অনুবাদে: ইললু।
(১৪)
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে টেরেন্স ভাবছিল,বেশীর ভাগ লোক বুঝে উঠতে পারবে না তার চিন্তাধারার ধরণটা।ওটাই তো ভাল,সাধারণ না হয়ে অসাধারণ,অস্বাভাবিক হয়ে বেঁচে থাকাটায় মন্দ কি?টেরেন্সের মনে পড়ে তাদের বিয়ের সাধারণ চেহারা থেকে অলৌকিক এক চেহারায় পরিবর্তনের পর্বটা।বৌ এর কাছে অজানা ছিল নাতার জেনেভার গল্প,ব্যাস্ততার ফাঁকে,আনন্দের ছোট্ট আকাশটা তো টেরেন্সের প্রাপ্য,মনে মনে এটা মেনেই নিয়েছিল,সে।
যে মেয়েটা কিছুক্ষন আগে ঘরটা ছেড়ে গেল,তাকে বুঝতে কষ্ট হয়নি টেরেন্সের।
তার দরকার মেয়েটাকে-সে চায় তাকে সাচর মাসোচের “venus in furs”,কত্রী,অত্যাচারী মহিলা হিসাবে।কোন দয়ামায়া নেই,জানে শুধু যন্ত্রনায় আরেকজনকে শরীর সুখে মাতাল করে দিতে।যদি সে মেয়েটার মাঝে পরিবর্তন আনতে পারে,তা হলে হয় তো তাদের মনের যোগাযোগটা একটা অসম্ভব হবে না।
মারিয়ার ডাইরীর লেখা,ভদকায় মাতাল,আনন্দে হারানো মেয়েটার গল্পঃ
“আমার যখন হারানোর কিছু ছিল না,তখন আমার ছিল সবকিছু।নিজেকে হারিয়ে ফেলার মাঝেই খুঁজে পেলাম নিজেকে।অসহায়,আত্মসর্মপনের চেহারাটা-আমাকে দিয়েছে সম্পূর্ন স্বাধীনতা।জানি না ওটা কি স্বপ্ন,নাকি হঠাৎ থমকে যাওয়া একটা স্মৃতি,নাকি মানুষের যা ঘটা শুধু একবারই।এ অভিজ্ঞতা আমার জীবনে তেমন প্রয়োজনীয় কিছু একটা না,তবে আমি জানতে চাই কতদূর ছোটা যায় ও দেশটায়।
ব্যাথা বেদনায় অবশ্যই কিছুটা ভঁয় পেয়েছিলাম,তবে আমার অপমানের তুলনায় তো সেটা কিছুই না।যৌনসুখের চরম আনন্দ এই প্রথম আমার,যদিও অনেক পুরুষ অনেক ভাবেই ব্যাবহার করেছে এ শরীর,তবে ও সুখ তো দুরের কথা,শুধু বিষন্ন স্মৃতিই ছড়িয়ে আছে মনে,আছে হতাশার চেহারা-ওটাই কি পৌঁছানো বিধাতার কাছাকাছি।মনে পড়লো লোকটার কথা,বিধাতার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করায় খুঁজে পাওয়া যায় চরমসুখ-নিজেকে সপে দেয়ায়,মাথা নিচু করে দেবতার আর্শীবাদ নেয়ায় ।আমি তো সভ্যতার উদ্ধার করতে যুদ্ধে নামিনি,শুধু ঘটনা চক্রে আমার উপস্থিতি সেখানে।শরীরের খেলাটা আনন্দ অর্জন সব কিছু বর্জন করায়”।
০০০০০০০০০
এবার থিয়েটার না একটা রেল ষ্টেশনে রালফ,ওখানকার পিৎজাটা মারিয়ার খুব পচ্ছন্দ-কোন কোন সময় একটু উচ্ছৃখল হতে দোষ কোথায়।রালফের দেখা দরকার আগুনের ছটায়,মদের নেশায় ভালবাসার দেশ ছাড়া বদলানো মেয়েটাকে,নতুন চেহারায়-যে সারাটা দিন ভাবেনি রালফের কথা।
জীবনের অনেক অজানাই এখন তার জানা,বুঝে উঠতে পারছে না মারিয়া,কি করা উচিত-বসে থাকা লোকটা হয়তো ভাবছে কখন তাকে ঘরে নিয়ে যাবে,রাতের সঙ্গী হিসেবে।ক্লাবে এসে যখন,সে ড্রিঙ্ক এনে দিল,বলা উচিত ছিল ব্যাস্ত,সময় নেই।কিন্ত পারে নি,তারও কথা বলার লোকের দরকার,মনের যুদ্ধের কথাগুলো বলা দরকার কাউকে।সহকর্মীদের সাথে কথা বলার চেষ্টায় তেমন একটা কাজ হয়নি,তারা তো একে অন্যের প্রতিযোগী।মারিয়ার জানা পুরুষদের মধ্যে রালফ হার্টই মাত্র যে তার মনের যুদ্ধটা বুঝতে পারবে।তবে সে তো ভালবাসার জোয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছে,হয়তো তাকে কিছু না বলাটাই ভাল।
“তুমি ব্যাথা,বেদনা,যন্ত্রনা,যৌনসুখ সমন্ধে কি জান”?
