পাওলো কোয়েলহো এর এলিভেন মিনিটস
অনুবাদে- ইললু।
প্রথম অংশ
জানা কি তোমার,
আমিই প্রথম,আমিই যে শেষ,
পুজো করে আমাকে সবাই,
ভোলে না ঘৃনা ছড়াতে আবার ঐ আকাশটায়।
দেবী আমি সে তো আছেই জানা,
বেশ্যা আমি রাস্তার সেটা কারও নেই অজানা,
কুমারী আমি,পত্নী আমি,
কন্যা কোথাও-মাতা কারও,
আমি যে আমার মায়ের হাতদুটো,
বন্ধ্যা মেয়েটা,সে যে আমিও,
সন্তান যদিও আছে আমার,হাজারো।
কথাগুলো তেমন পুরোনো নয়,পুরোনো নয় ঘটনাগুলোও,এ কথাগুলো মারিয়াকে নিয়ে,এ এক পতিতার গল্প।হয়তো এভাবে কোন পতিতার কথা বলা যায় না,বলাও হয় না,তবে এটাতো শিশুদের কোন রুপকথার গল্প না,এটা তো বয়সের মানুষের সুখ দুঃখের কান্না হাসির গল্প।তবে এটাও তো ঠিক,আমাদের জীবনের কিছুটা অংশ সাজানো রুপকথার আকাশে আর কিছুটা সাজিয়ে নেওয়া কান্নার সমুদ্রে।
যাকগে আবার নতুন করে বলা যাক গল্পটা,এ কথাগুলো মারিয়া নামের এক পতিতার,
অন্যান্য আর ও পতিতাদের মত সেও হারায়নি তার কুমারীত্ব কোনদিন,যৌবন ছুঁই ছুঁই করছে তারও,স্বপ্নটা হারায়নি রাজকুমারের(হয়তো বা কোন ব্যাবসায়ী,প্রতিপত্তিশালী কেউ)ঘোড়ায় চড়ে যে বিয়ের পোশাকে সাজিয়ে নিয়ে যাবে তাকে।সন্তান সন্ততি হবে দুই কি তিন,তাদের নাম ডাক হবে প্রচন্ড,বাড়ীটা হবে সমুদ্রের ধারে,যেখানে ঢেউগুলো ছুঁয়ে যাবে ছব্দে ছন্দে।
আমাদের,মারিয়ার বাবা একজন ফেরীওয়ালা আর মা কাজ করে কাপড় সেলাইর দোকানে।ছোটখাট একটা শহরে বাড়ী,সর্বসাকুল্যে একটা সিনেমা হল সেখানে,একটা ব্যাঙ্ক আর নাইট ক্লাবও ছিল যদিও।এটাই স্বপ্ন ছিল মারিয়ার,আসবে তার স্বপ্নের রাজকুমার ঘোড়ায় করে উড়িয়ে নিয়ে যাবে তাকে স্বপ্নের দেশে,দুজনায় পৃথিবী জয় করবে তারা।
স্বপ্ন দেখেই সময়গুলো কাটায় মারিয়া,খোঁজে ভালবাসার অজানা আকাশটা।বয়স তখন এগার কি বার,মারিয়ার দেখা হলো তার প্রথম রাজপুত্রের সাথে,একই সাথে রাস্তায় স্কুলে যায় তারা, তাদের ক্লাশগুলোও ছিল একসাথে,তবে কথা হয়নি কোনদিন।স্কুলে যাওয়ার সময়টাই ছিল মারিয়ার দিনের শ্রেষ্ঠ সময়টা-সুর্যের আলোটা চোখে মুখে নিয়ে নাম না জানা ছেলেটার সাথে তাল মিলিয়ে স্কুলের দিকে ছুটে যাওয়া,এ আনন্দেই ভঁরে থাকতো তার দিনটা।
মাসের পর মাস চলে যায় এই অভিনব ভালবাসার খেলায়,পড়াশোনায় কোন মন ছিল না-মারিয়ার,ভালবাসার এই লুকোচুরি খেলা আর টেলিভিশন দেখা।যদিও এই বয়সে সময়গুলো ছুটে যায় বাতাসের গতিতে,কিন্ত মারিয়ার কাছে দিনগুলো ছিল যেন দিক হারানো-থমকে থাকা,ভালবাসার মানুষটার সাথে তার যোগাযোগ ছিল বড় জোর মিনিট দশেক।
স্কুলে হেঁটে যাওয়ার এক সকালে,মারিয়ার স্বপ্নের রাজকুমার এসে তার কাছে একটা পেন্সিল ধার চাইলো,কিন্ত খুশী না হয়ে মারিয়া বরং বিরক্তিতে কিছু না বলে আরও জোরে জোরে ছুটে গেল স্কুলের দিকে।স্বপ্নে মারিয়া তার রাজকুমারের হাত ধরেছে অনেক কবার,বলেছে ভালবাসার কথাগুলো,দুজনে সাজিয়েছে স্বপ্নের অজানা রাজ্যটা,কিন্ত সময়ের সময়ে হারিয়ে গেল তার সাহস,ভঁয় ছাড়া আর কিছু ছিল না তার মনে।মারিয়া হারিয়ে গেছে দেখা অজানা স্বপ্নের শহরটায় যেখানে আছে একগাদা সিনেমা হল,আছে নাম করা অভিনেতা অভিনেত্রীরা,আর নাম না জানা হাজারো আনন্দের গল্প।সারা দিনটায় স্কুলের কোন কিছুতেই মনযোগ ছিল না মারিয়ার, সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি কেন যে এই সূযোগের অপব্যাবহার করলো,পেন্সিল চাওয়াটা তো আর কিছু না,ওটা ছিল কথা বলার একটা সূযোগ তৈরী করে নেয়া।
