অনুবাদে: ইললু।
(ধারাবাহিক ১১)
“তুমি ঠিকই জান আমি কি চাই?ব্যাথা,বেদনা,আনন্দে ভাসিয়ে দিতে চাই আমি নিজেকে”।
‘আনন্দ,ব্যাথা,বেদনা একসাথে পাওয়া যায় না’,মারিয়া ভাবলো।তবুও বিশ্বাস করতে চাইলো,হয়তো পাওয়া সম্ভব,অন্ধকার আকাশে আলো খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করলো,ঐ অজানা সুর।হাতধরে তাকে জানালায় নিয়ে গেল টেরেন্স,দেখা যায় নদীর ওপারের গীর্জাটা।মনে পড়লো মারিয়ার রালফ হার্টের সাথে গীর্জাটার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার কথা।
“দেখছো-ঐ যে নদীটা,বাড়ী ঘরগুলো,গীর্জা,আবার ঐ যে জায়গাটাও?বদলায়নি তেমন,পাঁচশ বছর আগে ছিল,একই আছে,শুধু ছিল না কোন মানুষ সেখানে।বিশ্রী একট রোগ ছড়িয়ে মানুষ মারা যাচ্ছিল সারা ইউরোপে,কারণটা খুঁজে পাইনি কে,সবাই বলছিল,কালো মৃত্যু,বিধাতার শাস্তি-মানুষের অরাজকতা,ব্যাভিচারের জন্য।কিছু মানুষ ঠিক করলো তারা নিজেদের বলিদান করবে বিধাতার কাছে মানবতার স্বার্থে-উৎসর্গ করবে নিজেদের অন্যদের স্বার্থে।
তারা নিজেদের সপে দিল অত্যাচারে,বেদনায়-যা মানুষ সবচেয়ে বেশী ভঁয় পায়,সেই যন্ত্রনা স্বর্গীয় শক্তির মানসিক তুষ্টির জন্যে।শহরের রাস্তাগুলো দিয়ে হেঁটে যেত তারা নিজেদের চাবুক,শিকল দিয়ে মারতে মারতে,বিধাতার জন্যে তারা উৎসর্গ করলো তাদের নিজেদের শরীর,যন্ত্রনা ছিল তাদের পূজোর পর্ব।তারা আবিষ্কার করলো ঐ যন্ত্রনা অনেক বেশী আনন্দদায়ক প্রতিদিনের রুটি বানানোর চেয়ে,ঘরে জীবজন্তকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকার চেয়ে,সংসার জীবনে সাধারণ হয়ে থাকার চেয়ে।ব্যাথা,বেদনা,যন্ত্রনা তাদের কাছে ছিল আনন্দের একটা উপসর্গ,জীবনের আনন্দ খুঁজে পেল তারা বেদনার রাজ্যে”।
তার চোখ মুখে ফিরে এলো সেই ভয়াবহ প্রভাব,১৫০ ফ্র্যাঙ্ক তার ব্যাগে দিয়ে বাকীটা তুলে নিল সে।
“তোমার মালিকের কথা কোন কিছু চিন্তা করো,না,এই যে তার প্রাপ্য কমিশনটা।আমার প্রতিজ্ঞা রইলো,আমি কাউকে কিছু বলছি না”।
টাকাটা সাথে নিয়ে সে উঠে গেল।মদের আমেজ,আরব ভদ্রলোকের সাথে রেস্তোরার সময়,ক্লান্ত হাসির মেয়েটা,ভালবাসার নতুন একটা মুখ,মার কাছে লেখা একটা স্বপ্নিল জীবনের গল্প,পেন্সিল চাওয়া ছেলেটার চেহারা,মনের মাঝের যুদ্ধগুলো,খুঁজে নেয়া তার আকাশের সীমানা,পাওয়া না পাওয়া সূযোগগুলোর জগত ছাড়িয়ে নতুন এক মারিয়া এলো সেখানে,উপহার দেয়া নেই তার,বরং বলিদান করা দেয়ায় প্রস্তত নতুন এক মুখ।
“না আমার ভঁয় নেই আর,তুমি যা বলবে তাতে আমার আপত্তি নেই কোন।শাস্তি দিতে পার তুমি,বিদ্রোহী আমাকে।আমি তো ঠকিয়েছি যে মানুষটা ভালবাসে আমাকে”।
নতুন খেলার দেশে,নতুন খেলায়,ঠিক কথাগুলোয় বলছে যেন সে।
“হাঁটু গেড়ে বস”,গম্ভীর,ভারিক্কী সুরে বললো,টেরেন্স।
তাই করলো,মারিয়া-এ রকম ভাবে কোনদিন কারও আদেশ মেনে নেয়নি,জানে না ওটা খারাপ কি ভাল,শুধু জানার ইচ্ছা কি লুকোনো রহস্যের দেশে।নতুন একটা মেয়ে,নতুন এক চরিত্র জেগে উঠছে তার মধ্যে।
“শাস্তি পাবে তুমি,কঠোর শাস্তি,নিয়ম কানুনগুলো জানা নেই তোমার।তুমি জান না,শরীর খেলার নীতিকথা,জান না জীবনের গল্প,ভালবাসার সুর”।
দূটো ভিন্ন চরিত্র লুকিয়ে আছে যেন টেরেন্সের মাঝে,একজন পারদর্শী শরীর খেলার নিয়মগুলোয়,আরেকজন অত্যাচারী,শাস্তি দেয়ার ভিন্ন আরেক মুখ।
“নিশ্চয় তুমি জানতে চাও কেন করছি এটা,আমি?নতুন এক রাজ্যে আরেকজনকে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে আনন্দময় আর কিছু নেই।একজনের কুমারীত্ব হরণ করার আনন্দ না,শরীরের না-মনের কুমারীত্ব ছিনিয়ে নেয়ার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু আছে কি”?
