অনুবাদে: ইললু
ষষ্ঠ অংশ
ভালবাসা নিয়ে মারিয়া যতই যাই ভাবুক না কেন, ভুলে যায়নি সে তাকে দেয়া উপদেশ,
ভালবাসাকে একপাশে সরিয়ে রেখে উর্পাজনের দিকেই চোখ রাখলো সে,ভালবাসা পড়ে থাকলো তার ডাইরীর পাতায়।খুব অল্প সময়ে প্রচুর টাকা উর্পাজন করার এমন সুযোগ আর
কি আছে,সেই বিশেষ কারণে অনেকের বেঁছে নেয় জীবনের নোংরা এ দিকটা।মারিয়ার এই যৌনব্যাবসা-এটা তার জীবনের চাওয়ার অচেনা একটা চেহারা।জানে না সেটা সত্যি কি না,অভিযান অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর কোনায় কোনায়,স্কি করা পাহাড়ের চড়াই উতরাই জুড়ে,জেনেভা লেকে নৌকাবিহার,কিন্ত তার মন ছুয়ে যাইনি সেগুলো কোনদিন।তাই হয়তো তার জীবন ছড়ানো শুধু হতাশায়, ।
কোনটা প্রযোজ্য কোনটা না,সবকিছু ভুলে গিয়ে এটাই ধরে নেয়া ভাল,যা আসছে সামনে সেটা মেনে নেয়া না হয় তার সাথে যুদ্ধ করে যাওয়া।অন্যান্য পতিতা মেয়েদের সাথে তার স্বপ্নেরও খুব একটা পার্থক্য ছিল না,সেও খুঁজছে সংসার,একটা সুন্দর জীবন।তার সাথের মেয়েদের প্রায় তিন ভাগের একভাগ হয় বিবাহিতা,না হয় বিচ্ছেদ হওয়া স্বামীর সাথে।সে আর ও বিশ্লেষন করা আরম্ভ করলো,কেন অন্যান্য সবাই বেছে নিয়েছে এই কাজ।
তেমন নতুন কিছুই না,একটা লিষ্ট তৈরী করলো,সব মিলিয়ে,প্রথমটাঃ স্বামীকে সাহায্য(কিন্ত ঈর্ষা হবে না তার মনে?কি হবে স্বামীর বন্ধু যদি ক্লাবে আসে একদিন),কিন্ত ওই প্রশ্নগুলোতো করা যায় না,দ্বিতীয়টাঃ মা বাবাকে বাড়ি কিনে দেয়া(খুব মহান ইচ্ছা একটা,তার নিজের চিন্তাটাও,বেশীর ভাগের কারণ),আরেকটা কারণ দেশে ফিরে যাওয়ার প্লেন ভাড়া(পেরু,ব্রাজিল বিভিন্ন জায়গার মেয়েরা সবাই বলছে এটা,কিন্ত পয়সা উর্পাজন করার পর খরচ করে পুরোনো অবস্থানে ফিরে যাওয়া সবার)।
অনেকে ছিল যাদের নিজেরই জানা নেই না যথাযথ কারণটা।
দেখলো মিলানের কথাটাই ঠিক কেউ তাকে ১০০০ ফ্র্যাঙ্ক দিতে চায়নি,তবে ৩৫০ ফ্র্যাঙ্ক দিতে আপত্তি ছিল না কারও।
কাজের এক মেয়ে মন্তব্যটা বেশ যুক্তিযুক্ত বলা যায়ঃ
“পতিতাদের ব্যাবসা আর যে কোন ব্যাবসার মতই,যারা নতুন আসে তাদের কামাই বেশী।তাই সবসময় নিজেকে নতুন রাখার চেষ্টা করবে,ভাব দেখাবে নতুন আসা তোমার এ ব্যাবসায়”।
মারিয়া এখনও জানতে পারেনি সেই “বিশেষ গ্রাহক” কারা,প্রথম রাতেই শুধু শুনেছে তাদের কথা,তার পর আর না।ধীরে ধীরে ব্যাবসার ধরণটা বেশ আয়ত্বে এসে গেছে তার,কোন ব্যাক্তিগত প্রশ্ন না করা,হাসি ভঁরা মুখ,ক্লাবের বাইরে কারও সাথে দেখা না করা।