মারিয়ার চোখ এড়ায়নি যে পেন্সিল চাওয়ার সময় ছেলেটার হাতেই ছিল আরেকটা পেন্সিল।মনে মনে ভেবে রেখেছিল সে,ছেলেটা যদি আবার কোনদিন কথা বলতে আসে তবে কি বলবে,দিন কাঁটিয়ে রাত্রি তার পর নতুন আরেক দিনের সকাল,স্কুলে যাওয়া হয় তবে কথা হলো না কোন।মারিয়া স্কুলে যায় প্রতিদিনই,মাঝে চোখাচোখি হয় ছেলেটার সাথে তবে কথা হয়নি কোনদিন আর।
এর মাঝে হলো স্কুলের ছুটি,একদিন সকালে মারিয়া দেখে তার পা দুটো দিয়ে চুইয়ে পড়ছে রক্ত,সে ভাবলো এখানেই শেষ,তার ছোট্ট জীবনটার।ঠিক করলো একটা চিঠি লিখে যাবে ভালবাসার মানুষটাকে,জানাবে তার ভালবাসার আকাশটায় ছিল না আর কেউ,আর আসবে না কেউ কোনদিন।ঠিক করলো চলে যাবে তাদের শহরের কাছের জঙ্গলটায়,শুনেছে সেখানে দুটা দানব মানুষ নাকি মেরে তাদের রক্ত খেয়ে বেড়ায়।এটাও শুনেছে সেটা নাকি এক পুরোহিতের প্রেমিকার অভিশাপের ফল,পুরোহিত অভিশাপে বদলে গিয়ে পৌঁছেছে এখন এই দানব অবস্থায়।ভেবে দেখলো মারিয়া,অন্ততঃ মা বাবাকে তার জন্যে বেশী কোন কষ্ট পেতে হবে না,গরীবদের জীবনে হতাশা ছাড়া আর কিই বা আছে,তার দুঃখী মা বার যন্ত্রনা আরও বাড়িয়ে কি লাভ।তার বাবা মা অন্তত লোকজনকে বলতে পারবে,কোন এক সন্তান ছাড়া ধনী পরিবারের লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে তাদের মেয়েটাকে,হয়তো কোন একদিন ঘুরে আসবে তাদের মেয়ে খ্যাতি প্রতিপত্তি নিয়ে।একটু আশা ছিল মনে,হয়তো তার প্রেমিক মনের দুঃখে নিজেকে দায়ী করবে কথা না বলার জন্যে।
চিঠিটা আর লেখা হয়নি মারিয়ার,তার মা ঘরে এসে তার রক্তাত্ত চাঁদরটা দেখে বললো, ‘তুমি এখন আর ছোট্ট মেয়েটা নেই আর,তুমি এখন রীতিমত একটা মহিলা’।
মারিয়া বুঝে উঠতে পারে নি,পা দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তের সাথে মহিলা হওয়ার সম্পর্কটা কোথায়?মায়ের কাছে খুব একটা ভাল উত্তরও পেল না,তার শুধু এটুকুই বললো এটাই স্বাভাবিক,এর পর থেকে প্রতি মাসেই তিন চার দিন তাকে পুতুলের মত একটা বালিশ পা দুটোর মাঝে পরে নিয়ে চলতে হবে।জিজ্ঞাসা করলো মাকে,ছেলেরা কি ধরণের টিউব বা পাইপ ব্যাবহার করে যাতে তাদের কাপড়চোপড়ে রক্ত ছড়িয়ে না যায়।মায়ের উত্তরটা আরও অবাক করলো তাকে, ওটা নাকি শুধুই মেয়েদের শারীরিক সমস্যা,ছেলেদের না।
প্রথম দিকে মারিয়া বেশ অভিযোগ করতো বিধাতার কাছে,কেন এই অবিচার,কেন বিধাতার শুধু যন্রনা দেয়া মেয়েদের,কেন এই অত্যাচার শুধু মেয়েদের জন্যে,উত্তর পায়নি কোন,অন্যান্য অনেক কিছু মেনে নেয়ার মত,মেনে নিল মারিয়া মেয়েদের ঝতুস্রাবের পর্বটাও।