বোঝার চেষ্টা করলো মারিয়া।
“আজকে তুমি যে কোন প্রশ্ন করতে পার,তবে এর পরের দিন নাটকের পর্দা যখন তোলা হবে,থামানো যাবে না-কোন কিছু,যদি থামাতে হয়,বুঝতে হবে এ খেলার সঙ্গী নই আমরা।
মনে রেখঃএটা একটা খেলা,এটা শরীর খেলার গল্পকথা।খুঁজে নিতে হবে তোমার নিজের মাঝে গভীরে লুকিয়ে থাকা মানুষটাকে।না খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত শুধু খেলে যাওয়া-জানা অজানায়”।
“কি হবে যদি ব্যাথা বেদনা আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়”।
“কোন ব্যাথা বেদনা থাকবে না,সবকিছু বদলে তোমাকে নিয়ে যাবে এক আনন্দময় স্বপ্নিল আকাশে।ওটা তো খেলার একটা অংশ,তুমি বলতে চাইবে, “আর সহ্য হয় না।থামাও থামাও আর পারি না যে”।…থেমে গিয়ে অন্য সুরে সে বললো,
“মাথাটা নীচু করে রাখ আর আমার দিকে তাকাবে না”।
মারিয়া হাঁটু গেড়ে,মেঝের দিকে তাকিয়া থাকলো।
“…যাতে কারও কোন শারীরিক ক্ষতি না হয়,তাই দুটো চিহ্নজনক শব্দ ব্যবহার করবো আমরা, “হলদে” মানে ব্যাথাটা অসহনীয় হয়ে উঠছে,কমাও-আর “লালচে”,মানে থামিয়ে দাও,সেই মুহুর্তেই”।
ভঁয়ের কথা,বিচলিত করে দেয়ার মত কথা,অজানা এক পৃথিবীর কথা,যেটা পচে যাওয়া,
নোংরামীতে ভঁরা,তবু থেমে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার-শরীরটা ভঁরা ভঁয় আর উচ্ছাসে।
টেরেন্স তার মাথায় হাত বিলিয়ে বললো,
“এখানেই শেষ”।
আদেশের সুরেই তাকে উঠে যেতে বললো,ভেতরটা নেড়ে দেয়া।মারিয়া জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে যাওয়া আরম্ভ করলো,তার অবস্থা দেখে টেরেন্স বললো,
“একটা সিগারেট খেয়ে যাও”।
“না,না,কিছু হয়নি,আমি ঠিক আছি”।
“কিছু হয় না,হওয়ার দরকার হয় না,তোমার মনটা,তোমার আত্মা যুদ্ধে এখন।আবার দেখা হবে যখন,মনটা তোমার প্রস্তত থাকবে,আমাদের খেলার জন্যে”।
“আজকের রাতটা কি ১০০০ ফ্যাঙ্কের উপযোগ্য ছিল”?
কোন উত্তর পেল না,সে ও একটা সিগারেট জ্বালিয়ে,সুরের আমেজে মদের গ্লাসে চুনুক দিতে থাকলো।নিজের বলাগুলোয় অবাক ছিল মারিয়া,
“ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,কেন আমি নিজেকে ঠেলে দিতে চাচ্ছি এই ঘূর্নিপাকে”।
“হতে পারে ১০০০ ফ্র্যাঙ্কের জন্য”।
“না তা নয়,অবশ্যই তা নয়”।
টেরেন্স উত্তরটা শুনে বেশ খুশীই হলো,যেন।
“মাঝে মাঝে আমিও ভাবি,সাদের মার্কুইসের(জমিদার)বলা কথাগুলো, ‘যদি আনন্দ খুঁজতে চাও তবে সীমানা ছাড়িয়ে যাও’।অফিসের কর্মকর্তা যখন রাগ দেখায়,স্বামী যখন স্ত্রীকে অযথা নাজেহাল করে,ওটা তার জীবনের ওপর প্রতিশোধ নেয়া।আমাদের জীবনে আমরা কোনসময় খুঁজে দেখিনা আমাদের নিজেকে,দেখতে চাইনা লুকিয়ে থাকা জন্তটাকে,জানতে চাইনা ভালবাসা,যৌন আনন্দ-লুকিয়ে অভিজ্ঞতার শেষ আকাশে।যুদ্ধ করে নিয়ে খুঁজে নিতে হয় সেই অভিজ্ঞতা,না হয় শুধু সময় কাটানো,ছুয়ে যাওয়া,দেখে যাওয়ার প্রতিদিন,জানা হয়না,কেন আসা আমাদের এ পৃথিবীতে”?