সবচেয়ে দামী উপদেশটা ছিল “নায়া” নামের এক ফিলিপেনো মেয়ের কাছ থেকে
“যৌনমিলনের সময় কামুকতার উল্লাস নিয়ে আসবে,যেন তোমার খদ্দের ভাবে তুমি শারীরিক আনন্দে আত্মহারা,ওরা তোমাকে ভুলে যাবে না কোনদিন”।
“কিন্ত কেন?ওরা তো নিজের সুখের জন্যে পয়সা খরচ করছে”।
“ওটাই তোমার ভুল ধারণা।একটা পুরুষ নিজেকে পুরুষ মনে করে না,শূধু তার লিঙ্গের দৃঢ়তা নিয়ে।তখনই সে পুরুষ যখন সে তার সঙ্গিনীকে দিতে পারে চরম সুখ।আর সে যদি একজন পতিতাকে এনে দেয় যৌনসুখ তবে সে ভাববে তার মত যৌন দক্ষতা আর কারও নেই”।
এ ভাবে চলে গেল প্রায় মাস ছয়েক,অনেক কিছুই শিখলো মারিয়া,কোপাকাবানার ব্যাবসা সমন্ধে,ওটা তো রু ডে বার্নের সবচেয়ে দামী ক্লাব।বেশির ভাগ লোকজন অফিস পাড়ার উর্ধত্বন কর্মকর্তা,যারা প্রায়ই ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা সাক্ষাতে ব্যাস্ত,তবে তাদের সময় রাত এগারটার মধ্যেই বেশী না।বেশীর ভাগ পতিতাদের বয়স আঠার ছাড়িয়ে বাইশ এর মধ্যে,বছর দুয়েকের বেশি কেউ কাজ করে না,নতুন মেয়েরা এসে জায়গা করে
নেয়।
এরপর তারা চলে যায় নিয়ন,হয়তো মাক্সিইয়াম তারপর,যিনিয়াম,বাজার কমতে থাকে তাদের,কাজের সময়ও কমতে থাকে ধীরে ধীরে।সবাই শেষে গিয়ে পৌঁছায় ট্রপিকাল এনগজাইটিতে,তিরিশের ওপর মেয়েরাও কাজ করে সেখানে।খুব বেশী হলে খাওয়া দাওয়া আর বাড়ি ভাড়ার পয়সাটা কোন রকমে জোগাড় হয়,কলেজের ছাত্রদের সুবাদে।
নানান পুরুষের সাথেই যৌন বিহার হলো তার,বয়স চেহারা নিয়ে তার তেমন একটা বাতিক ছিল না কাছে,বাছবিচার ছিল শুধু শরীরের সুগন্ধিটা নিয়ে।সিগারেটেও কোন আপত্তি ছিল না,অসহ্য ঘৃনা ছিল তার সস্তাদরের কোলন,আর অপরিষ্কার পোশাকের দুর্গন্ধ।
কোপাকাবানা বেশ ছিমছাম চুপচাপ একটা জায়গা,সুইজারল্যান্ড শরীর বিক্রির জন্যে সবচেয়ে ভাল দেশ,যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে আর যথারীতি ট্যাক্স দেয়া হয়।মিলানের সবসময় বলতো খবরের কাগজে নিজের নামটা দেখতে চায়না,চায় না তার ছেলেমেয়ের চোখে একটা নোংরা চরিত্র হতে,পুলিশের মত সবাইকে তাই চোখে চোখে রাখতো সে।
প্রথম দুই এক রাত্রির পর,আর যে কোন একটা কাজের মতই হয়ে দাড়াল,দেহ ব্যাবসার কাজ।ঝামেলা ছাড়া কাজ করে যাও,প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার চেষ্টা,সময়মত কাজে যেতে হবে,মনে মনে অভিযোগ,আর আয়েশ করার জন্যে রোববারের অপেক্ষা।বেশীর ভাগ পতিতাই ছিল বেশ ধার্মিক,ছুটির দিনে তারা যেত গীর্জায়,মন্দিরে,যার যেটা বিশ্বাস।