মারিয়া কোন মেনে নিতে পারেনি তার হারানো প্রেমপর্বের সুযোগটা,মেনে নিতে পারেনি তার নিজের ভুলটা,কেন যে সুযোগ পেয়েও কথা বলেনি আকাঙ্খিত প্রেমিকের সাথে।ছোট্ট শহরটার গীর্জায় যেয়ে সেইন্ট এন্থনীর কাছে প্রার্থনা করলো মারিয়া,নতুন স্কুল বছর এলেই,এবার সে ছুটে যাবে তার প্রেমিকের কাছে,উদ্যোগ নিয়ে কথা বলবে নিজেই।স্কুল যাওয়ার প্রথম দিনে মায়ের বানানো নতুন পোশাকটা পরে মারিয়ার স্কুলের প্রস্ততি ছিল আনন্দে,ছুটে গেল স্কুলের দিকে,আনন্দে ভঁরা মনটা ছুটি শেষ হওয়ায়।কিন্ত ছেলেটা স্কুলে আসেনি,বন্ধুরা তাকে জানালো শহর ছেড়ে চলে গেছে সে,নতুন কোন স্কুলে।অনেক চেষ্টা করলো মারিয়া প্রেমিকের খোঁজ বার করতে,কিন্ত পৃথিবীটা তো অনেক বড়,হতাশা ফিরিয়ে নিয়ে গেল তাকে আবার তার পুরোনোর আকাশে।
এটুকু বুঝলো মারিয়া ভালবাসা বড় ভয়ানক একটা রোগ,আর স্বর্গে বসে থাকা দেবতাদের সময়ই বা কোথায় মানুষের এসব এলোমেলো আবেদন শোনার।তিনটা বছর চলে গেল এভাবে,মারিয়া শিখলো পৃথিবী আর নানান দেশের কথা ভুগোলের বইটায়,শিখলো অঙ্কের দুই চার,টিভিতে নিয়মিত দেখা আরম্ভ করলো ধারাবাহিক নাটক।বন্ধুদের কাছ থেকে যৌন পত্রিকায় প্রথম দেখলো যৌনতার রুপটা পত্রিকার সাথে,দৈনন্দিন কথাগুলো লেখা আরম্ভ করলো রোজনামচায়।
তার বড়ই জানার আগ্রহ ছিল স্কুলে নতুন শেখা সমুদ্রের বাতাসের এপাশ ওপাশ ছুটে যাওয়ার কথাগুলো,মাথায় পাগড়ী পরা অদ্ভুত লোকদের গল্প,মনিমুক্তায় সাজানো সুন্দরীদের কাহিনী,কিন্ত একটা দিনমজুর আর দর্জির সন্তানকে কতটুকু সময়ই বা মানায় অযথার স্বপ্ন দেখা,ওগুলো শুধু যে স্বপ্নই তাদের কাছে।মারিয়া সব কিছু মেনে নিয়ে আবার সাধারণ জীবন যাত্রায় ফিরে এলো,খুঁজে বেড়ানো আরম্ভ করলো সেই বিশেষ মানুষটাকে,যার সাথে ভাগ করবে তার স্বপ্নগুলো।
প্রায় পনের বয়স,আবার প্রেমে পড়লো মারিয়া,ধর্মীয় মিছিলে দেখা একটা ছেলের সাথে।কিন্ত এবার আর ভুল করে নি মারিয়া,দেখা করলো,ভালবাসার কথা বলা আরম্ভ করলো,একসাথে যাওয়া আরম্ভ করলো নানান অনুষ্ঠানে,প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া দুটো মন।ভালবাসার জ্বালায় অস্থির দুটো মন,অনুপস্থিতির যন্ত্রনায় খুঁজে বেড়ায় একে অন্যকে।বেশীর ভাগ সময় কেটে যায় তার প্রেমিকের চিন্তায়,কি কথাগুলো বলবে,বলা না বলায় কোন ভুল যেন না হয়-প্রেমে পড়েছে মারিয়া।
মারিয়া মনে করে ভালবাসা,শরীর নিয়ে তার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে এর মাঝে-বুঝতে কষ্ট হয়নি কি ভাবে শুধু তার ভুলে,হারিয়ে গেছে ভালবাসার প্রথম দেশটা।এখন মারিয়া তাই দৃঢ়মনা পরিকল্পনায়,এই নতুন ছেলেটাই তার স্বপ্নের সেই রাজকুমার,এর সাথেই সংসার সাজাবে সে,সন্তান সন্ততি নিয়ে কাটিয়ে দিবে সমুদ্রের কিনারে জীবনের দিনগুলো।মারিয়া মাকে মনের ইচ্ছাটা জানালো,মা কিছুটা অবাক হয়েই বললো, “মা,তুমি তো এখনও অনেক ছোট,বিয়ের বয়স তোমার এটা নয়। ষোল সতের বছরে পৌছাও আগে,তখন না হয় চিন্তা করবে বিয়ের কথা”।তার মা বলতে চাইনি নিজের জীবনের কথা,হঠাৎ গর্ভধারণ কি ভাবে বদলে দিয়েছিল তার জীবনের গল্পটা।