আবার শীতের রাতের রাস্তায়, হেঁটে যাওয়া একা।তবে কোন সন্দেহ নেই তার মনে,ঐ মানুষটা যা বলেছে সম্পূর্নই ভুল,নিজের মাঝের লুকোনো দেবতা খুঁজতে দরকার নেই খুঁজে নেওয়া দানবটাকে।কটা মাতাল ছেলে বের হয়ে আসলো একটা বার থেকে,নেশায় এলোমেলো কিছুটা,চোখেমুখে যৌবনের উচ্ছাস ছড়ানো,কিছুদিনের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ছাড়িয়ে নামবে জীবন যুদ্ধেঃতারপর চাকরীবাকরী,বিয়ে,সংসার,ছেলেমেয়ে,অসুখ,ভেঙ্গে পড়া শরীর,একাকীত্ব,
ওটাই কি বেঁচে থাকা?
কি ঘটে যাচ্ছে তার জীবনে?সেও তো খুঁজছে সুইজারল্যান্ডে বেঁচে থাকার আনন্দটা,নিজেকে কোন কিছু একটা অস্বাভাবিকতায় জড়িয়ে নেয়া তার কল্পনার বাইরে।খুব একটা কিছু বদলায়নি এর মধ্যে-কোপাকাবানাতে যাওয়া,নিষ্পাপ নিরীহ একটা মেয়ের খেলায় মানুষের সাথে যৌবন বিহারে মত্ত হওয়া,কোন সময় মায়ের চরিত্রে আবার।তবে ওটাই তো তার কাজ,সব কিছু এক দক্ষ কর্মীর মত চালিয়ে নেয়া তার কাজে।নয়টা মাস এ ভাবেই কাটানো তার দিনগুলো-জীবনটাকে নিজের আয়ত্বে ধরে রেখে শরীরের খেলা করে যাওয়া।এখন সে দেশে ফিরে যাওয়ার এ সময়টায় বুঝতে পারলো,সে ভালবাসতে জানে,কিছু পাওয়ার আশা না করেও।যেন নিয়তির তাকে শেখানো লুকোনো রহস্য-লুকিয়ে থাকা আলোটা যা সরিয়ে দেয়,যে কোন অন্ধকার।
মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়ে,টেরেন্সের সাথে দেখা হওয়ার পরঃ
“সাদের মার্কুইসের কথাগুলো শুনলাম,আমি জানি না সে কে,তবে তার কথাগুলো ঠিক-সন্দেহ নেই আমরা খুঁজে পাই নিজেকে,নিজেদের চরম অসহায় মুহুর্তে।তবে হয়তো ওটাও ঠিক না,
এক জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় না সব প্রশ্নের উত্তর,আমরা শুধু জ্ঞানের আকাশে ভেসে যাওয়ার জন্যে আসিনি এই পৃথিবীতে,জমির চাষ,বৃষ্টির জন্যে আকাশ খোজা,ওগুলো আমাদের আরেকটা অংশ।
আমার মাঝে লুকিয়ে আছে দুটো মেয়েঃ একজন খুঁজে নিতে চায়জীবনেরআনন্দ,আবেগ,
অভিযান,আরেকজন শুধু চলার পথের পথিক,নিয়মের ক্রীতদাস,সংসারের খেলার আরেকটা
মুখ।একজন সাধারণ গৃহস্ত্রী আর একজন বেশ্যা একই শরীরে,দুজন যুদ্ধ করে যাওয়া একে অন্যের সাথে।
ঐ দুজনের একসাথে দেখা হওয়াটা হবে এক ভয়ানক দৃশ্য,এক স্বর্গীয় নৃত্য।যখন দেখা হবে
আমাদের দুজনের,দুই দেবশক্তির,দুটো ভিন্ন পৃথিবীর সংঘর্ষন,যথাযথ পারস্পরিক সম্মান না থাকলে,সেটা হবে এক দূর্যোগের আকাশ”।
০০০০০০
তার অজান্তেই সে ফিরে গেল রালফ হার্টের ঘরটায়,খোলা আগুনের আলো,মদের বোতল,বসে আছে দুজন,তার তুলনায় গত রাতের অভিজ্ঞতা ছিল একটা দুঃস্বপ্ন।সে খোঁজা আরম্ভ করলো,তার
বেঁচে থাকার কারণ,কেন মানুষ আত্মসর্মপন করে কোন কিছুর পাওয়ার আশা না করেও।
বুঝতে পেরেছে,ভালবাসার সাথে কোন সম্পর্ক নেই-বিয়ে,সংসার,ছেলেমেয়ে,অপেক্ষা করা,ভেসে যাওয়া প্রতিদিনের গল্পে,এক সময় হারিয়ে যায় সেই স্বপ্ন খোঁজার স্বপ্নটা।দুটো লোকের দিকে তাকিয়ে দেখছিল সে,একজন যার কাছে নিজেকে সপে দিতে চায়,আরেকজন জানা নেই যার আসল চেহারাটা।