মারিয়া যুদ্ধ করতো ডাইরীর পাতায়,যেন সে হারিয়ে না ফেলে তার অদৃশ্য আত্মাকে।অবাক হলো দেখে প্রায় পাঁচজন খদ্দেরের একজন ছিল-যারা চাইতো না কোন যৌনমিলন-শরীরের খেলা,শুধু গল্পগুজব করিয়ে সময় কাটিয়ে ফিরে যেত।বারের ড্রিঙ্কের পয়সা,হোটেলের ভাড়া সব কিছু মেটানোর পর কাপড় খোলার সময় তারা মন্তব্য করতো,দরকার নেই ওটার।তারা শুধু কথা বলতে চায় কাজের ঝামেলা নিয়ে,সংসারের ঝামেলা নিটে,জীবনের বিতৃষ্ণার পাতাগুলো খুলে,হয়তো মনটা হাল্কা করে নিতে চায় মনটা।(ওটা তার জানা বেশ ভালভাবেই)
এক সন্ধ্যায় এক ফরাসী ভদ্রলোক,দেখে মনে হলো তার,অফিসের বেশ হোমরা চোমরা এক কর্মকর্তা,তার কথাগুলো ছিল বেশ অস্বাভাবিক,“জান জীবনের চলার পথটা বড় অদ্ভুত,তুমি ভাল একটা চাকরী কর,উঠে গেছ অফিসের একেবারে উপরের দিকে,বাড়ী প্রতিপত্তি কোনটার অভাব নেই।কিন্ত তোমার আকাঙ্খা তোমাকে ঠেলে দেয়,আরও ওপরে নিয়ে যাওয়ার তৃষ্ণায়।নতুন আরেকটা অফিস থেকে,দ্বিগুন বেতন দিয়ে চাকরীর প্রস্তাব পেলে,তোমার বৌ,যুদ্ধের সঙ্গী,সামনের নতুন নিয়ে তাকে কি বলবে,তুমি?কি ভাবে বলবে নিশ্চয়তা ছেড়ে নতুন এক অনিশ্চয়তায় যেতে চাও তুমি।সকলের আয়েসে আনতে চাও তুমি এক অনিশ্চয়তা,বড় একা তুমি,এখানে তুমি একেবারেই একা।জান মনে হয় এ পৃথিবীতে আমার মত একা কেউ আর নাই”।
না সে পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ সেই লোকটা না,সেটা মারিয়া।তবু মারিয়া একমত হলো তার সাথে,আর কিছু না হোক বড় একটা বখশিশ পাওয়া যাবে,পেল সেটা।বুঝতে পারলো মারিয়া খদ্দেরদের মনে আটকে থাকা ভারী ওজনটা সরিয়ে দেয়ার দায়িত্বটা তার,আর আন্তরিকতা আর সহিষ্ণুতা।
সে বুঝতে পারলো মনের ভারটা সাথে শরীরের ভারের অদ্ভুত এক যোগাযোগ আছে।লাইব্রেরীতে আবার যাওয়া আরম্ভ করলো,লাইব্রেরীয়ানের কাছে সাংসারিক অসমঝোতা,
রাজনীতি,মন মানসিকতার বইপত্র এর খোঁজ করলো।খুশীই হলো লাইব্রেরীয়ান শেষ পর্যন্ত মেয়েটা যৌনসঙ্গম ছাড়া অন্য ব্যাপারেও জানতে আগ্রহী,ভেবে।অর্থনিতির পত্রিকা,ষ্টক বাজার,সমন্ধেও মারিয়া পড়াশোনা আরম্ভ করলো,তার অনেক খদ্দের আছে যারা ব্যাবসায়ী।