পরের দিন তার ছেলে বন্ধু বা প্রেমিক যে ভাবেই বলা যায়,তাকে সাথে নিয়ে নদীর ধারে বেড়াতে গেল মারিয়া,নানান কথা বার্তার পরে বললো,দুজনে মিলে নতুন কোন এক যায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা,কোন উত্তর না দিয়ে ছেলেটা জড়িয়ে ধরে তাকে শুধু চুমুর পর চুমুতে অস্থির করে দিল।
চুমু!মারিয়ার প্রথম চুমু!তার স্বপ্নে সাজানো প্রথম অভিজ্ঞতা!গোধুলির সোনালী ছোঁয়াচ,ঘর ফেরা পাখীর সুর,কাশবাগানের নাচন,ভেসে আসা গানের কলি,অভিজ্ঞতার অভাব ছিল না মারিয়ার,সিনেমা,টিভিতে দেখা প্রেমিকাদের মত সেও,ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া আরম্ভ করলো,এটাই তো নিয়ম,ওটাই তো শিখেছে।তার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটে নিয়ে,জিভে টেনে এনে ছেলেটার জিভের স্বাদে মত্ত মন,এ অন্য একটা জগত,অন্য একটা স্বপ্নের রাজ্য।কিছুক্ষন পর হঠাৎ সবকিছু থামিয়ে ছেলেটা মারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কি ওটা চাও না?”
ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি,কিই বা বলার ছিল মারিয়ার?কি চাওয়া ছিল না,তার?তার মনটাও তো চাইছিল ঘটুক কিছু একটা,সেও খুঁজছিল শরীরের প্রথম আনন্দ উল্লাস।কিন্ত কোন মেয়ে এত সহজেই কি আর সম্মতি জানাতে পারে,তবে তার ভবিষৎ এর স্বামী ভাববে,চাইলে না করতে পারে না মারিয়া,তাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো।
কিছুক্ষন পর আবার চুমু খাওয়া আরম্ভ করলো ছেলেটা,তবে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তার আগের সেই উৎসাহ,চোখ দুটোও হারিয়ে ফেলেছে আনন্দের উচ্ছাস।হঠাৎ করেই থেমে গেল ছেলেটার চুমু খাওয়ার জোয়ার,চোখমুখ বেশ টকটকে লাল তখন,মারিয়ার সাহস ছিল না তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করার।দুজনে হাতে হাতে হাত ধরে বাড়ি ফিরে গেল যেন কিছুই ঘটেনি,সেই আগের সুরে,সেই পুরোনো সুরের দুটো মানুষ।
০০০০০
রাতে মারিয়া তার অভিজ্ঞতার কথাটা ডাইরীতে লেখার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না,জানে একদিন হয়তো বা কেউ না কেউ তার ডাইরীটা পড়বে,সবকিছু লেখতে হবে সাজিয়ে গুছিয়ে।
ভালবাসার মন,সম্পূর্ন পৃথিবীটাকে এনে দেয় হাতের মুঠোয়,ক্ষনকিছুর আগের কাশবাগানের দোলন,গোধুলির সোনালী মাদকতা,ভেসে আসা গানের কলিগুলোর স্বপ্ন,সবই কেমন জানি হারিয়ে গেল কোন সে অজানায়।“জীবন ছুটে যায় বাতাসের গতিতে,স্বর্গ থেকে নরকের দুরত্বও হয়তো তেমন একটা নয়,আর জানাগুলোই তো অজানা”।
পরের দিন মারিয়া তার বান্ধবীদের সাথে উৎসাহ নিয়ে আলাপ করা আরম্ভ করলো,প্রেমের প্রথম অভিজ্ঞতা।“প্রেম,ভালবাসা”,যাই হউক না সেটা,তার আনন্দ তো জানান দেওয়ায় পৃথিবীকে,পৃথিবীর বিশেষ কোন একজনের আনন্দ হওয়ার উৎস,সেটাতো তার একার না,সকলের সাথে ভাগ করে নিতে হবে।বান্ধবীরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল মারিয়ার গল্পগুলো জানার জন্যে,জানতে চাইলো সকলে প্রথম শারীরিক অভিজ্ঞতার উন্মাদনা।মারিয়া বেশ বড়াই করেই বললো তার ঠোঁটটা যখন ছেলেটার ঠোঁটটা ছুঁয়ে গেল,সেটা ছিল একটা নতুন আকাশ তার কাছে,একটা নতুন দিনের আলো।
একজন বান্ধবী জিজ্ঞাসা করলো,“চুমুর সময়,মুখটা খুলে দিস নি,তুই”?
