03
প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ, বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম তাঁর ফার্সী ভাষায় লিখা তাঁর এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এর অর্থ অনেক কবির সাথে এর বাংলা অর্থও করেছেন।
প্রসিদ্ধ ইরানী কবি ওমর খৈয়াম ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- লিখেছেন।
গর্ বর ফলকম্ দস্ত বুদি চুন ইয দান
বরদাশতমি মান ইন ফলক রা য মিয়ান
আয্ নু ফলক দিগর চানান সাখতামি
কাযাদেহ্ বেকামে দিল্ রসিদি আসান।।
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
Ah Love ! could you and I wish Fate conspire
To grasp this sorry Scheme of Things entire,
Would not we shatter it to bits – and then
Re-mould it nearer to the Heart’s Desire !
( Rubai CVII )
নূরুন নাহার বেগম নামে একজন লেখিকা বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন-
যদি এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডেরের ঘুর্ণায়মান চক্রে সৃষ্টিকর্তার মত ওমর খৈয়ামের কোন হাত থাকত তবে আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীকে তিনি ছিনিয়ে নিতেন, ওমর খৈয়াম এমন একটি পৃথিবী সৃষ্টি করতেন যেখানে মানুষের সকল বাসনা আশা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে।
আমাদের এই পৃথিবীতে, আমাদের এই সমাজে কখনও কখন্ও মানুষ সৃষ্ট কখনও বা প্রকৃতি সৃষ্টি এমন সব ভয়াবহ দূর্যোগ, যন্ত্রণা, কষ্ট দুখ এসে অচমকা এমন ভাবে আঘাত হানে যা সাধারণ মানুষের জন্য মনে নেওয়া বা সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়। অনেকে কঠিন সত্যকে কঠিন বাস্তুবতাকে মেনে না নিয়ে কল্পনায় কষ্টের বদলে আনন্দ, যন্ত্রণার বদলে আরাম, দুখের বদলে সুখের সন্ধান করে। মানুষের এই সব অবাস্তব কল্পনাকে একটি বাস্তব রূপ দেওয়ার কথা ওমর খৈয়াম ভেবেছিলেন যখন মানুষ মাত্রই কিছুটা বাস্তববাদী, কিছুটা অবাস্তবকে কল্পনায় ভর করে চলতে চায়। এই ধারা থেকে ওমর খৈয়ামও বাদ পড়েন নি। আমাদের মনের অনেক গভীরে যে অবাস্তব কল্পনা লুকিয়ে থাকে যাকে ভর করে ভয়াবহ দূর্যোগ, যন্ত্রণা, কষ্ট দুখ লাঘবের চেষ্টা করলেও তা হয় তো কখনও প্রকাশ করতে পারে না, কিন্তু ওমর খৈয়াম তার দর্শন তত্ব দিয়ে তার রুবাইয়ে তা উল্লেখ্য করে গিয়েছেন।
কান্তি ঘোষের অনুবাদেঃ
নিয়ৎ দেবীর চরকা – সূতোর
ধরতে পারি খেইটা আজ,
ভাগ্য সাথে ষড় করে তার
ঢুকতে পারি দুয়ার মাঝ।
নিষ্ঠুর পায়ে চূর্ণ করি
বিশ্ব সৃজন কল্পনায়,
নূতন ষুষ্টি গড়তে প্রিয়া,
পারব নাকি দুই জনায়।
জীবনের সংকটময় মূহর্ত্বে কিছু সামলিয়ে নেওয়ার জন্য বা দূর্যোগ ও যন্ত্রণাবোধ থেকে প্ররিত্রাণ লাভের জন্য আমাদের নানান সব অবাস্তব কথা বুকে বেধে চলতে হয়, তা না হলে যে জীবন যে শুকিয়ে যায়, জীবনের চলাচল যে থেমে যায় সেখান থেকে জীবনকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন অবাস্তব কল্পনার প্রবাহ, অবাস্তব স্বপ্ন দেখার এক শক্তি।
একই ভাবে নরেন্দ্র দেবের অনুবাদে:
তিমি, আমি, প্রিয়তমে
নিয়তির সাথে
ষড় করি যদি আজ
মিলি হাতে হাতে,
পারিতাম ধরিবার
সৃজনের ভুল-
উৎপাটন করি এই
বিশ্বেনে সমূলে,
চূর্ণ করি তারে
ধূলি-কণাবৎ
গড়িতাম মনোমত
নূতন জগৎ।।
তিনিও একটি নূতন বিশ্বের কথা তার অনুবাদে ছন্দে মলিয়ে লিখে গিয়েছেন।
তারিখ: মে ০৭, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,