উপদেশমুলক বইপত্র নিয়েও বেশ পড়াশোনা আরম্ভ করলো,যাতে অনেকের বলা নানান অভিযোগ নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে অসুবিধা না হয়।মারিয়া বেশ উচুদরের এক পতিতা,ছয় মাসের মধ্যেই প্রতিপত্তিশালী লোকজনেরা তার গ্রাহক হয়ে গেল,তার কাজের মেয়েরাও তাকে বেশ সম্মানের চোখে দেখতো।
আর যৌনবিহার যৌনসঙ্গমের ব্যাপারে তেমন নতুন কিছু একটা করার থাকে না,পা দুটো ছড়িয়ে দেয়া,কনডম ব্যাবহারের কথাটা ভুলে গেলে চলবে না,যোনী ভেদের পর নানান ধরণের কামুকতার শব্দ করে খদ্দেরদের খুশী করা(ফিলিপিনো নায়ার পরামর্শটা খারাপ ছিল না,বখশিশটা বেশ বড় হয় তাতে ৫০ ফ্র্যাঙ্ক বেশি কমপক্ষে),তারপর গোসল করে সব গ্লানি ধুয়ে মুছে দেয়ার চেষ্টা মনের খাতা থেকে।কোন রকম অস্বাভাবিক কিছুতে জড়িত যেব না হয়,চুমু খাওয়াটাও চায় না সে।চুমুটা ধরে রাখতে চায় তার প্রেমিকের জন্যে,রুপকথার রাজকন্যার মত,রাজকুমারের একটা চুমুতে মুক্তি পাবে এই দুঃস্বপ্নের রাজ্য থেকে,তাকে নিয়ে যাবে কেউ সুইজারল্যান্ডের চকলেট,পনীর আর ঘড়ির রাজ্যে।শুধু যৌনতার চরম সুখ ছাড়া না,সাধারণ আনন্দ উৎসাহ ছাড়া একটা জীবন।কাজের তাগিদে মারিয়া মাঝে মাঝে পর্নো ছবিগুলো দেখে,যদি নতুন কিছু শেখা যায়।নতুন অনেক কিছু শিখেছে তবেঁ তার ইচ্ছা নেই খদ্দেরদের সাথে সেগুলো চেষ্টা করার,অনেক সময় নষ্ট হবে তাতে,মিলানও খুশী থাকে যখন তারা এক রাতে তিনজন গ্রাহক নেয়।
ছ মাসের মধ্য মারিয়ার ব্যাঙ্কে প্রায় ষাট হাজার ফ্র্যাঙ্ক,প্রায়ই ভাল রেস্তোরায় খায়,টিভি কিনিছে(কোন সময় দেখতো না,তবু রাখা লোকজনকে দেখানোর জন্যে),ভাবছিল দামী কোন এক জায়গায় বাড়ী নিবে।যদিও তার বই কেনার পয়সার অভাব ছিল না,তবুও লাইব্রেরীতে যাওয়া পচ্ছন্দ ছিল তার।কেন না লাইব্রেরীটাই ছিল সাধারণ পৃথিবীর সাথে তার যোগাযোগের রাস্তা।গল্প করতো লাইব্রেরীয়ানের সাথে যে ভাবতো মারিয়া খুঁজে পেয়েছে মনের মানুষ যদিও কোনদিন জানতে চায়নি সে,সুইস লোকজন বরাবরই এ ব্যাপারে লাজুক(অদ্ভুত এক মানসিকতা,যদিও বিছানায় শরীর নিয়ে তাদের নানান নোংরামী)।
মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়া,কোন এক রোববারঃ
“সব পুরুষ উন্নাসিক,সহজমনা,লম্বা,খাট,বন্ধুসুলভ,যেই হউক না কেন ক্লাবে যখন আসে বেশ একটা ভঁয় তাদের মনে,যারা অভিজ্ঞ তারা ভয়টা লুকিয়ে রাখে উঁচু স্বরে কথা বলে,নতুন যারা,তারা বেশি করে মদ খায় যেন ভয়টাকে তাড়ানো যায়।কিন্ত আমার জানা নাই,ঐ যে “বিশেষ গ্রাহক”,যাদের আজও দেখিনি আমি,তাদের ভয়টা কোথায়,তাদের ভয়টা কিসে?