“কেন”?
“তোর জিভটা প্রেমিকের জিভে ছুয়ে যাবে,সে উন্মাদনার স্বাদ”?
“কিই বা যায় আসে সেটাতে”?
“ওটা ঠিক কি ভাবে বোঝাবো তাকে,তবে ওটাই তো চুমু খাওয়ার চরম আনন্দ,ওটা ছাড়া চুমু তো শুধু ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ানো’।
মূচকি হাসি,ধাক্কাধাক্কি,চিমটি কাটাকাটি করে বান্ধবীদের বুঝিয়ে দিল অদ্ভুত একটা প্রতিশোধের আনন্দ,তারা খুঁজে পায়নি শরীর,ভালবাসার সেই অজানা অভিজ্ঞতা।মারিয়াও যোগ দিল তাদের আনন্দে,তবে মনটা ভঁরা ছিল তার দুঃখে কান্নায়।রাগে দূঃখে গালাগালি দিল মনে মনে তার দেখা সিনেমাগুলোকে,কেন তারা ঠিকমত শিখিয়ে দেয় নি চুমু খাওয়ার পদ্ধতি,কেন তারা জানিয়ে দেয়নি শরীরের এই উন্মাদনার গল্পটা।মারিয়া ভেবে নিল কি বলবে তার ছেলে বন্ধুটাকে,(আমি নিজেকে সপে দিতে চাইনি তোমার হাতে প্রথম দেখায়,তবে এখন তো জানা আমার তুমিই আমার জীবনের সব,তুমিই একমাত্র ভালবাসা আমার)।পরের বার মারিয়ার দেখা হলো তার ছেলে বন্ধুর সাথে,এক অনুষ্ঠানে তখন সে মারিয়ার বান্ধবীকে জড়িয়ে চুমু খাওয়াতে ব্যাস্ত,যে বান্ধবীটা তাকে প্রশ্ন করছিল চুমু নিয়ে।মারিয়া এমন ভাবভঙ্গী করলো যেন কোন কিছুই ঘটেনি,অন্যান্য বান্ধবীদের সাথে সিনেমা টিভি নিয়ে গল্প করায় মত্ত হয়ে পড়লো।বাড়ী ফিরে মনে হলো আকাশটা ভেঙ্গে পড়েছে মাথায়,ঠিক করলো প্রেম ভালবাসা এগুলো তার জন্যে নয়,এই জীবনযাত্রা তার জন্যে নয়,সে নিজেকে উৎসর্গ করবে ঈশ্বরের ভালবাসায়,যে ভালবাসায় কান্না নেই,যে ভালবাসা রেখে যায় না কোন চিরস্থায়ী কলঙ্ক,সৃষ্টিকর্তার ভালবাসা,সেই সর্বশক্তির ভালবাসায়।স্কুলে শুনলো নানান ধর্মীয়দলের কথা যারা আফ্রিকায় গিয়ে সাহায্য করে সেখানকার দুস্থ মানুষদের।ঠিক করলো যোগ দেবে কোন গির্জায়,প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যাবে আফ্রিকায়(কিছু শিক্ষকদের মতে আফ্রিকায় প্রচুর লোকজন কোন চিকিৎসাই পায় না)।বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে,ইচ্ছা ছিল হবে নতুন যুগের নতুন সাধুসন্ত একজন,রক্ষা করবে আফ্রিকার দুস্থ মানুষদের জঙ্গলের বাঘ সিংহ,প্রকৃতির বির্পযয় থেকে।
পনের বছর বয়স যখন,মারিয়া জানতে পারলো চুমু খাওয়ার নিয়মটাই হলো মুখটা খোলা রেখে জিভের সাথে জিভের স্বাদে,আর ভালবাসা সেটা আর কিছু না,শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়ার আরেকটা নতুন আঙ্গিনা।নতুন কিছু একটা আবিষ্কার করলো মারিয়া,হস্তমৈথুন।