যেন সহজেই হাসছিল রালফ,যেন কোপাকাবানায় দাঁড়িয়ে তাকে বলছে মিউনিখের গল্প,মিউজিয়ামের এক তত্বাবধায়কের সাথে সাক্ষাৎ এর কথাগুলো।
“লোকটা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,জেনেভার মুখ দিয়ে সাজানো ছবিটা কবে পাবে?আমি বলেছি,মুখ্য চরিত্রের দেখা হলো এই কটা দিন আগে,ছবি আঁকছি এমন একটা মেয়ের-যার স্বর্গীয় আলোটা একটা চমক আনছে চারপাশের পৃথিবীতে।আমি তোমার সমন্ধে কাউকে কিছু বলতে চাই না-আমি চাই তোমাকে।আমি তোমাকে জড়িয়ে খুঁজে নিতে চাই-তোমাকে”।
চাওয়া!চাওয়া!চাওয়া!চাওয়া আছে সবার,কিন্ত চাওয়া খুঁজে পাওয়া যায় না,ওটাকে জাগিয়ে তুলতে হয়।
ভাবছিল মারিয়া,
“আমাকে চাও,আমি তো বসে আছি তোমার পাশেই।হয়তো তোমার জানার ইচ্ছা নেই আমাকে,জানার ইচ্ছা নেই শরীরের লুকোনো রহস্যটা।পয়সা খরচ করেছ তুমি,তোমার অধিকার আছে আমাকে ছুঁয়ে যাওয়া ইচ্ছামত,আমি তো তোমার খেলার পুতুল এখন”।
কালো একটা পোষাক তার গায়ে,অন্যান্য মেয়েরা মোটামুটি সবাই স্কার্ট পরে,শরীরের সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করে সবাই,কামনার জোয়ার যেন ছুটে আসে দেখার চোখে।তার কাছে মনে হয় সাধারণ পোষাকে ট্রেনে দেখা অফিস পাড়ার একটা মেয়েকে আবিষ্কার করার ঐ নগ্নতা সাজানো আনন্দের চেয়ে অনেক বেশী,আর্কষনীয়।
রালফ যেন তাকিয়ে আছে মারিয়ার দিকে,মনে হচ্ছিল চোখের দেখায় তাকে বিবস্ত্র করে ফেলছে লোকটা,আছে কোথাও এক রেস্তোরায় বা সিনেমার লাইনে।বলছে রালফ,“আমরা এক ট্রেন ষ্টেশনে দাড়িয়ে,চেনা জানা নেই আমাদের।হঠাৎ করে আমার চোখ ছুঁয়ে গেল তোমার চোখ,আমি সরিয়ে নেইনি নিজেকে।যদিও তোমার অনেক জানা,তুমি দেখতে পাও মানুষের মনের আলো,জান না তুমি কি বলছে তোমাকে,সেই স্বর্গীয় আলোটা”।
থিয়েটার সমন্ধে জেনেছে সে,ভুলতে চাইছে ইল্যান্ডের মানুষটাকে,কিন্ত সেই মানুষটা অজান্তে বলে দিচ্ছে তার কি করা,না করাগুলো।
বলে যাচ্ছিল,মারিয়াঃ
“আমার চোখ আটকে আছে তোমার চোখে,হয়তো আমি ভাবছি, ‘চেনা,চেনা মনে হয়’?হয়তো আমি অন্যমনষ্ক,হয়তো ভাব দেখাচ্ছি আমার কোন অনুভুতি নাই তো্মার প্রতি,হয়তো আমি তোমার চেনা,কিছুক্ষন নিজেকে ভাবার সময় দেই নিজেকে,বুঝতে পারি তুমি আমার চেনা না অচেনা”।
“এটাও হতে পারে আমি পুরুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য ঘুরছি,হয়তো অস্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ
থেকে সরিয়ে আনতে চাচ্ছি নিজেকে,হয়তো ভেঙ্গে পড়া মন নিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেন ষ্টেশনে।
হয়তো একটা রাত্রের জন্য আমি তোমার রাতের রানী হতে চাই,এক বেশ্যা খুঁজছি আমার রাতের খদ্দের”।
কিছুক্ষনের নিস্তব্ধতা,তারপর মারিয়া ফিরে গেছে আবার হোটেলের রুমে,মনে পড়ছে তার অপমানজনক পরিস্থিতিটা “হলদে”, “লালচে”,ব্যাথা,বেদনা আর আনন্দের সমুদ্র।
রালফ যেন বুঝতে পারলো পরিস্থিতিটা,সে আবার তাকে সে ফিরিয়ে আনতে চাইলো,ট্রেন ষ্টেশনে।
“এ দেখায় কি,তুমি আমাকে চাও”?
