শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে। সত্যতা জানতে প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপি স্যারের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে চিতলিয়া ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না, সবাই সিলেক্টেড হবে। এই কথা এমপি মহোদয় বলেছেন।’
শরীয়তপুর-১ (সদর উপজেলা ও জাজিরা) আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে এক প্রার্থীর কথোপকথনের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের কক্ষে এসে তাঁদের মনোনয়নপত্র কীভাবে প্রত্যাহার হলো জানতে চান। জবাবে আলমগীর হোসেন ওই মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁকে অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল।
গতকাল বুধবার সকালে চিতলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২৫ জন সদস্য প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। প্রত্যেকেই অভিযোগ করেন, তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তাঁদের স্বাক্ষর জাল করে এমনটা করা হয়েছে। তাঁরা সবাই চান নির্বাচন হোক।
জানতে চাইলে সাংসদ ইকবাল হোসেন গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এমন কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক আমি? এগুলো সব মিথ্যা কথা। আমি যতটুকু জানি, ওখানে দুই পক্ষ মিলেই এটা করেছে। সালাম হাওলাদার ও হারুন হাওলাদার মিলে এটা করেছেন।’
আর রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী বিধিমালায় নেই কারও নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হবে। কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি স্যারের সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলাম, তা এখন বলতে পারব না।’
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, গত মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৪০-৫০ জন প্রার্থী ও তাঁদের পক্ষের লোকজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন সেদিন। তাঁদের স্বাক্ষর মিলিয়ে তাঁরা ওয়ার্ডগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। কেউ অস্বীকার করলে তাঁরা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন।
চিতলিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন অর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের সদস্য ও তিনটি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে পছন্দের লোকদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করতে স্বাক্ষর জাল করেছেন বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সদস্য পদে মনোনয়নপত্র কারা প্রত্যাহার করেছেন, কেন করেছেন, জানি না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে কাউকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।’
আগামী ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদরের ১০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চিতলিয়া ইউপিতে ৪৮ প্রার্থী ইউপি সদস্য পদে এবং ১২ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এবং তাঁদের মনোনয়ন বৈধ বলে গণ্য হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে তাঁদের মনোনয়ন গত মঙ্গলবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে গতকাল কমপক্ষে ২০ জন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেননি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চিতলিয়া ইউপিতে সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল হাই মৃধা, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ছলেমান হাওলাদার, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নান্নু মাল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফারুক মুন্সি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তরিকুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ধীরেন হালদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সালাম তালুকদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অলিলুর রহমান সরদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এস আজিজুল হক। আর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হতে চলেছেন ১, ২, ৩ নম্বরে মনোয়ারা বেগম; ৪, ৫, ৬ নম্বরে রাজিয়া বেগম ও ৭, ৮, ৯ নম্বরে নীলুফার ইয়াসমিন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক সদস্য প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর জাল করে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ছুটে এসেছি। কিন্তু তিনি কোনো সহযোগিতা না করে এমপি স্যারের এমন সিদ্ধান্ত ছিল, তা জানিয়ে দিয়েছেন। আবার যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, হারুন অর রশিদ, তিনি মোবাইল ফোনে বাড়াবাড়ি না করার জন্য শাসাচ্ছেন।’
চিতলিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আয়ুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। গতকাল সকালে প্রতীক নিতে এসে জানতে পারেন, তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা জানান, তাঁদের স্বাক্ষর জাল করে কেউ এমন কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ দেশ চালায়, আর এমন সময় তাঁদের সঙ্গে এ আচরণ কীভাবে করা হলো! তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই ওয়ার্ডে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যক্তিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ২৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,