ভয় পাওয়ার কথা আমার,অজানা এই ক্লাব ছেড়ে যাই আরেক অজানায়,হোটেলের রুমে,
শারীরীক ক্ষমতাও আমার কম তাদের চেয়ে,অস্ত্রশস্ত্রও নেই আমার কাছে।পুরুষরা আসলেই অদ্ভুত,বলছি না শুধু কোপাকাবানাতে আসা পুরুষদের কথা,এটা প্রযোজ্য সব পুরুষদের ক্ষেত্রেই।তারা তোমাকে মারতে পারে,চীৎকার করতে পারে অযথা,তবুও কেন জানি তারা মেয়েদের খুব ভঁয় পায়।
হয়তো বা তাদের ঘরণী না,তবে তাদের জীবনে থাকে কোন এক মেয়ে যাকে তারা অবশ্যই ভয়,হতে পারে তাদের মা।যদিও ভাব দেখায় তারা সংসারের সব কিছুটাই তাদের আয়ত্বে,ভঁয় তাদের মনে লিঙ্গের দৃঢতা নিয়ে,যদিও এক সস্তা পতিতার সাথে যৌনসঙ্গম করছে।জুতোর দোকানে জুতো পচ্ছন্দ না হলে তারা ফেরত দেয়,কিন্ত ক্লাবে গিয়ে লিঙ্গের দৃঢতা হারালে ফিরে যায় না ক্লাবে তারা লজ্জায়,সব মেয়েরা জেনে গেছে সেটাই তাদের ধারণা।কিন্ত লজ্জা পাওয়ার কথা আমার,আমার ভরাট শরীরটা জাগাতে পারেনি তাদের শারিরিক উচ্ছাস,তবে লজ্জা পায় তারাই”।
০০০০
মারিয়া সাক্ষাতে প্রথমেই চেষ্টা করে পরিবেশটাকে হাল্কা করে নিতে,যদি কেউ বেশী মাতাল হয় তবে আদর আর হস্তমৈথুনেই কাজ সেরে দিলেও প্রচন্ড খুশী তারা,যদিও নিজে নিজে হস্তমৈথুন করা এমন কোন কষ্টকর ব্যাপার না,তবে এটা নিশ্চিত করে নিতে হয়।ঐ মানুষগুলো ক্ষমতাশালী,অফিসের কর্মকর্তারা,ব্যাবসায়ী,ষ্টক ব্যাবসায়ী,যাদের কথাবার্তায় কর্মচারীরা,লোকজন সবাই ভঁয়ে ভঁয়ে থাকে,৩৫০ ফ্র্যাঙ্ক দিয়ে একটা সন্ধ্যায় কিছু সময়ের তারা অন্য কেউ হতে দ্বিধা বোধ করে না।
‘তবে সম্পুর্ন একটা সন্ধ্যা বলা ঠিক হবে না,শুধু,কাপড়চোপড় খোলা,মিষ্টি কথাবার্তা,চাহনির মিনিট পয়তাল্লিশ,বাদ দিলে এগার মিনিটের বেশি হয় না’।
এগার মিনিট।সারা পৃথিবীটা ঘুরছে শুধু ঐ এগার মিনিটের চাকায়।
ঐ এগার মিনিটের জন্যে-চব্বিশ ঘন্টার মাঝে এগার মিনিট(সবাই তাদের সঙ্গীনীর সাথে যৌন সঙ্গম করে,যা সম্পুর্ন অসম্ভব আর মিথ্যাই হবে),মানুষ বিয়ে করে,সহ্য করে সংসারের যন্ত্রনা,তার পর নানান ধরণের অজুহাত দিয়ে পতিতাদের কাছে আনন্দ খুঁজতে যায়।ঐ এগার মিনিটকে কেন্দ্র করে দামী পোশাক কিনে দেয় বৌদের,কিনে দেয় রকমারী প্রসাধন দামী রেস্তোরায় যায়,বেড়াতে যায় আনন্দে,এরাই তৈরী করে দেয় বিরাট সব ব্যাবসার প্রতিষ্ঠানগুলো।
সভ্যতার অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,তবে সেটা আমাজনের জঙ্গলটা না,চীনের নিরীহ পান্ডার দলও না,সেটা হলো যৌন সঙ্গমের আনন্দ-ওটা হারানোর তুলনায় অন্য কিছু হারানো কিছুই না,মারি্যা সেই আনন্দ ফিরিয়ে আনার কাজ করছে।