“জানি না,আমরা তো কথা বলি নি,তুমিও জান না”।
আবার কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে বললো,সে।
“কথাটা হলো আমি যদি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি,তুমি কি করবে তখন?তুমি কি এসে
কথা বলবে ,নাকি ভঁয় পাবে যদি তোমাকে অবজ্ঞা করি।আমি কি পুলিশ ডাকবো?না,
তোমাকে কফি খাওয়ার আমন্ত্রন জানাবো”।
“আমি মিউনিখে ফিরে যাচ্ছি” একটু অন্য সুরে বললো রালফ,এটা যেন প্রথম দেখা তাদের।
“ভাবছি আমি একটা এক্সজিভিশন করবো-শরীর নিয়ে,শরীর খেলার নানান রুপ নিয়ে,
লুকোনো চেহারাগুলো যা দেখা নেই অনেকের”।
নাটকের কথাগুলো জানা ছিল তার,মিলানের কাছে মারিয়া শুনেছে রালফও একজন বিশেষ খদ্দেরদের একজন।একটা ঘন্টা বেজে উঠলো তার মনের খাতায়।
“মিউজিয়ামের তত্বাবধায়ক জিজ্ঞাসা করেছিল,আমার ছবির বিষয়বস্তটা কি হবে?আমি বলেছি,এটা সেই সব মেয়েদের চেহারা নিয়ে যারা ভালবাসা বিক্রি করে জীবন চালায়।
তত্বাবধায়ক বললো, ‘না,না।সেটা তো ঠিক হবে না,আমরা তো তাদের বলি বেশ্যা’।
“বলেছি আমি,ঠিক আছে আমি,ইতিহাসটা পড়ে দেখবো তাদের,একটা পারিবারিক স্বাদ নিয়ে আসবো,আমার ছবি আঁকায়।এটা সংষ্কৃতির কথা-অসহনীয় একটা বিষয়কে সহনীয় করে তোলা।
মিউজিয়ামের লোকটার উত্তর ছিল, ‘শরীর বিক্রি এখন আর নিষিদ্ধ রাজ্য নয়,ওটা নিয়ে অনেকআলাপ আলোচনা,অনেক ছবি আঁকা হয়েছে,নতুন করার,নতুন কিছু একটা তুলে ধরার কি আছে আর’।আমি প্রশ্ন করলাম,জানা আছে তোমার মানুষের কামনার উদ্ভব হয়,কেমন করে?
তত্বাবধায়ক উত্তর দিল,’আমাদের অনুভুতি থেকে’।
বিজ্ঞানের চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলে সেখানে দেখার কিছু নেই।আমি বলতে চাই দর্শনের আকাশে,দেখতে চাই দার্শনিকের চোখে,আঁকতে চাই তুলির কবিতায়।একটা উদহারন জানতে চাইলো মিউজিয়ামের তত্বাবধায়ক।আমি ব্যাখা দিলাম,ট্রেনে আসার সময় যদি একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়,আমি যেয়ে তার সাথে কথা বলবো;আমরা অচেনা দুজন দুজনার কাছে,ক্ষতি কি একটা স্বাধীনতার আকাশ খুঁজে নিতে কিছুটা সময়ের জন্যে,তারপর ফিরে যাব না হয় স্বামী বা প্রেমিকা হিসেবে নিজের নিজের জায়গায়”।
“তোমার গল্পটা সুন্দর,তবে ওতে হারিয়ে যায় সব কামনা বাসনা”।
রালফ একটু হেসে সম্মতি জানালো।এর মাঝে শেষ হয়ে গেছে এক বোতল মদ,ফিরে গেল সে রান্নাঘর থেকে আরেকটা বোতল নিয়ে আসার জন্যে।মারিয়া তাকিয়ে ছিল আগুনের আলোতে,
পারিপার্শকতার আমেজে হারিয়ে,ভুলে গেছে ইংলিশ লোকটার কথা,ভুলে গেছে সর্মপণে খোঁজা আনদের আকাশ।
রালফ মদের গ্লাস দুটো ভঁরে দিল আবার,মারিয়া জিজ্ঞাসা করলো,
“আমার জানার কৌতুহল,তোমার মিউজিয়ামের তত্বাবধায়কের গল্পের শেষটা হবে কেমন করে”?
“আমি ছিলাম একজন বুদ্ধিজীবির সাথে,তাই আমার এখানে প্লেটোর দর্শনের উদ্ধৃতি দিয়ে কিছু একটা বলাই মানানসই।প্লেটোর মতে,আমরা দেখছি যে পুরুষ,নারী এখন-সৃষ্টির আদিকালে তেমন ছিল না।ছোটখাট বেটে একটা চেহারায়,একই শরীরে সাজানো দুটো মাথা,সাজিয়ে একটার পেছনে আরেকটা।চারটা হাত,চারটা পা,একপাশে লিঙ্গ,একপাশে যোনী,যৌন আনন্দ খুজে পেত তারা নিজেতে নিজেই।
কিন্ত গ্রীক দেবতারা হয়ে পড়লো বেশ ঈর্ষানিত,কেননা চার চোখের দুই মুখের জীবটার শুধু কাজ করার ক্ষমতা ছিল না অনেক বেশি,সংসার বাড়িয়ে নেয়ার জন্যে তারা তো নিজেরাই স্বয়ং সম্পূর্ন।তাদের ক্ষমতা যেন দেবতাদেরো ছাড়িয়ে যাওয়া।জুস,গ্রীক দেবতাদের নেতা,অল্পিয়াসের রাজা বললো,’আমার একটা পরিকল্পনা আছে যাতে ওরা হারিয়ে ফেলবে ওরা তাদের শক্তির বিরাট একটা অংশ’।
তার হাতের বজ্রপাত দিয়ে জুস কেটে ফেললো,আদি মানুষ(জীবটাকে) দুই ভাগে।এটাই হলো পুরুষ,নারীর সৃষ্টির রহস্য,এ ভাবেই পৃথিবীর আদি লোকসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল।আর সৃষ্টির প্রথম সৃষ্টি,জানি না এটা ছাড়া তাদের আর কি বলা যায়,দিশেহারা হয়ে খুঁজে বেড়ানো আরম্ভ করলো হারিয়ে যাওয়া শরীরের আরেকটা অংশ,ফিরে পেতে চাইলো তাদের পুরোনো শক্তি।সেই ভাগ হয়ে যাওয়া দুই শরীরের মিলন মেলায় ই হলো সঙ্গম-যৌনসঙ্গম,সেই এক হওয়ার ইচ্ছা”।
“এটা কি সত্যিই এভাবে বলা,না তোমার বানানো”?
