Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইলিশ বিপর্যয়ের নেপথ্যে (২০২১)

Share on Facebook


লেখক: জাহিদুর রহমান।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তিন মাস ধরে। অথচ রুপালি ইলিশ জালে ধরা পড়ার এই সেরা সময়েও বাজারে তেমন মিলছে না এ মাছ। তাহলে কি নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভোজনরসিক বাঙালির প্রিয় অতুলনীয় স্বাদের ইলিশ? কেন দেখা দিচ্ছে ইলিশের সংকট?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন অতিরিক্ত আহরণ, জাটকা নিধন, নদীতে পলির আধিক্য, বেহুন্দি-ভাসা ও খুঁটাজালের ফাঁদ, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় সৃষ্ট স্রোতহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের গতিপথ প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। ফলে অনুকূল আবাসন ও পরিবেশ খুঁজে পেতে একদিকে ইলিশের ঝাঁক গতিপথ পাল্টাচ্ছে, অন্যদিকে ইলিশ প্রজননের মৌসুমেও পরিবর্তন আসছে।

টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর জেলেরা ইলিশের খোঁজে সাগরে নেমেছিলেন গত ৩ আগস্ট। এ সময় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানেও আগের মতো ইলিশ মিলছে না। একই জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত আহরণ ও অনেক ট্রলারের চলাচলের কারণে ইলিশ গভীর সাগরে চলে গেছে বলে ধারণা টেকনাফের জেলে আব্দুল আজিজের।

বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলা, চাঁদপুরসহ দেশের অন্যান্য উপকূলের নদীতেও পর্যাপ্ত ইলিশ মিলছে না। জেলেদের চেহারায় তাই কষ্টের ছাপ। হতাশ ব্যবসায়ীরাও। নোয়াখালীর হাতিয়ার জেলে আবু কাউসার বলেন, সামান্য কিছু মাছ মিললেও তা ছোট। ইলিশ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাজারেও। সেখানে যে ইলিশ মিলছে তা নদীর নয়-মূলত সমুদ্রের। দামও আকাশছোঁয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে সাগরে পানির তাপমাত্রায় হেরফের ঘটেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের পেটে ডিম আসার সময় পিছিয়ে গেছে। এ কারণে ইলিশের জীবনচক্রেও পরিবর্তন আসা অস্বাভাবিক নয়।

ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের দলনেতা অধ্যাপক আবদুল ওহাব বলেন, অক্টোবরে নিষিদ্ধ সময়ে যদি নদীতে ইলিশ আসে, তবে বুঝতে হবে আগে তাদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যদি একদমই না আসে, তবে বুঝতে হবে ইলিশের বৃদ্ধির ক্ষেত্রই বিপর্যয়ের মুখে। ব্যাপকভাবে গবেষণা করে সম্মিলিতভাবে ইলিশ ব্যবস্থাপনায় নতুন পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আর্থিক সহযোগিতায় টানা দুই বছর ইলিশের সঠিক প্রজনন সময় নির্ধারণ, বংশ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি এবং সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া ওই গবেষণায় বলা হয়, মা ইলিশদের যদি ডিম দেওয়ার পরিপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করা যায় তাহলে ২০০ গ্রামের একটি ইলিশ মাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ ইলিশের বাচ্চা পাওয়া যাবে। পদ্মা নদীর ইলিশ নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, ১৪০০ গ্রামের একটি ইলিশ যদি ডিম দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে প্রায় ১৬ লাখ ইলিশের বাচ্চা হবে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে, মাত্র একটি ইলিশ থেকে আয় হতে পারে ৭৬ লাখ থেকে এক কোটি টাকা।

অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন সমকালকে বলেন, গত ২০২০ সালে ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধকাল শুরু হয়েছিল ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু পদ্মায় মা ইলিশই এসেছে ২০ নভেম্বরের পর। মেঘনার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, সময় শুরুর ৪-৫ দিন পর মা ইলিশ ডিম দিতে আসছে। ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধকাল শেষ হওয়ার পরও এসব নদীতে মা ইলিশ মিলেছে। সুতরাং ইলিশ সম্পদকে রক্ষা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত ২২ দিনের নিষিদ্ধকাল নিয়েও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ দিন গবেষণা করেই ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধকাল নির্ধারণ হয়েছে। আপাতত এটি পরিবর্তন করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। নিষিদ্ধ সময়ের আগে-পরে কিছু মা ইলিশ আসতেই পারে, তাতে নিষিদ্ধকাল বাড়ানো কিংবা পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। এতে জেলেদের ক্ষতি হবে।
ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে- এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মন্ত্রী বলেন, আগস্ট থেকেই ইলিশ অল্প অল্প করে ধরা পড়ছে। চলতি মাসে বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। গতি পরিবর্তনের কারণে কোথাও কম কোথাও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরও ইলিশের কোনো ঘাটতি হবে না বলে আশা করেন তিনি।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, জুন-জুলাই মাসে ইলিশ কম ধরা পড়ে। কারণ সেটি আসলে ইলিশের মৌসুম নয়। অক্টোবরের পূর্ণিমাতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ সাগর থেকে নদীতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক বা অক্টোবর- এই সময়টাই ইলিশ আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এটি নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ইলিশ ধরা পড়ছে। সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে দুটি অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা থাকবে। সেই সময়টায় প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের চলাচল পথ এবং জীবনচক্রে কম-বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে এই ইলিশ গবেষক বলেন, নদীতে ড্রেজারের (খননযন্ত্র) মাধ্যমে অপরিকল্পিত বালু তোলা অব্যাহত রয়েছে। এতে তৈরি হচ্ছে নাব্য-সংকট। নষ্ট হচ্ছে ইলিশের খাদ্য ও স্বাভাবিক চলাচল। ফলে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে এসে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়তে পারছে না। তাই নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রের ইলিশের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, পাইকারি বাজারে প্রচুর ইলিশ থাকলেও ঢাকাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে সরবরাহ কম। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর দখলে।

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছর সাড়ে পাঁচ লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হয়। চলতি বছর ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় পৌনে ছয় লাখ টন। তবে ভবিষ্যতে ঠিকমতো জাটকা সংরক্ষণ করা গেলে উৎপাদন সাত লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত করা সম্ভব।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার উপ-প্রধান মাসুদআরা মমি বলেন, ইলিশ উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ হয় জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত। বছর শেষে মোট উৎপাদনের তথ্য দেওয়া হয়। ইলিশপ্রধান এলাকাগুলো থেকে প্রতি মাসেই উৎপাদনের তথ্য আসে। কিন্তু সেই হিসাব ধরে উৎপাদনের হেরফের নির্ধারণ করা কঠিন।

মাসুদআরা মমি বলেন, ২০১৫ সালেও জুলাই থেকে ইলিশ আসত। এরপর থেকে প্রতি বছরই ইলিশ ক্রমান্বয়ে একটু দেরিতে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও এটি হতে পারে। এ বছর মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টিই ছিল না। বৃষ্টি হয়েছে জুন-জুলাইয়ের দিকে। ইলিশ আসার উপযুক্ত পরিবেশ তো থাকতে হবে। কয়েক বছর ধরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রচুর ইলিশ মিলছে। এ অবস্থা ২০১৫ সালেও ছিল না। ইদানীং শীতকালেও মিলছে প্রচুর ইলিশ। তবে মোট উৎপাদন তো নির্ধারিত হয় সারা বছরের হিসাব দিয়ে। তাই ইলিশের বর্তমান উৎপাদন দেখে সারা বছরের হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কঠোর ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি বছরই এ মাছের উৎপাদন বাড়ছে।

ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধকালে চাল ও অর্থ সহায়তা ছাড়াও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক চার বছর মেয়াদি প্রকল্প পরিচালনা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪,সোমবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