অদ্ভুত অজানা হঠাৎ এক আবিষ্কার,মা এর জন্য একা অপেক্ষা করছিল বাসায়,কোন কারন ছাড়াই ছুঁয়ে যাছিল তার যোনীদ্বার,তারপর থেমে থাকতে পারেনি আর-অভাবনীয় অজানা একটা আনন্দ,ছুঁয়ে গেল একটা বৈদ্যুতিক ঝলক তার সারা শরীরটায়,ক্ষনকিছু আর সে ছুটে গেল রুপকথার নতুন দেশে।ছোটবেলায় একবার এই বদভ্যাসের জন্যেই বাবার হাতে প্রচন্ড মার খেয়েছিল মারিয়া,কিন্ত কারণটা বুঝতে পারেনি।পরে বুঝতে পেরেছে লোকজনের সামনে ওভাবে যোনীদ্বারে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করা অশোভনীয়,অশ্লীল,নোংরামী একটা।
রাস্তার মাঝে তো আর ওভাবে যেখানে সেখানে হাত দিয়ে আনন্দ উপভোগ করা যায় না,তা ছাড়া তার নিজের জন্যে কোন ঘরও নেই,তাই আনন্দের ঐ উপসর্গটা ভুলেই যেতে হলো মারিয়াকে।
সেই বিখ্যাত চুমু খাওয়ার ঘটনার মাস ছয়েক পরে হবে হয়তো,মারিয়ার মার বাড়ি পৌছাতে বেশ একটু কিছুটা দেরী হচ্ছিল,বাবাও ছিল না বাড়ীতে,টিভিতে পচ্ছন্দমত কোন ধারাবাহিক নাটক না পেয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো নিজের যোনীদ্বার পরীক্ষায়।উৎসুক্য ছিল অন্যান্য বয়স ছুয়ে যাওয়া ছেলেময়েদের মত গোপন জায়গায় বয়সের লোম গজানো পরীক্ষা করার,কিন্ত অবাক চোখে দেখলো যোনীদ্বারের কাছে একটা অজানা মাংসগ্রন্থি।ধীরে ধীরে সেই মাংসগ্রন্থিটা নাড়াচাড়া করে খেলা আরম্ভ করলো,তারপর আর থামা সম্ভব ছিল না,সারা শরীর টান টান হয়ে পড়লো তার, না জানা এক স্বর্গীয় আনন্দ ছুটে যাচ্ছিল সারা শরীরটায়।মারিয়া পৃথিবী ছাড়ানো আরেক পৃথিবীতে, রঙ্গীন আকাশটা নানান রং ভঁর্রে যাওয়া।গোঙানো আরম্ভ করলো মারিয়া,তারপর এলো যোনীদ্বারের উল্লাস র্নিগমন,আর অজানা এক চরম সুখানুভুতি।
এ যেন বাতাসে ভেসে যাওয়া সশরীরে,প্যারাচুটে ভর করে চলে যাওয়া এক পৃথিবী থেকে আরেক পৃথিবীতে।সারা শরীর ভেসে গেছে ঘামে,ক্লান্তি নেই তবু,নবজন্ম তার।এটাই যদি সহবাস হয়,যদি ওটাই ভালবাসার শারীরিক যোগ,তবে নিঃসন্দেহে এটা তার অজানা অদ্ভুত এক আনন্দ!নানান কামপত্রিকার যা বর্ননা,যে আনন্দ আছে বেদনার সুরে,একেবারেই তা নয়।আর দরকারই বা কি সেই পুরুষদের যারা শুধু খুঁজে নেয় মেয়েদের শরীরটা নিজের আনন্দের জন্যে,একটুকুও বিচার করে না মেয়েদের অনুভূতিগুলো।বুঝতে পারলো,সে খুঁজে নিতে পারে সেই স্বর্গসুখ নিজে নিজেই,কদিন পর একজন নামকরা চিত্রতারকার কথা ভেবে ভেবে আবার খুঁজে নিল তার সেই চরম সুখানুভুতি।নবজন্মের মারিয়া,কিন্ত যখন তৃতীয় বারের মত খেলা করছিলযোনীদ্বার নিয়ে,মা হঠাৎ ফিরে এলো বাড়ীতে,সবকিছুর সমাপ্তি সেই মুহুর্তে।