“বানানো হবে কেন,গ্রীক দার্শনিক ল্পেটোর কথায়”।
মারিয়া চোখ দুটো তখন তাকিয়ে রালফের দিকে,আগের রাতের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ন হারিয়ে গেছে তার মন থেকে।তার সামনে বসে আছে সেই মানুষটা যে ছড়িয়ে পড়া “আলোর ছটা”, খুঁজে পেয়েছে তার চোখ ভঁরা আলো,শুধু কামনার বস্ত না সে,তার কথায় চাওয়ায় ছিল না কামনার কোন চিহ্ন।
“তোমার কাছে একটা প্রশ্ন করতে পারি”?রালফ মাথা নেড়ে জানালো,যে কোন প্রশ্নই করতে পারে সে।
“তোমার কি মনে হয় না চার পেয়ে জন্তটাকে দু ভাগ করার পর তাদের মনে হতে পারে না,একত্রিত হওয়া আর কিছু না,একটা দেয়া নেয়া,যা হয়তো তাদের শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়ার চেয়ে বরং কমিয়ে এনেছে”।
“তুমি শরীরের ব্যাবসা,বেশ্যাবৃত্তির কথা বলছ”?
“হ্যা,তাই,খুঁজে দেখ,হয়তো সৃষ্টির আদিযুগে,সঙ্গম-যৌনবিহার ছিল একটা পবিত্রতা,যা মানুষকে অর্জন করে নিতে হতো”।
“তুমি যদি বল,”রালফ উত্তর দিল,“আমি আগেও ভেবেছি ওটা নিয়ে,অনেকেই ভেবেছে তা
নিয়ে,তবে ও ব্যাপারে কোন বিশেষ মন্তব্য,কোন লেখা বইপত্রও আছে জানা নেই আমার”।
কিছুটা অধৈর্য হয়েই মারিয়া বললো,“তোমার কি এটা কোনদিন মনে হয়নি,শরীর বিক্রি করা ঐ বেশ্যাদেরও ভালবাসার মন আছে”?
“অবশ্যই মনে হয়েছে আমার,তোমার সাথে বসে কফি খাওয়ার সময়, আলোর ছটা যখন মুগ্ধ করেছে আমাকে,আমি বিশ্বাস করেছি,তোমাকে নিয়ে ফিরে পাব আমার হারানো পৃথিবীটা”।
ফিরে যাওয়া হয়না,ফিরে যাওয়া যায় না,শিক্ষক মারিয়াকে উদ্ধার করতে হবে নিজেকে,না হলে চুমুতে আদরে এলোমালো করে সে বলবে,তাকে যেন কোন্দিন ছেড়ে না যায়।
“চল ট্রেন ষ্টেশনে ফিরে যাই আমরা”,মারিয়া বললো,
“না,এক কাজ করি এই ঘরেই ফিরে আসি,এখানে যখন আমার অস্তিত্বটা প্রথম অনুভব করলে,তুমি তুলে দিলে একটা উপহার হাতে।সেটাই প্রথম চেষ্টা আমার মনটাকে ছুঁয়ে যাওয়ার,জানা ছিল না তোমার কি ভাবে তোমাকে টেনে নেব আমি।তবে তুমি ঐ যে বললে পৌরানিক কাহিনীর কথা,ভাগ হয়ে আমরা খুঁজে নিতে চাইছি আমাদের আরেকজনকে।ওটাই আমাদের স্বপ্ন,আর সেই স্বপ্নের আশায় আমরা আছি আমাদের এই জীবন যুদ্ধে।
আমি চাই তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাক,যেন জানা নেই তোমার,আমার অস্তিত্বটা।প্রথম চাওয়াটাই মনটাকে এলোমেলো করে দেয়,ওটাতো লুকোনো,নিষিদ্ধ এক জগত।জান না তুমি সামনে বসে থাকা মানুষটাই তোমার অন্য আধেক,জানা নেই তারও।কোন এক আর্কষন টেনে আনছে তোমাদের দুজন,বিশ্বাস তোমাদের দুজনের দরকার দুজনকে।কোথায় খুঁজে পাওয়া আমার এ কথাগুলো?টেনে আনা আমার মনের অর্ন্তনিহিত গোপন জগতটা থেকে,কেন না ওটাই তো আমার চাওয়া।আমার নারী হওয়ার কল্পনা”।তার পোষাকের কাঁধের একটা ষ্ট্রেপ আলতো করে নামিয়ে দিল মারিয়া,স্তনের বোটাটা বেরিয়ে আসছে কিছুটা।
“কামনা,চাওয়া ওটা খুঁজে নিতে হয়”।
রালফ হার্ট দেখছিল একটা মেয়ে লম্বা চুল,কাল পোষাক গায়ে,বসে আছে ঘরের মেঝেতে,
সারা শরীর ভঁরা কামনার জোয়ার,যেন প্রচন্ড গরমে আগুনের ছোঁয়াচে ভঁরা শরীর।জানতে ইচ্ছে করে তার,কি লুকানো ঐ পোষাকের অন্তরালে,খুঁজে নিতে চায় সে শরীরের রহস্যটা।