তবে মারিয়া মানব সমাজকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে আসেনি,তার দরকার টাকাপয়সা,আরও ছয় মাসের একাকীত্ব,তার এই চলার পথে।তার দরকার মাকে মাসে মাসে টাকা পাঠানো (আগের টাকা হারানোর ব্যাখ্যাটা দিয়ে),দরকার পচ্ছন্দের জিনিষপত্র কেনার জন্যে,ভাল একটা ঘরও ভাড়া করা দরকার তার।
মারিয়ার জীবন চলে পুরোনো সুরে,কোপাকাবানায় যাওয়া,কটা ড্রিঙ্ক,তারপর নাচ,ব্রাজিল নিয়ে কিছু কথাবার্তা,শেষ অঙ্কে শরীর আর মনের খেলা।কোন কোন সময় ঘন্টা আধেকের বন্ধু হিসেবে দু একটা ব্যাক্তিগত সমস্যার উপদেশ দেয়া,আর শেষ পর্বে এগার মিনিট পা দুটো ছড়িয়ে কামুকতার সীৎকারে আকাশ ছড়িয়ে দেওয়া।দেখা হবে আবার, অনেক ধন্যবাদ তোমার মত পুরুষ হয় না,সাজানো কথাগুলো আওড়ানো।না না এই টাকাগুলো দেয়ার কি দরকার ছিল, তোমার সাথে সময় কাটানোতেই আমার আনন্দ।
“আর যাই হউক প্রেমে পড়ো না”,ব্রাজিলিয়ান মেয়েটার দেওয়া সবচেয়ে দামী উপদেশ,দেখা হয়নি আর মেয়েটার সাথে,হয়তো নিজেই হারিয়ে গেছে ভালবাসায়।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কাজের দু মাসেই,মারিয়া পেয়েছে একগাদা বিয়ের প্রস্তাব,তার মধ্যে তিনজন ছিল বেশ দৃঢ়মনা,এক প্রতিষ্ঠানের একাউন্টেন্ট,তার প্রথম রাতের খদ্দের এয়ারলাইন পাইলট,আর এক
চাকুর দোকানের মালিক।প্রস্তাবগুলোর ধরণটা অনেকটা একই রকম,তিনজনই স্বপ্ন তাকে নিয়ে,বাড়ী,ছেলেমেয়ে সংসার সবকিছুই সাজানো,মারিয়া যে তাদের স্বপ্নে খুঁজে পাওয়া নায়িকা।
শুধু সারা দিনের কিছু সময়,ঐ এগার মিনিটের জন্যে?কোপাকাবানার অভিজ্ঞতা তাকে অন্ততঃ এটুকু শিখিয়েছে,এ জীবনটায় সবাই একা।মানুষ কাটাতে পারে একটা সপ্তাহ পানি ছাড়া,দু সপ্তাহ খাবার দাবার না হলেও,অনেক কটা দিন থাকার ঘর ছাড়া,কিন্ত একাকীত্বে একটা দিনও কাটাতে পারে না,কেউ।তার মত,এই মানুষগুলোরও একই ধারণা,একই অনুভুতি এই পৃথিবীর কেউ কারও জন্যে নয়,সবাই একা।
ভালবাসায় ভেসে যাওয়ার সূযোগ হয়নি মারিয়ার,ডাইরী লিখে রাখতো সে,লিখে রাখতো তার মনের কথাগুলো ডাইরীর পাতায়।কোপাকাবানায় গিয়েছিল শুধু শরীর আর বুদ্ধি নিয়ে,সময়ে বুদ্ধি আরও প্রখর হয়ে উঠেছে।তার বিশ্বাস জেনেভায়,রু ডে বার্নে আসার সব পেছনে নিহিত যোগাযোগ একটা আছে নিশ্চয়ই,ভবিতব্য তাকে ঠেলে দিয়েছে এ পথে নিশ্চয় কোন কারণে।বেশ কিছু বই নিয়ে আনলো সে লাইব্রেরী থেকে,কিন্ত কোথাও খুঁজে পেল না-ঐ এগার মিনিটের গল্প।যদিও সে মুহুর্তে সেটা অসম্ভব মনে হলেও হয়তো ওটাই তার ভবিষৎ,ঐ এগার মিনিট নিয়ে প্রথম লেখা।
ওটা যেন নিষিদ্ধ একটা কথা কেউ আলোচনা করতে চায় না সহজে,ওটাই তার জীবন যুদ্ধ,টেলিভিশনে আর সিনেমাগুলোতে যা দেখানো হচ্ছে দিনরাত জুড়ে,সেটাই তো খুঁজে যাচ্ছে সে।কটা কথা যা বদলে দেয় মরুভুমির গল্প,নিয়ে যায় মানুষকে অজানায়, নদীর মাঝে,প্লেনে,সিনেমায়,উপজাতির লোকজনের সাথে,আফ্রিকায়,তুষার ঢাকা পাহাড়টায় অজানা মানুষটার সাথে তৈরী করে দেয় গল্প কথা ।