মারিয়া তার বেশ কজন বান্ধবীদের সাথে আলাপ করলো তার নতুন আবিষ্কারের কথা। বান্ধবীদের মধ্যে দুজন ছাড়া আর মোটামুটি সকলেরই জানা ছিল মারিয়ার অভিজ্ঞতার কথা,কিন্ত কেউ সাহস করে কোনদিন আলোচনা করেনি কথাগুলো।মারিয়া তখন এক বিপ্লবী নেতা,আবিষ্কার করেছে ‘গোপন এক খেলা’,যেখানে সবাই বলবে তাদের হস্তমৈথুনের অভিজ্ঞতা।
শিখলো নতুন নতুন পদ্ধতি,হাসের পালক দিয়ে ঐ জায়গাটা নাড়াচাড়া করা(মারিয়ার জানা ছিল না অঙ্গের নামটা),বিশেষ এক ধরণের তেল ছড়িয়ে খেলা করায় নাকি আনন্দটা আরও বেশি পাওয়া যায়,তা ছাড়া ছেলেরা তো আছেই।তার ধর্মীয় অভিযানের চিন্তাটা বাদই দিল শেষমেষ।হস্তমৈথুনের যে আনন্দ সেটা তো একটা স্বর্গীয় অনুভূতি অথচ গীর্জার পুরোহিতদের কাছে কেন যে সেটা নিষিদ্ধ,বুঝতে পারেনি সে।বান্ধবীদের কাছে এটাও শুনলো,হস্তমৈথুনে অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,অনেকের শরিরে নানান রকম দাগ ও দেখা দেয়,কেউ কেউ নাকি আবার গর্ভধারনও করেছে।যতই যা হউক না কেন,সে জড়িয়ে পড়লো হস্তমৈথুনের রাজ্যে,বিশেষ করে বুধবারে,তার মা বাবার দুজনের অনুপস্থিতিতে।
ছেলেদের সাথে সম্পর্কের রাজ্যটা তখন পিছনে ফেলে আসা পুরোনো একটা গল্প।
মনে শুধু একটা প্রশ্ন-কবে ঘর ছাড়বে,কবে হবে তার নিজের থাকার একটা জায়গা,নিজের আনন্দে মত্ত হঊয়ার স্বাধীনতা।প্রেমে পড়লো তৃতীয় বার,চতুর্থ বারের মত,চুমু খেতে জানে শিখেছে সে।মনের ছবিতে খুব সহজেই খেলা করে ছেলেদের লিঙ্গ নিয়ে,দ্বিধা নেই আপত্তিও হয়না-ছেলেদের লিঙ্গ ছোঁয়া তার যোনীদ্বার।তার প্রেমের সম্পর্কগুলো শেষ হতে তেমন একটা সময় লাগেনা,ভালবাসার পর্ব এক এক ফুরিয়ে যায়।ঠিক করলো মারিয়া শেষে ভালবাসা,বিয়ে এই ব্যাপারগুলো তার জন্যে নয়।ক দিন পরে পার্কে দেখলো বছর দুই এর একটা ছেলে বসে বসে দুষ্টুমি করছে তার মা এর সাথে,সম্পূর্ন দৃশ্যটা মারিয়ার চিন্তাধারা বদলে দিল একেবারে।না তার সংসার চাই,স্বামী হবে,সংসার হবে,ছেলেমেয়ে সমুদ্রের ধারের বাড়ীটা,
বদলাবে জীবনের পাতাগুলো, তবে ভালবাসা পর্বটা বাদ দিলে কোন ক্ষতি তো নেই।
কৈশোরটা হারিয়ে যেতে খুব একটা সময় নেয় নি,সুন্দরী চেহারার যৌবনের নতুন মারিয়ার- ম্লান দুঃখী চেহারাটা পাগল করে দেয় যে কোন পুরুষের মন।নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করা সত্বেও কাঁটাতে পারেনি ভালবাসার মোহ কাটাতে পারেনি মারিয়া,একের পর এক প্রেমিকের ভালবাসার স্রোতে ভেসে গেছে,ভাঙ্গা মন নিয়ে কদিনেই ফিরে যায় পুরোনোয়।
