Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইয়াবা আসে কোন পথে (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: সাইফুল সামিন,ঢাকা।

প্রবেশগম্যতার দিক দিয়ে উত্তর কোরিয়ার চেয়ে কঠিন কোনো জায়গা বিশ্বে আছে কি? ঠাট্টাচ্ছলে কেউ কেউ বলে, আছে। তা হলো শান রাজ্য। শান রাজ্যের চেয়ে উত্তর কোরিয়ায় যাওয়া-আসা সহজ!

এমন ঠাট্টার নেপথ্যে অবশ্য বাস্তবিক কারণ আছে। আর সেই কারণ খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসে এক অন্ধকার জগতের চিত্র।

শান রাজ্যটি মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। রাজ্যের উত্তর সীমান্তে চীন। পূর্ব সীমান্তে লাওস। দক্ষিণ সীমান্তে থাইল্যান্ড। মিয়ানমারের এই রাজ্যে একাধিক সশস্ত্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সক্রিয়।

শান রাজ্য গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অংশ। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল হলো এমন এক এলাকা, যেখানে মিয়ানমারের সঙ্গে লাওস ও থাইল্যান্ডের সীমানা মিশেছে। অর্থাৎ মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের ত্রিসীমানা নিয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল গঠিত। মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের জন্য গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল বিশেষভাবে পরিচিত।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে আইনকানুনের বালাই নেই। এ কারণে সেখানে নির্বিঘ্নে মাদক উৎপাদন করা যায়। আবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা লুকিয়েও ফেলা যায়। বর্তমানে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এলাকার গভীর জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে ইয়াবা উৎপাদিত হয়।

ইয়াবা হলো মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদক। ইয়াবা উৎপাদনের প্রধান উপাদান রাসায়নিক অ্যাম্ফিটামিন। এই উপকরণ চীন ও থাইল্যান্ড থেকে পাচার হয়ে মিয়ানমারে আসে। ট্যাবলেট আকৃতির ইয়াবা একাধিক রং ও গন্ধের হয়ে থাকে। ইয়াবা সস্তা ও নিম্নমানের মাদক। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে মেথ-জাতীয় আরেকটি মাদক উৎপাদিত হয়, যেটি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামে পরিচিত। ইয়াবার চেয়ে আইস দামি। আইসের প্রতিক্রিয়াও অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আফিম-হেরোইন থেকে মেথ
একটা সময় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এলাকায় ব্যাপকভাবে আফিম ও হেরোইন উৎপাদন করা হতো। কিন্তু গত শতকের শেষ দিকে মাদক উৎপাদনকারী–কারবারিরা ক্রমেই আফিম ও হেরোইন থেকে মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদক (ইয়াবা, আইস) উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের তথ্যমতে, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে আফিম-হেরোইনের উৎপাদন কমছে। সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদক। কারণ, এ-জাতীয় মাদক উৎপাদন ও পরিবহন সহজ ও নিরাপদ। এই মাদক উৎপাদনের ব্যয় কম। কিন্তু লাভ বেশি।

মাদকের উত্তরাধিকার
দশকের পর দশক ধরে মাদক ও মিয়ানমার পরস্পরের সমর্থক। ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলেছে।

২০১৫ সালে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেকং উপ-অঞ্চল এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে জব্দ মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদকের মূল উৎস দেশ হিসেবে মিয়ানমারকেই ধরা হয়।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাসের ভাষ্যমতে, তাঁরা যা দেখছেন, তার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, মিয়ানমার সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেথ উৎপাদক। এক দশক ধরে মিয়ানমারে মেথের উৎপাদন বেড়ে চলছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে উৎপাদনের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে নয়াদিল্লিভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান পলিসি পার্সপেকটিভস ফাউন্ডেশনের পরামর্শক বৈশালী বসু শর্মা উল্লেখ করেন, ইয়াবা উৎপাদনের সর্বাধিকসংখ্যক গোপন ল্যাবরেটরি রয়েছে মিয়ানমারে।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যে বিপুল পরিমাণ মেথ-জাতীয় মাদক জব্দ হচ্ছে, তার একটা বড় অংশের উৎস মিয়ানমারের শান রাজ্য।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া অধিকাংশ ইয়াবা উৎপাদিত হয় শান রাজ্যে।
বিজ্ঞাপন

