ্ছি,কিছু একটা শেখাও আমাকে।হয়তো রক্ষা করবে আমাকে,
একজনকে উদ্ধার করবে তুমি।ঠিকই বলেছ যদিও মাত্র আমি বছর ছয় ছাড়ানো তোমাকে,তবে আমার অভিজ্ঞতা হাজারো জীবনের।আমাদের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন ধরণের,কিন্ত হতাশ দুটো মন হয়তো খুঁজে নিতে পারে শান্তি,মিলনে”।
কেন কথাগুলো বলে যাচ্ছে সে?ওটাতো অসম্ভব,তবে ওটাই যে সত্যি।একবার মাত্র দেখা হয়েছে তাদের,তবু সন্দেহ নেই তাদের দুজনার দরকার দুজনাকে।তাদের সম্পর্কটা যদি চলতে থাকে,তবে সেটা ভয়ানক হবে দুজনার জন্যেই।মারিয়া তো কোন বোকা মেয়ে না,জীবনের অভিজ্ঞতা,পড়াশোনা কিছুটা জানা আছে তার, জীবনের লক্ষ্যটাও তো যে সাজিয়ে নেয় নি তা নয়, ‘আলো ভঁরা’ মনটা,কি লুকিয়ে আছে কোথাও।
ক্লান্ত সে এই নিজের চেহারায়,ব্রাজিল হয়তো পরিবর্তন আনতে তার একঘেয়িমেতে।রালফ হার্ট দেখেছে জীবনের হাজারো ঝড়,আকাশ ছোঁয়া জ্ঞান আছে হয়তো,আবেদনা জানাচ্ছে এই বেশ্যার কাছে,তাকে উদ্ধার করার জন্যে।অবিশ্বাস্য!অন্যান্য পুরুষ যাদের এ ধরণের চিন্তাধারা,আনতে পারেনা লিঙ্গের দৃঢতা,কেউ কেউ খুঁজে মায়ের সান্তনা,কেউ খোঁজে একজন ঘরনী,কেউ খোঁজে তাদের সন্তানের মা।আজ পর্যন্ত তার সাথে সেই “বিশেষ খদ্দের”এর সাথে দেখা হয়নি,জানা নেই পৃথিবীর মানুষের মনে লুকোনো উদ্ভট কল্পনাগুলো।কেউ তাকে বলে নি কোনদিন, “আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে”,বরং মারিয়াকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছে তারা।
টাকা রেখে যায় লোকজন,তবে চুষে নেয় জীবন শক্তিটা।তাদের একজনও যদি ভালবাসা খুঁজতো,যৌনবিহার হতো যদি খোঁজার এক পর্ব,কি চাওয়াটা হতো তার?তার মনটা কি চায়,
কি হবে সে প্রথম সাক্ষাতে।
কি চায় তার মনটা?
“আমার উপহার চাই একটা,সুন্দর একটা উপহার”।
ঠিল বুঝে উঠতে পারলো না,রালফ হার্ট,উপহার-কি বলতে চাইছে মেয়েটা?হিসেব মত সে রাতের পয়সা তো আগেই দিয়েছে।উপহার,কি বলতে চাইছে মেয়েটা?
মারিয়া অনুভব করলো,ঐ মুহুর্তে নারীর মোহিনী দায়িত্বটা।তার হাতটা ধরে তাকে নিয়ে গেল সে বসার ঘরে।
“শোবার ঘরে যাব না,আমরা”।
নিভিয়ে দিল এক এক করে কটা বাতি,মেঝেতে বসে,ডাকলো তাকে সামনে বসার জন্যে।ঘরটায় একটা ফায়ার প্লেস ছিল,
“আগুনটা,জালিয়ে দাও”।
“কিন্ত এটাতো গরম কাল”!
“জ্বালিয়ে দাও আগুন,তুমিই না বলেছ হাত ধরে তোমাকে নিয়ে যেতে স্বপ্ন রাজ্যে”।
চোখগুলো বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো,খুঁজে পায় যেন লুকোনো, “আলোটা”।
নিশ্চয় দেখেছে আলোটা সে আবার,বাগানে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কাঠ নিয়ে এলো সে,খবরের কাগজ যোগাড় করে আরম্ভ করলো আগুন জ্বালানো।রান্না ঘরে আরও কিছু হুইস্কী আনতে গেল,মারিয়া তাকে ফিরে আসতে বললো।
“তুমি কি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ,আমি কি চাই”?
“না,জিজ্ঞাসা করিনি আমি”।
“জান,তুমি যার সাথে আছ,তার অস্তিত্বটাও তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে।তার কথাটা ভাবতে হবে,সে কি চাইছে,হুইস্কী,জিন না কফি।জিজ্ঞাসা করো তাকে,সে কি চায়”?
“কি খেতে চাও,তুমি”?
“মদ,লাল মদ,আমি চাই তুমিও আমার সাথে খাবে”।
সূত্রঃ চতুর্মাত্রিক।
তারিখঃ মার্চ ০৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,