উত্তর পেল সাথে সাথেই,মারিয়া অবাক হয়ে ভাবলো একমাত্র সেই কি যার জানা নেই ঐ অবিশ্বাস্য পৃথিবীটা?
“আমি যুদ্ধ করেছি জীবনের অন্ধকারের সাথে,সরিয়ে দিয়েছি মনের পিশাচ ভাবটাকে”।
রালফ থেমে থাকেনি, “ও পথটা আমার অজানা নয়,আমিও হাত বাড়িয়েছি অন্ধকারের গভীরতায়,জানার ইচ্ছা ছিল জীবনের ঐ অজানায় লুকানো সুখ।তোমার সাথে যখন দেখা হলো রাতে,খুজেছি ভালবাসার উচ্ছ্বাসখুজেছি আমার চাওয়ার চরম প্রান্তে,খুঁজিনি ব্যাথা বেদনার অন্ধকার।তোমার মনে লুকিয়ে আছে অনেক আনন্দের আলো,যা অন্যকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারে”।
“খুঁজে নাও সেই মনের আলো,ছুটে যেও না অন্ধকারের ব্যাথা যন্ত্রনার আনন্দে”।
সাহস হারানো মারিয়া,একটা ট্যাক্সি ডেকে ড্রাইভারকে বললো,লেকের ধারে এপার্টমেন্টে
যাওয়ার জন্যে,চেনা পথটা তবু ভুলে গেছে সে,যেন হাজার বছর আগে হেঁটে গেছে ও পথে।বুঝতে পারলো মারিয়া অনেক কিছুই হারানোর আছে তার,তখনও বেশ কিছুটা মাতাল রাতের ভদকায়।
যদিও গরমকাল তবে রাতের দিকে বেশ কিছুটা হাল্কা শীত।মারিয়া লেকের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় জিজ্ঞাসা করলো, “কি করছি আমরা এখানে,ঠান্ডা লেগে যেতে পারে,বাতাসও আছে বেশ”।
“ভাবছিলাম,তুমি ট্রেন ষ্টেশনে যে প্রশ্নটা করলে,যন্ত্রনার সাথে আনন্দের যোগাযোগটা কোথায়।
হয়তো এ ভাবে কিছুটা বুঝতে পারবে,তোমার জুতাটা খুলে ফেল”।
মারিয়ার মনে পড়লো এক খদ্দের যৌনসুখ তাকিয়ে খুঁজে পেয়েছিল তার পায়ের সৌন্দর্যে,
মাতালের মত আদর করে যাচ্ছিল,পায়ে।যৌন অভিযানের আকাশটায় কতই না পাগলামি মানুষের।
“ঠাণ্ডা লেগে যাবে”?
