বিশেষ সাক্ষাৎকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস
উদ্বেগের বিষয়গুলো খোলা মনে আলোচনা করতে চাই
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ।
বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিরিখে মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র।
এ অঞ্চলে ব্যবসার বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার সময় এসেছে।
গত মাসে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিয়েছেন পিটার হাস। তিনি দুই দেশের সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ।
প্রথম আলো: ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে এক ভিন্ন আবহে কাজ শুরু করলেন। র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলেছে। আবার দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি, অংশীদারত্ব সংলাপ, নিরাপত্তা সংলাপসহ নানা পর্যায়ের আলোচনায় আছে দুই দেশ। এমন এক সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব নেওয়ার অনুভূতি কেমন?
পিটার হাস: দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য রোমাঞ্চের। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। রাজনীতি, মানবাধিকার, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা খাতে আমাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সম্পর্কের পরের ৫০ বছরের পর্বটা হবে অসাধারণ। আর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা যে দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ, তা খুব স্পষ্ট।
প্রথম আলো: সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কয়েক গুণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ। এমন ধারণাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
পিটার হাস: আমাদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়তে থাকুক, সেটা আমিও চাই। এ বিষয়গুলোতে দুই দেশের সহযোগিতা এখন অনেক গভীর ও বহুমাত্রিক। মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি বাংলাদেশে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি জোরদার করা, সমান্তরালভাবে সামরিক বাহিনীর অভিযান পরিচালনার সামর্থ্য বাড়ানো এবং অংশীদারত্ব নিবিড় করা ছিল টাইগার লাইটিনিং ২২ নামে পরিচিত ওই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য আমাদের প্রশিক্ষণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন। এটি হলো মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে থাকবে মানবাধিকার। তাঁর ওই অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব এবং সংস্থাটির কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: ঢাকাকে দিল্লির চোখ দিয়ে দেখে ওয়াশিংটন, এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এ ভাবনা সম্পর্কে আপনার মত কী?
পিটার হাস: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিরিখেই বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিরও অন্যতম। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশ বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে আমরা অংশীদার হিসেবে দেখি।
গণতন্ত্র ও সুশাসন দুই দেশের সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডাকা গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশকে সম্মেলন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা কতটা যৌক্তিক?
পিটার হাস: প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুই দফা গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনের প্রথমটির আয়োজন করেছেন গত ডিসেম্বরে। অঞ্চল ও দেশের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রাখার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশকে তিনি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান। গণতান্ত্রিক সংস্কারে গতি আনার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো জনগণের স্বার্থে অর্থবহ কিছু করছে, এটা নিশ্চিত করাই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের কিছু উদ্বেগ আছে, যা এ দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আমরা তুলে ধরছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। শ্রমিকদের সংগঠিত হতে না পারাটাও আমাদের উদ্বিগ্ন করে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খোলামনে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।
মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার এবং সব নাগরিকের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি গতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকেও বর্ণবৈষম্য বিলোপ ও বঞ্চনা দূর করার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আন্তর্জাতিকভাবে ২০২১ সালকে ‘পদক্ষেপের বছর’ ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার, সুশাসনের বিকাশ, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিকাশের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের এ উদ্যোগে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাই।
সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছেন, ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের (আইপিএস) অধিকাংশ উপাদানে বাংলাদেশকে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র কি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে আইপিএসে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে?
পিটার হাস: আইপিএস নিয়ে ব্যাপক ভুল ধারণা আছে। যেমন, এটি কোনো সামরিক জোট নয়। এটা এমন কোনো উদ্যোগ নয় যে রাষ্ট্রসমূহ এতে ‘যোগ’ দেবে। এটা এমনও নয় যে রাষ্ট্রগুলোর কাছে ‘পক্ষ বেছে নাও’ এমনটা বলা হবে। আইপিএস হচ্ছে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে অবাধ, মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সহিষ্ণু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের নিজেদের অঙ্গীকার। আমাদের এই স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের অনুরূপ। গত বছর প্যারিস পিস ফোরামে তিনি অবাধ, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ব্যাপারে বাংলাদেশের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একার পক্ষে যে আইপিএসের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়, সেটা আমরা বুঝি। আমাদের এসব লক্ষ্যের সঙ্গে যাদের মিল আছে, তাদের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে। এ অঞ্চলে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিনিয়োগের অধিকাংশ জ্বালানি খাতে। যুক্তরাষ্ট্র কি বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে চায়? যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশের কোথায় কোথায় উন্নতি করাটা জরুরি?