ইয়াবার ঝড়
শান রাজ্যসহ গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এলাকায় যে পরিমাণে মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদক উৎপাদিত হচ্ছে, তার ব্যাপকতা বোঝাতে তাকে ‘ঝড়ের’ সঙ্গে তুলনা করছেন অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেলিজেন্সের সাবেক প্রধান জন কোয়েন। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট নামের চিন্তন প্রতিষ্ঠানে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, এ-জাতীয় মাদক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে একটা মহামারির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ইয়াবার রাজ্য
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির বেশ কিছু সশস্ত্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে। এই চুক্তির ফলে কিছু কিছু গোষ্ঠী তাদের আওতাধীন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারি খুব কম কিংবা একেবারেই নেই। শান রাজ্যের পরিস্থিতিও এমন। এলাকাটিতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের কর্মতৎপরতা চালাতে মাদক অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে আসছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর ও সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মাদক উৎপাদন ও পাচার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের এই কাজের অংশীদার বিদেশি অপরাধী চক্রগুলো। তারা এখন মেথঅ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় মাদক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

ইয়াবার বিস্তার
বছরের পর বছর ধরে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল বিশ্বের অন্যতম দুর্গম ও অনুন্নত এলাকা ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন। এখানে চীনেরও ‘কৃতিত্ব’ আছে। দেশটির বহুল আলোচিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগ এই অঞ্চলের মাদককারবারিদের জন্য ‘সুফল’ নিয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেলিজেন্সের সাবেক প্রধান জন কোয়েনের মতে, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন মাদক পাচারের পথ সহজ করে দিচ্ছে। এ কারণে মিয়ানমারের শান রাজ্যের দুর্গম এলাকা থেকে সহজেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে মাদক পরিবহন করা যাচ্ছে। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশ পর্যন্ত ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশে অহরহ ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে।

চাহিদা বিপুল
এশিয়াজুড়ে এখন মেথ-জাতীয় মাদকের আধিপত্য। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাসের ভাষ্যমতে, বয়স-শ্রেণি-পেশা-লিঙ্গভেদে এশিয়ার মানুষ মেথ-জাতীয় মাদক সেবন করছে। তিনি তাঁর প্রায় দেড় দশকের পেশাজীবনে কোনো মাদকের এমন বিপুল চাহিদা আগে কখনো দেখেননি। এই চাহিদা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়।

গন্তব্য ও ট্রানজিট বাংলাদেশ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে দেশে প্রায় ২৩ কোটি ইয়াবা জব্দ হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ ইয়াবাই জব্দ হয়েছে গত পাঁচ বছরে। ২০১৫ সালে জব্দ করা হয় ২ কোটি ১ লাখ ইয়াবা। ২০১৬ সালে ২ কোটি ৯৪ লাখ। ২০১৭ সালে ৪ কোটি। ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ। ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৪ লাখ। ২০২০ সালে ৩ কোটি ৬৩ লাখ।

ইয়াবা পাচারের যে নেটওয়ার্ক, তাতে বাংলাদেশ একই সঙ্গে ট্রানজিট ও গন্তব্য। ইয়াবা পাচার নিয়ে চিন্তন প্রতিষ্ঠান পলিসি পার্সপেকটিভস ফাউন্ডেশনের পরামর্শক বৈশালী বসু শর্মার এক বিশ্লেষণে এমনটাই বলা হয়। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও একই তথ্য উঠে এসেছে।

বৈশালী বসু শর্মার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একসময় মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির ফলে এখন বিকল্প বা নতুন রুট দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। এ ছাড়া ভারত থেকেও বড়সংখ্যক ইয়াবা বাংলাদেশে আসছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ০৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