অনুমান করা অসম্ভব ছিল না,স্তনের আকার,আয়তন,স্তন দুটো ছোটও না বড় না,যৌবনে ভঁরপুর একজন যেন তার সাধনায় তৈরী,একটা মুখ।চোখ দুটো তার তেমন কিছু বলে দেয় নাঃকি চায় সে?কেন সে বিশ্বাস করছে এই অস্বাভাবিক একটা সম্পর্কে যার কোন পরিনতি নেই,মেয়েদের সঙ্গ তার জন্যে তেমন কোন দুরুহ সমস্যা নয়।সে দেখতে শুনতে খারাপ না,টাকা পয়সার অভাব নেই,ভালবাসে সে যা করছে,ভালবাসার মেয়েদের যাদের বিয়ে করেছিল,তারাও ভালবেসেছে তাকে।সাজানো নিয়মে হয়তো তার চীৎকার করে বলা উচিত ছিল, “আমি তো সুখী”।
কিন্ত সে তো সুখী না,পৃথিবীটা যখন যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক টুকরো রুটির জন্যে,মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্যে, সেখানে সব কিছু থাকা সত্বেও রালফ হার্ট বড় হতভাগা একজন।নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখলে তার মনে হয়,হয়তো সর্বসাকুল্যে দু তিনটা দিন আছে যখন সকালের সূর্য বা বৃষ্টির ছটায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছে সে,কোন চাওয়া নেই,কোন পাওয়া নেই,শুধু বেঁচে থাকার আনন্দে।ও কটা দিন ছাড়া জীবনটা তার কাটিয়ে দেওয়া স্বপ্ন দেখায়,স্বপ্ন খোঁজায়,না পাওয়ার হতাশায়,পাওয়ার আনন্দে।ছুটে যাওয়া অজানার-স্বপ্ন ছাড়ানো আকাশে।
সে দেখছিল সামনে বসে থাকা সুন্দরী মেয়েটাকে,কাল পোষাকের মেয়েটাকে,ঘটনা চক্রে যার সাথে দেখা,যেন বড়ই বেমানান এখানে।জিজ্ঞাসা ছিল তার মনে,কি খুঁজছে সে তার মাঝে।প্রচন্ড ভাবে সে চায় তাকে,শুধু ঐ শরীরটা না,ভরাট যৌবন উপছে পড়া স্তনটাও না,চায় তার সঙ্গ,তার হাত ধরে খুঁজে নিতে চায় প্লেটোর পৃথিবী।
তাকে জড়িয়ে ধরে আগুনের আলোয় একটু মদে চুমু দিল,বলা নেই কিছু শুধু নিজেকে অনুভব করা তার মাঝে,আর কিছু না।সারাটা জীবন সে খুঁজে পেতে চায় তার মাঝে,তবে কিসের আশায় জানা নেই তার,হয়তো সাধারণ চাওয়াতেই লুকানো স্বর্গীয় সুখের আনন্দ।
ভঁয় হচ্ছিল,যদি তার সব কিছু হারিয়ে যায়।সে কি পয়সা খরচ করছে?হ্যা,সে খরচ করে যাবে যতদিন তার মন জয় না করে নিতে পারে।
রালফ হার্ট মনটা ফিরিয়ে আনলো তাদের খেলায়,সামনে বসে থাকা মেয়েটার কথাই ঠিক,মদের নেশা,আগুন আলোর আমেজ,তাদের সঙ্গগুলো যথেষ্ট নয়,দরকার সেই লুকোনো মনের আগুন,জোয়ার।যদিও পরে ছিল পোষাক,তবে খোলা একটা ষ্ট্রাপ,একটা স্তন আলতো বের হয়ে আসা।সে তাকে চায়,সে প্রচন্ড ভাবে চায় তাকে।
মারিয়ার চোখে পড়লো রালফের পরিবর্তনটা,তাকে কেউ আন্তরিক ভাবে কামনা করছে এটা ভেবে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লো সে।এটা তো যথাযথ খাঁচে ফেলা যৌনতার নিয়ম না-এর মাঝে লুকোনো আছে,‘ভালবাসি তোমাকে,আমি চাই তোমার সাথে যৌনসঙ্গমে আমার আনন্দের আকাশ খুঁজে নিতে,খুঁজে নিতে চাই আমার চরম সুখ,বিয়ে করতে চাই তোমাকে,আমি চাই সন্তানসন্ততি তোমার সাথে’।
চাওয়া একটা স্বাধীনতা,একটা মুক্ত আকাশ,যার চেতনায় ভিজে গেল মারিয়ার শরীর।
কামনা,আকাক্ষা হলো সবকিছুর উৎস-নিজের দেশ ছেড়ে সে তখন নতুন এক দেশে,খুঁজে নিয়েছে নতুন একটা পৃথিবী,ভেঙ্গে দিয়েছে পুরোনো চেনা চারপাশটা।নিজেকে মনে হচ্ছে তার নতুন একটা মেয়ে,তাকে একজন কেউ চাইছে,কারও কামনার পাত্র সে।