এ রকম কোন একটা দিনে একটা গাড়ীর পিছনের সিটে সতীত্ব হারালো মারিয়া,একে অন্যকে ছোঁয়াছুয়ি করছিল সে আর তার প্রেমিক আকুলভাবে।ছেলেটা নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি,ঘটে গেল কিছু একটা,তবে ওটাতো হস্তমৈথুন ছিল না,ছেলেটার লিঙ্গ প্রবেশ করলো তার যোনীদ্বারে,আরেক অভিজ্ঞতার নতুন পর্ব।সব বান্ধবীদের মাঝে সতী হিসেবে একমাত্র ব্যার্থতার চেহারাটা নিয়ে সাজিয়ে থাকতে চায়নি,একটু ব্যাথা একটু কাতুকুতু,রক্ত বের হয়ে বেশ একটা দাগও ছিল পোশাকে,সেটা অনেকদিন পরিষ্কার করেও সরাতে পারেনি ।যদিও ছিল না তার প্রথম চুমুর আমেজটা,গোধুলির সোনালী আলো,কাশবাগানের দোলন,তবে ওগুলো নিয়ে আর ভাবতে চায় না মারিয়া।
সেই একই ছেলের সাথে আরও বেশ কবার হলো যৌনমিলনের খেলা,যদিও সেটা ছিল ছেলেটার অনিচ্ছায়,ভঁয় দেখাতো ছেলেটাকে সে,যদি তার কথামত কাজ না করে,জানিয়ে দিবে তার বাবাকে তাকে ধর্ষন করেছে বলে।ছেলেটা মারিয়ার নতুন শেখার দেশ,নানান ভাবে হয় তাদের যৌনমিলন,তবুও সে বুঝে উঠতে পারেনা একজন সঙ্গী থাকায় আনন্দটা বেশি কোথায়।বুঝতে পারেনি মারিয়া হস্তমৈথুন সেটাতে তো ঝামেলা অনেক কম,তবে কেন টিভি,সিনেমায়-বা বান্ধবীরাও কেন যে বলে শরীর সুখের চরম আনন্দে দরকার একজন পুরুষ।সে ধরেই নিল নিশ্চয় তার কোন শারীরিক সমস্যা আছে,না হলে কেন খুঁজে পেল না পুরুষের সাথে সেই চরম সুখ।কিছুদিনের জন্য মারিয়া ভুলে গেল যৌনমিলনের কথা,ব্যাস্ত হয়ে পড়লো লেখা পড়া নিয়ে,ভুলে গেল সেই নিষ্ঠুর ভালবাসার পর্ব।
এটা মারিয়ার ডাইরী থেকে নেয়া,তার বয়স যখন সতেরঃ
“আমি জানতে চাই,ভালবাসা সেটা কি জিনিষ।বেশ মনে পড়ে আমার সেই দিনগুলোর কথা যখন মনে হতো ভালবাসায় আছে একটা রঙ্গীন আকাশ,যতটুকু আনন্দময় হউক না কেন,চাই না আমার ভালবাসার ঐ জগতটা।আমি দেখেছি আমার বান্ধবীদের ভালবাসার যন্ত্রনা,কি দরকার ঐ যন্ত্রনা-ক্ষনিকের আনন্দের জন্যে?এক সময় বান্ধবীরা হাসাহাসি করতো আমার সরলতা নিয়ে,এখন তারাই জানতে চায় আমার হাসির উৎস,তবে ঔষধটা যে রোগের চেয়েও বেদনাদায়কঃভালবাসায় বিশ্বাস নেই আমার।যতই দিন যায় ততই দেখি আমি পুরুষদের নগ্নতা,কত ভঙ্গুর তারা,ক্ষনে ক্ষনে বদলায় চেহারা,একটা…অবিশ্বাস্য আমার কজন বান্ধবীর বাবাও যৌনমিলনের প্রস্তাব করতে দ্বিধা করেনি,যদি ও খুব সহজেই তাদের প্রত্যাখান করতে অসুবিধা হয়নি কোন।প্রথম দিকে সেটা ছিল আমার অবাক হওয়ার পালা,এখন মনে হয় ওটাই পুরুষদের ধরণ।
তবুও আমি জানতে চাই ভালবাসা সেটা কি,যদিও ভুলতে পারিনি আমার ভালবাসার চেহারাগুলো,যদি ও তারা ছুঁয়ে গেছে আমার হৃদয়,তবে তারা কেউ জাগাতে পারেনি আমার শরীরের আগুন।আর যারা জাগিয়েছে শরিরের আগুন তারা ছুঁতে পারেনি মনটা আমার”।
সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত চতুর্মাত্রিক।
তারিখঃ জুলাই ১১, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,