“আমি যা বলছি তা কর।তাড়াতাড়ি হেঁটে গেলে কিছুই হবে না।বিশ্বাস কর আমাকে,আমি যে ভাবে বিশ্বাস করলাম তোমাকে”।
মারিয়া বুঝতে পারলো রালফ তাকে সাহায্য করতে চাচ্ছে,হয়তো কোন এক সময় নিজেই গিলেছে বিতৃষ্ণার জল,তাই চায় না সে একই পথে ভেসে যায় মারিয়া।তার সাহায্য চায় না মারিয়া,খুজে পাওয়া জগতটায় যন্ত্রনাই যে আনন্দের আকাশ।ব্রাজিলের কথা মনে পড়লো তার,ব্রাজিলে এমন কাউকে হয়তো খুজে পাওয়া সম্ভব নয়,যে হতে যন্ত্রনার সুখসঙ্গী।ব্রাজিল ছাড়া জীবনে আর কিছু ভাবতে পারে না সে,জুতো খুলে হাটা আরম্ভ করলো,ছড়ানো ছিটানো পাথরের কুঁচি,তার মোজাটা বেশ কিছুটা ছিঁড়ে গেল,অসুবিধা নেই কিনে নিবে আবার।
“জ্যাকেটটা খুলে ফেল”।
না বলতে চাইলেও গত রাতের পর হ্যা বলার অভ্যাসটা এসে গেছে তার মাঝে।জ্যাকেট খুলে হাঁটা আরম্ভ করলো মারিয়া,শীতের প্রভাব জানান দিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল তার শরীর।
“এখানে হাঁটা কি সম্ভব,পাথরের কুঁচি ছড়ানো চারপাশে”।
“আমি চাই তুমি অনুভব কর,পাথরের খোঁচা রক্তাক্ত করে দেবে তোমার পায়ের তলা।ওরা তোমাকে ঠিক একই ভাবে যন্ত্রনায় রক্তাক্ত করে তুলুক,যে ভাবে তুমি জ্বালিয়েছ আমাকে।তুমি
সুখ খুঁজে পেতে চাও যন্ত্রনার আকাশে-আমি সরিয়ে নিয়ে যেতে চাই সেটা তোমার মনের পাতা থেকে”।
মারিয়ার বলার ইচ্ছা ছিল, “ওটার কোন দরকার নেই’।
তবে কিছু না বলে হেঁটে যাওয়া আরম্ভ করলো সে,পায়ের তালুতে পাঁথরের খোঁচায় খোঁচায় একটা জ্বালা ছড়িয়ে যাওয়া তার শরীরে।
“একবার ছবির প্রর্দশনীতে জাপান গিয়েছিলাম,ঠিক যে সময়টা আমি আপনাতে মগ্ন
যন্ত্রনায় লুকানো আনন্দের রাজ্যে।ভেবেছি তখন ফিরে যাওয়ার আর কোন উপায় নেই,ধীরে ধীরে হয়তো আমি হারিয়ে যাব অন্ধকারের দেশটায়।
মানবজাতির উদ্ভব একটা অপরাধবোধ নিয়ে,ভঁয়ে অস্থির হয়ে পড়ি আমরা যখন আলোর কাছাকাছি পৌঁছোই।অদ্ভুত এক মানসিকতায় শাস্তি দিতে চাই নিজেদের,যন্ত্রনা দেয়ায় আনন্দ পেতে চাই আমাদের অসহায়তায়।পাপের প্রায়শ্চিত্ত,পাপের জন্যে শাস্তি,সেটাই তো হওয়ার কথা?তবে হয় না,সেটা যদি হতো তবে ভালই হতো”।
মারিয়া হেঁটে যাচ্ছিল,পায়ের ব্যাথায়,শীতের প্রচন্ডতায়,সে ছিল বেশ অন্যমনষ্ক।
“তুমি হেঁটে যাওয়ার সময় তোমার হাতের দাগগুলো দেখলাম”।
হাতের দাগগুলো লুকানোর জন্যে বেশ কটা চুড়ি পরেছিল মারিয়া হাতে,তবু লোকটার বিচক্ষন দৃষ্টি এড়াতে পারেনি,সে।
“তোমার অভিজ্ঞতা,তোমার আনন্দের অভিজ্ঞতা যদি বলে দেয় তোমাকে একই পথে ছুটে যাওয়ার জন্যে,আর কিছুই বলার নেই আমার”।
“কি বলছ তুমি,কোন পথে”?
“যন্ত্রনার আনন্দ,অতাচারের আনন্দ,সেটাকে যে ভাবেই বলা হউক না কেন,যদি তাই বেঁছে নিতে চাও দুঃখ পাব হয়তো,তবুও আমার কাছে তুমি সান্তিয়াগো হেঁটে যাওয়ার পথের আলো ছড়ানো সেই মেয়েটা।তোমার দেয়া কলমটা অমূল্য,আগুনের আলোর ছটা যখন এলোমেলো করবে আমাকে,তোমার কথাই মনে পড়বে।তবুও তোমাকে আর খুঁজে নিতে আসবো না আমি”।
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না মারিয়া কি বলা উচিত,ভাবছিল হয়তো সবজান্তা ভাব না দেখিয়ে মনের কথাগুলো বলাটাই ভাল।