অনেকটা হিসাব করেই আরেকটা ষ্ট্রাপ আলতো করে নামিয়ে দিল সে,পোষাকটা যেন নিজেই সুর করে ছেড়ে গেল শরীরের ঘর।ব্রা ও খুলে ফেললো,দাড়িয়ে,উন্মুক্ত দুটো স্তন,ভাবছে কি হবে তারপর,সে কি পাগলের মত ছুঁয়ে যাবে,বলবে ভালবাসার এলোমেলো কথাগুলো,এমন ও হতে পারে,হয়তো চোখের দিকে দেখায় হারিয়ে যাবে সে।
চারপাশটার চেহারাটা বদলে যাচ্ছে,শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে,ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আগুনের আলো,হারিয়ে যাচ্ছে দেয়ালের ছবি-সাজানো বইপত্র,দেখানে আধ্যাত্মিক ভিন্ন এক আকাশ,কিছু নেই সেখানে শুধু কামনা,চাওয়ায় শরীর খোজার গল্প।
রালফ বসে আছে চুপচাপ,হারিয়ে যাচ্ছে তার চোখদুটোতে লুকানো লজ্জার আভাস।খুঁজছিল সে মারিয়াকে,আর তার মনের আকাশে চুমু খাচ্ছিল পাগলের মত,জিভ দিয়ে সারা শরির অনুভব করছিল,যৌনসঙ্গমে লিপ্ত,কামনার চরমে সীৎকার করছে,তার কল্পনায়।
কল্পনা ছাড়ানো জগতটায় চুপচাপ বসে আছে দুজন,কথা নেই,নড়াচড়া নেই,এটা মারিয়াকে আরও উত্তেজিত করলো,তার চিন্তার আকাশটা ছুটে বেড়াচ্ছিল সারা পৃথিবীটায়।সে তো চাইছিল লোকটা ছুঁয়ে এলোমেলো করে দিক তাকে,পা দুটো সরিয়ে হস্তমৈথুন করা আরম্ভ করলো সে তার সামনেই,কামুক সুরে যা তা বলে যাচ্ছিল,সেখানে তারা দুজনাই একজন।বেশ কবার সে চরম যৌনসুখ খুঁজে পেল,তার চীৎকারে জেগে ওঠা পাড়াপড়শী,জেগে ওঠা পৃথিবী তার সীৎকারে।
খুঁজে পেয়েছে পৃথিবীর সব আনন্দ,পাশে তার মনের মানুষ,যে মানুষটা আবিষ্কার করেছে তাকে, যাকে বলা যায় মনের কথাগুলো।বলা যায় শরীরের গল্প,তার যৌনতার অপূর্নতা,তার ইচ্ছাগুলো,সময় কাটানোর গল্প,জীবনের কাহিনীগুলো।
বিন্দু বিন্দু ঘাম ছড়ানো দুজনের কপালেই,হয়তো সেটা আগুনের উত্তাপ আর কিছু না-একজন মনে মনে বলে যাওয়া আরেকজনকে।তারা দুজন তখন পৌঁছে গেছে তাদের আনন্দের চরমে,কল্পনার আকাশ ছুটে গেছে এপার থেকে ওপার,জন্ম জন্মান্তরের দুজন,যেন দেবতা জুসের ভাগ করে দেয়া দু এর এক।
তাদের থেমে যাওয়া দরকার,আর কিছুটা এগোলেই হারিয়ে যেতে পারে তাদের মাঝের চমক।
সমাপ্তিটা সবসময় যন্ত্রনার,ব্রাটা তুলে নিয়ে আস্তে করে ঢেকে দিল সে তার স্তন দুটো।
পৃথিবীটা ফিরে এসেছে তার পুরোনো জায়গায়,এক এক করে ফিরে আসছে চারপাশের দেশটা, কোমর থেকে পড়ে যাওয়া পোষাকটাও পরে নিল,আলতো করে চুমু দিয়ে,হাতটা ছুঁয়ে দিল রালফের গালটা।হাতটা গালে ধরে রাখলো রালফ,জানা ছিল না কতক্ষন হাতটা ধরে রাখবে সে।বলার ইচ্ছা ছিল মারিয়ার, “ভালবাসি”,কিন্ত সেটা নষ্ট করে দেবে সেই সময়টার আমেজ,
তখন হয়তো বাধ্য হবে তাকে জানাতে তার ভালবাসার উচ্ছাস।সেটা তো সে করতে চায় না,ভালবাসার স্বাধীনতায় চাওয়া নেই কিছু,পাওয়াটাও নেই কিছু।
“অনুভুতির মনটা বলে দেয় তোমাকে,বলে দেয় যৌনতার চরম সুখটাও খুঁজে পাওয়া যায় ধরা ছোঁয়া ছাড়া।কথা,দেখায় লুকানো সেই স্বর্গ নাচের রহস্য।ট্রেনটা এসে গেছে,এখন আমাদের ফিরে যেতে হবে আমদের নিজের পুরোনোতে।আশা করি আবার যেন যেতে পারি তোমার সাথে,জানি না…কবে,কোথায়”?
“আবার…জেনেভা”,রালফ বললো।
সূত্রঃ চতুর্মাত্রিক।
তারিখঃ জুলাই ০৫ ২০২১
রেটিং করুনঃ ,