ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান।
[কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। ফলে শুক্রবার (১৯ জুলাই ২০২৪) প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকার এখন অনলাইনে প্রকাশ করা হলো।]
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৫: ২১
প্রথম আলো: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি কীভাবে দেখছেন?
জিনাত হুদা: দুঃখজনক। এতগুলো প্রাণ গেল, যা কারও কাম্য হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, সেগুলো যৌক্তিক। আমার মতে, প্রথমে আন্দোলনটা শান্তিপূর্ণভাবেই এগোচ্ছিল। কিন্তু পরে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলো। শিক্ষার্থী, পথচারী, হকারসহ অনেকেই মারা গেলেন। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটল, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিন্তু বলেছেন, তাঁরা এর দায় নেবেন না।
প্রথম আলো: এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?
জিনাত হুদা: সংকট উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন। আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তো সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণ দেখি না। আমরা মনে করি, একটা ভালো সমাধান হবে।
প্রথম আলো: সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন আর শিক্ষার্থীদের হাতে নেই। রাজনৈতিক শক্তি ঢুকে গেছে। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?
জিনাত হুদা: আমার হাতে তথ্য–প্রমাণ নেই। তবে শিক্ষার্থীরাও বলেছেন, এই যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, এগুলো তাঁরা করেননি। সে ক্ষেত্রে আপনারাই খুঁজে বের করুন, এগুলো কারা করেছেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমার ৩১ বছরের শিক্ষকতাজীবনে এ রকম ঘটনা দেখিনি।
প্রথম আলো: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত অঘটন ঘটল, সহিংসতা হলো। এর প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করল? তাদের দায়িত্ব কি শুধু সরকারের আদেশ মেনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া?
জিনাত হুদা: শুক্রবারই সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে অধ্যাপক হারুন উর রশিদকে প্রধান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনার নিন্দা করেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর যারা হামলা করেছে, আমরা তাদের শাস্তি দাবি করেছি। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়।
প্রথম আলো: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে আপনি কি মনে করেন না অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত?
জিনাত হুদা: আমি মনে করি, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দ্রুতই কোটা সমস্যার সমাধান হবে। আর সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেও কোনো সমস্যা হবে না। ক্যাম্পাসে অবিলম্বে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কেবল শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেই। শিক্ষকেরাও ১ জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি কী।
জিনাত হুদা: শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। আমরা প্রতিদিন এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই কর্মসূচি স্থগিত আছে। তবে আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষকদের আন্দোলনে যাওয়ার কারণ, এত দিন তাঁরা যে সুযোগ-সুবিধা পেতেন, বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম প্রত্যয়ে সেটা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা আমাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরেছি। তাঁরাও আমাদের যুক্তিগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম এ বছর কার্যকর হবে না। সরকারি কর্মচারীদের মতো আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে। এ বিষয়ে আরও বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সেটি হয়নি।
প্রথম আলো: কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন?
জিনাত হুদা: দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক, নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা হোক—একজন শিক্ষক হিসেবে সেটা আমারও চাওয়া। শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আমরা বৈষম্যের বিরোধী। সরকারও তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছে। মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে তারা। ২১ জুলাই রোববার আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে আশা করা যায়।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
জিনাত হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৪,২০২৪
রেটিং করুনঃ ,