পিটার হাস: এ অঞ্চলে ব্যবসা বিকাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আছে বাংলাদেশ। আমরা মে মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের অপেক্ষায় রয়েছি। গত বছর প্রতিষ্ঠিত ওই পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি বড় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আছেন, যাঁদের সবাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। শিগগিরই দুই দেশের সরকারের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার পরিবেশ কেমন, তার ওপর নজর রাখেন। ব্যবসার পরিবেশ অনেক বেশি বিনিয়োগবান্ধব, এমন দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশকেও নিশ্চয় প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশের আরও উন্নতির স্বার্থে বিনিয়োগের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এগুলো হচ্ছে অধিকার সুরক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, ব্যবসার সুরক্ষার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত রূপরেখা প্রণয়ন, গোপন করের নামে দুর্নীতি এবং অহেতুক আমলাতান্ত্রিকতা দূর করা। এসব হলে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথা আমরা জানি। ভবিষ্যতে সহযোগিতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
পিটার হাস: এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে এককভাবে এটাই কোনো দেশকে দেওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টিকা। জনগণের সুরক্ষায় সহায়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের সহায়তা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধান অংশীদারদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে চায়?
পিটার হাস: প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলাকে তাঁর সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার চার গুণ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএইডের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশকে কীভাবে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?
পিটার হাস: বাংলাদেশের জন্য আমাদের অঙ্গীকারের কোনো পরিবর্তন হবে না। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মধ্য আয়ের দেশে যাত্রাপথে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্র এই অর্জনের প্রশংসা করে। একই সঙ্গে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে ৮০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে দেশটির অগ্রযাত্রায় সারথি হতে পারাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গর্বের। আমরা স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, গণতন্ত্র ও সুশাসন, শ্রম অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ব্যাপক অর্থে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি ডলারের সহায়তা অব্যাহত রাখব।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর হলেও এই সমস্যা সমাধানের কোনো অগ্রগতি নেই। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। রোহিঙ্গা সংকটকে কীভাবে দেখছেন?
পিটার হাস: আমি সম্প্রতি কক্সবাজার সফর গিয়ে নিজের চোখে রোহিঙ্গা সংকটের চেহারাটা কেমন, তা দেখেছি। তাই আমি রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মানবিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছি। এই অর্থ মিয়ানমারের চলমান সহিংসতার শিকার হওয়া লোকজন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ব্যবহার করা হবে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন সহায়তার পরিমাণ হবে ১৭০ কোটি ডলার। নতুন সহায়তার মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি ডলার খরচ হবে বাংলাদেশে, যা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবহৃত হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ২১ মার্চ রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত এই ঘোষণা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কয়েক দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানের জন্য বড় পদক্ষেপ।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি তিনজন রোহিঙ্গার দুজনই তাঁদের মিয়ানমারের আবাসে ফিরে যেতে চান। তবে নিজভূমে তাঁরা তখনই ফিরবেন, যখন তা নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং মানবাধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেবে। যা এই মুহূর্তে সেখানে সম্ভব নয়।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে কী ভূমিকা প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র? রাশিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে মস্কোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাপ দিচ্ছে। এ অভিযোগের ব্যাপারে কী বলবেন?
পিটার হাস: বিনা উসকানিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত এবং অন্যায় যুদ্ধের মানবিক মূল্য যে কতটা চড়া, তা এর মধ্যেই স্পষ্ট। এটি শুধু একটি দেশের বা কোনো অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয় নয়। যে মূলনীতি ও মূল্যবোধগুলো আমাদের সবাইকে সুরক্ষিত রাখে, সেগুলো সমুন্নত রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।
ইউক্রেন সংকট সমাধানে মার্কিন সরকার তার জোটসঙ্গী, অংশীদার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সম্ভাব্য সব পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা সংকটের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এখন বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার সময় এসেছে। গণতান্ত্রিক নেতাদের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়েছে। এই ইস্যুতে কেউ ইতিহাসের ভুল পক্ষে যোগ দিতে চাইবে না। বিশ্বের মুক্ত মানুষ এখন অভিন্ন কণ্ঠে দাবি তুলেছে: এই যুদ্ধের অবশ্যই অবসান হওয়া উচিত।
দুই দেশের সম্পর্কের পরের ৫০ বছর নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
পিটার হাস: সম্পর্কের পরের ৫০ বছরের দিকে তাকালে বলতে পারি, আমি দারুণ আশাবাদী। অর্থনীতি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক, যা সম্পর্ক জোরদারে বিপুল সম্ভাবনার বহিঃপ্রকাশ।
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিটার হাস: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: এপ্রিল ১৩, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,