ফেব্রুয়ারি মাসে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য সূচক সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে—১৪০ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
নিম্ন আয়ের ও গরিব মানুষেরা দৈনন্দিন যে ব্যয় করেন, তার বড় অংশই যায় খাদ্যের পেছনে। সে জন্য দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে তাঁরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েন। দুই বছর ধরে চলমান মহামারির কারণে খাদ্যসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে তরতর করে সবকিছুর দাম বাড়ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য সূচক সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে—১৪০ দশমিক ৭ পয়েন্ট। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় যা ২৭ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে মূলত উদ্ভিজ্জ তেল ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যমূল্য সূচক এতটা বেড়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন গমের ভান্ডার। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে গমের দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে। ফলে যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ প্রভাব এখনো খাদ্যের দামে পড়েনি বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। চালের পর গম অন্যতম প্রধান খাদ্য, ফলে গমের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মানুষের জীবনে পড়বেই। আর যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলেই শঙ্কা।
এফএওর তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের গড় খাদ্য সূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। তবে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই খাদ্যমূল্য বাড়তে শুরু করে। ফলে অক্টোবর মাস থেকে খাদ্যমূল্য সূচক ১৩৩-এর ওপরে থাকছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাস খাদ্যের মূল্য সূচক বাড়ল।
বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের হিসাব অনুসারে, শহরের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো গড়ে তাদের মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। আর গ্রামীণ প্রান্তিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবিএস এ ক্ষেত্রে যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় এ হার অনেক বেশি। বিবিএসের হিসাবে শহর ও গ্রামের পরিবারগুলো তাদের মোট খরচের যথাক্রমে ৪৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্যের পেছনে খরচ করে।
খাদ্যের দাম বেড়ে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে খাবারের ব্যয় কমানো ছাড়া উপায় থাকে না। খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে দামি হচ্ছে প্রোটিন, তাই অবধারিতভাবে তারা প্রোটিন খাওয়া কমিয়ে দেয়। কিন্তু এর ফল পরবর্তী প্রজন্মকে ভোগ করতে হয়।
বিশ্লেষকেরা বলেন, বিশ্বের বহু দেশের শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। প্রাণিজ প্রোটিন তাদের দ্রুত সুস্থ করতে সক্ষম। নিরামিষ প্রোটিন বিকল্প খারাপ, তা নয়। তবে প্রাণিজ প্রোটিন এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ২১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,