“কদিন আগে,না,না গতকাল রাতে আমি অনুভব করেছি যা সম্পূর্ন আমার জ্ঞান ধারণার বাইরে,চরম একটা ভীতি ছড়ানো আমার মনে,আমি ছুটে যাচ্ছি এক অধঃপতনের কালো গর্তটায়”।
তেমন একটা যন্ত্রনা ছড়ানো ছিল না কথাগুলোয়,যদিও শীতের প্রভাবে দাঁতগুলো তার শব্দ করে নাড়াচাড়া করছিল।
“আমার ছবির প্রর্দশনী কুমানো নামের একটা ছোট্ট শহরে,সেখানে একজন কাঠুরে নাকি ছবিগুলো দেখে আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুঃখী একটা মানুষকে খুঁজে পেয়েছিল”,মারিয়ার কোন মন্তব্যের অপেক্ষা না করেই,বলে গেল রালফ, “পরের দিন হোটেলে এসে সেই কাঠুরে আমাকে প্রশ্ন করলো,আমি কি সুখী?যদি আমি নিজেকে সুখী মনে করি তবে বেছে নেওয়া পথটাই আমার জন্যে,না হলে কটা দিন তার সাথে সময় কাটানোর আমন্ত্রন জানালো সে। আমাকে পাথরের কুঁচি দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গেল সে,ঠিক আমি তোমাকে যে ভাবে বলে দিলাম।সে আমাকে দেখিয়ে দিল যন্ত্রনার সৌন্দর্য,তবে সেটা আত্মসর্মপনে নয়,প্রকৃতির অনুভুতিতে।সে বললো,ওটাকে বলে সি-জেন-ডু,বেশ প্রাচীন এক পদ্ধতি।
এটাও সে আমাকে বুঝিয়ে বললো যন্ত্রনা,ব্যাথায় কোন ভঁয় নেই আমার,সেটা খুবই ভাল,মনের আলো খুঁজে নিতে যে দেহটাকে আয়ত্বে আনা দরকার।বললো,আমি যন্ত্রনাকে ব্যাবহার করছি,আমার নিজের উদ্দেশে-যা ঠিক না।
কিছুটা অস্বস্তি যে আমার মনে ছিল না তা না,অশিক্ষিত এক কাটুরে শিখিয়ে দিচ্ছে আমাকে জীবনের রহস্য,তবে আনন্দ ছিল এটা ভেবে কেউ আমার ছবির অর্ন্তনিহিত ভাষাটা খুঁজে পেয়েছে”।
পাঁথরের খোঁচায় রক্তাক্ত পা এর ব্যাথায়, ক্ষিদের শরীর বুঝে উঠতে পারছিল না মারিয়া, কেন সে শুনে যাচ্ছে অযথার বকবকানি।থামতে চেয়েও তবু থামেনি সে।না থামার কারণটা জানা ছিল না মারিয়ার,তবে হয়তো ভেবে সেটা তো আর অনন্তকালের যাত্রা নয়।অদ্ভুত এক চিন্তায় মনটা বেশ কিছুটা অস্থির,রক্তাক্ত পায়ে,হঠাৎ যদি জ্বর হয়,কোপাকাবানা যদি আর যাওয়া না হয়।খদ্দেররা যারা তার অপেক্ষায় থাকবে,মিলানের কথা,উর্পাজনের টাকাগুলো যা পাবে না,তার খামারের স্বপ্ন,বাবা মা-কি হবে?কিন্ত যন্ত্রনা সরিয়ে নিয়ে গেল সেই চিন্তার স্রোত ছাড়িয়ে,মনে লুকানো রালফের সঙ্গের আমেজ,আর জুতোটা পরার ইচ্ছাটাও কম ছিল না।
নিজেকে মনে হলো,অচেনা আরেকজন,চেষ্টা করছিল মনটাকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আনার-হাতে শুধু দাগ না সেটা আর্বজনার গোলক ধাঁধা।মনোবলের আলোয় মারিয়ার বুঝতে কষ্ট হয়নি,যন্ত্রনায় আছে শুধু যন্ত্রনা ওখানে লুকোনো নেই কোন আলো বা অন্ধকার।
তবুও এগিয়ে যাচ্ছিল সে,যন্ত্রনার মেঘে ঢাকা তার মনটা,ঢেকে দেয়া তার আত্মাকে
এক কাল পর্দায়।নাম করা হোটেলে ভদকা,কাভিয়ার আর যোনীদ্বারে চাবুকের ছোঁয়াচ আর খালি পায়ে শীতের প্রচন্ডতায় রক্তাক্ত হওয়া,দুটো যে দু ধরনের অনুভুতি।
