ডলার সংকটে পড়ে এলসি খোলা কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ছোট কিছু ব্যাংক এখন কোনো ধরনের এলসি খুলছে না। আগের এলসির দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। ডলারের বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনের চেষ্টা করলেও তাতে সাড়া নেই। সম্প্রতি চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাড়া মিলছে না গ্রাহকদের দিক থেকেও। সংকট উত্তরণে আমদানি কমানোকে একমাত্র সমাধান দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য এলসি খোলায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা।
এমন বাস্তবতায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক খাতের বিশিষ্টজন অংশ নেবেন। সেখানে চলমান ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যদিকে, ডলার সংকট কাটানোর উপায় নির্ধারণে আজ আবার বৈঠকে বসছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা। বৈঠকে প্রবাসী আয়ে আরোপিত চার্জ পুরোপুরি মওকুফের প্রস্তাব এবং দেশের বাইরে ছুটির দিনে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সুবিধাভোগীর কাছে দ্রুত রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছানো, এক্সচেঞ্জ হাউস বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। গত ৩১ অক্টোবর সংগঠন দুটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পর এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে। যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর কারণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেভার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়।
আমদানি কমাতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের পাশাপাশি এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিচ্ছে, এই এলসি খোলা যাবে না। বিশেষ করে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ফুল, ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রে অনাপত্তি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, এ ধরনের পণ্যের এলসি খোলার খুব কম দিনের মধ্যে পণ্য এসে যায়। দায় পরিশোধও করতে হয় দ্রুততম সময়ে। এসব পণ্যের বাইরে অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে ডলার সংস্থান না করে এলসি না খোলার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। ফলে এখন রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাকের বাইরে এলসি হচ্ছে খুব কম। অধিকাংশ ব্যাংক এখন এলসি খোলার আগে আমদানিকারককে ডলার সংগ্রহ করার শর্ত দিচ্ছে। আর আগের দায় পরিশোধে দফায় দফায় সময় নিচ্ছে। ফলে নতুন প্রজন্মের ও ছোট ব্যাংক এলসি খোলা এক রকম বন্ধই রেখেছে। একটি বড় শিল্প গ্রুপ বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের দায় পরিশোধের মতো ডলার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। গত সপ্তাহে ওই গ্রুপের পক্ষে ব্যাংকটি কোনোমতো ৭ মিলিয়ন ডলার জোগাড় করলেও বাকি ৮ বিলিয়ন ডলার বকেয়া রাখা হয়েছে।
সূত্র:সমকাল।
তারিখ:নভেম্বর ০৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,