মারিয়া ভাবলো,বই লেখার চিন্তাটা খুব একটা খারাপ না,আর বইটার নাম হবেঃএগার মিনিট।
তার খদ্দেরদের তিন ভাগে ভাগ করলো সে,
প্রথমঃ যাদের বলা যায় কীটপতঙ্গ(এক সিনেমা থেকে নেয়া কথাটা)-মাতাল হয়ে আসে যারা,ভান দেখায় যেন অন্য কারও অস্তিত্ব নেই তাদের আশেপাশে।
দ্বিতীয়ঃ সুন্দর আকাশ(ঐ কোন ছবির নাম থেকে নেয়া)-যারা ভাব দেখায় সম্ভ্রান্ত,সহজ সরলমনা,সবার দুঃখে দুঃখী,সারা পৃথিবীর জন্য কান্না তাদের,হঠাৎ করে ভুলে যেন ক্লাবে আসা তাদের।তাদের আচার ব্যাবহার সব সময় একটা নম্রতায়্ ঢেকে থাকা,সব কিছু বদলে যায় হোটেলে যাওয়ার পর,তাদের চাওয়াগুলোও বেশী ঐ পোকামাকড়দের চেয়ে।
শেষেরটাঃ মাস্তান(নামটা নেয়া আরেকটা ছবি থেকে)-মেয়েদের শরীরটা যাদের কাছে শুধুই একটা খেলনা।তবে তারাই সবচেয়ে বেশী আন্তরিক,নাচে,গানে আনন্দ করতে কোন দ্বিধা করে না,সহজে কোন বখশিশ দেয় না, খরচ করা পয়সাটা আদায় করে নিতে চায়।নিজের পচ্ছন্দটাকেই প্রাধান্য দেয় তারা,মেয়েদের কথায় ভেসে যায় না,ওদের জানা আছে “অভিযান” কি জিনিষ।
মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়া,কাজে যায়নি তার ঝতুস্রাবের কারণেঃ
“আমি যদি আমার জীবনের কথাগুলো কাউকে বলি তারা ভাববে,আমি হাসিখুশী সুখী, সাহসী,এক মেয়ে।তবে ওটা বাজে কথা,একেবারেই বাজে কথা,কিন্ত আমি কোন সময়েই বলতে পারি না এগার মিনিট ছাড়া বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় খোরাক-ভালবাসা।
সারাটা জীবন ভেবেছি-ভালবাসা স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া একটা দাসত্ব।এখন জানি সেটা আমার বোঝার ভুল,স্বাধীনতা আছে সেখানেই,ভালবাসা লুকোনো যেখানে।নিজেকে সম্পুর্ন আত্মসর্মপণ করে,নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায়।
অভিজ্ঞতায় যা অর্জন করেছি আমি,সেটা কিছুই না শুধু একটা শূন্যতা।যত তাড়তাড়ি কেটে যায় এই যন্ত্রনার সময়গুলো,নিজেকে খুঁজে পাব আমি-খুঁজে পাব আমার ভালবাসার চেহারাটা।খুঁজে পাব আমার মনের মানুষটা যে বুঝবে আমাকে,সরিয়ে নিয়ে যাবে চারপাশের এই যন্ত্রনা থেকে।এ কি বলছি আমি?ভালবাসায় তো কোন যুদ্ধ নেই,নিজের নিজের একটা আকাশ থাকলেও জড়ানো একজন আরেকজনের সাথে।কষ্ট হয়েছে আমার অনেক ভালবাসায়,যাদের ভালবাসা বোঝেনি তারা আমাকে।আমি জানি জীবনে কেউ কাউকে হারায় না,আসলে কেউ তো কারও নয়,এটাই স্বাধীনতার স্বাদ,যার কিছু নেই তারও আছে একটা আকাশ”।
সূত্রঃ চতুর্মাত্রিক ।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৯, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,