মারিয়া যেন জ্ঞানশক্তি হারানো,রালফ হার্টকে বলার মত কোন কথাই খুঁজে পেল না সে,সবকিছু হারানো তখন পাথরের কুঁচির যন্ত্রনার রাজ্যটায়।ব্যাথা বেদনা যখন সহ্যসীমা ছুঁয়ে যাওয়া,তার মনে হলো কিছু নেই ঐ সীমানা ছাড়িয়ে শুধু শূন্যতা,ভেসে থাকা,অনুভুতি হারানো এক অধ্যায়।এটাই কি সেই অনুতপ্ত হ্রদয়ের স্বর্গীয় যোগ?সে কি যন্ত্রনার চরম পর্যায়ে পেয়েছে অজানা সেই পথটা যা পাওয়া যায় শুধু-নিজের অহমিকা আর জাগতিক ভাব বির্সজনে।চারপাশটা তার স্বপ্নরাজ্য তখন,আলো হারানো বাগান,ঘুটঘটে অন্ধকারের লেক,সাথে হেঁটে যাওয়া মানুষটা,কোন কথা নেই,যার কাছে তার রক্তাক্ত পা,কষ্টে হেটে যাওয়াটা তেমন কিছুই না।অদ্ভুত একটা দেশে পৌছে গেল সে,কোন চাওয়া নেই সেখানে,অদ্ভুত শান্ত এক আকাশ।
যন্ত্রনার কথা বলে অনেকেi,কিন্ত শরীরটাকে নিয়ে গেছে সে শেষ সীমানায়,আত্মার অস্তিত্বে,
ছড়ানো আলো চারপাশটায়,অদ্ভুত এক শূন্যতা,হ্য়তো কেউ কেউ যাকে বলে স্বর্গ।যন্ত্রনা ভুলে যাওয়া মানুষ সেটা পেরিয়ে খুঁজে নিতে পারে তার নিজেকে।
সবকিছু হারিয়ে যাওয়া কিছুটা সময়,তারপর শুধু এটাই মনে পড়ে রালফ তাকে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।জ্ঞান হারিয়েছিল শীতে আর ব্যাথায়,কি যায় আসে তাতে,সুখী এটা ভেবে,ভঁয় পায়নি,লোকটার কাছে হেরে যায়নি,সে।
মিনিট ছাড়িয়ে ঘন্টা,ঘুমিয়ে পড়েছিল সে,জেগে দেখে একটা ঘরে এক কোনে একটা টিভি,কিছু নেই আর,সাদা রং এর শূন্যতায় ভঁরা।
গরম এক কাপ চকলেট নিয়ে ঢুকলো রালফ।
“ভালই হলো,তুমি পৌঁছে গেছ তোমার গন্তব্যে”।
“আমি চকলেট চাই না,এক গ্লাস মদ নিয়ে আস।আর চল নীচতলায় আগুন আলো ছড়ানো আমাদের ঘরটায়”।
“আমাদের” কথাটা সে বললো,নিজের অজান্তেই।পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো কয়েকটা কাটা দাগ ছাড়া তেমন একটা কিছু না,কদিনেই সেরে যাবে।একটু কষ্ট হলো,তবু নীচে হেঁটে গেল ধীরে ধীরেআর আগুনের পাশের গালিচায় গিয়ে বসলো,তার পচ্ছন্দের জায়গাটায় ।
“জান,কাঠুরে আমাকে বলেছিল শারীরিক পরিশ্রম জাগায় মনের শক্তি,তোমার মনের ‘আলোর’ সাথে তার তফাৎ নেই কোন।তোমার অনুভুতি তোমাকে কি বলে দিল”?
“ব্যাথা,যন্ত্রনা তো মেয়েদের চিরসঙ্গী”।
“ওটাই বিপদ”।
“আমি এটাও জেনেছি ব্যাথারও একটা সীমা আছে”।
“ওটাই মুক্তির আকাশ,ভুলে যেও না আবার”।
সবকিছু বোধগম্য হয়নি মারিয়ার,বেশ এলোমেলো মনটা-খুঁজে পেয়েছে শান্তির চরম,
সীমানার শেষটায় পৌঁছানো যখন তার।যন্ত্রনার আরেক চেহারা যা তাকে দিয়েছে অদ্ভুত এক আনন্দ।এর ফাঁকে রালফ বড় আকারের একটা ফাইল বের করলো,ভেতরে সাজিয়ে রাখা এক গাদা ছবি।
“বেশ্যাবৃত্তির ইতিহাস।মনে আছে,তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে আমাদের প্রথম দেখায়”।
সে জিজ্ঞাসা করছিল ঠিকই তবে সেটা কথায় সাজানো কথায়,এখন সেটা তার কাছে মুল্যহীন।
“এতদিন আমি শুধু অজানা এলাকায় হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম,ভাবিনি কোন ইতিহাস,সবাই জানে ওটা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো পেশা।তবে ইতিহাস আছে,শুধু একটা নয় দুটো”।
“এই ছবিগুলো কি”?
সূত্রঃ চতুর্মাত্রিক।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,