Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইলিশ কথা

Share on Facebook

সত্তর বছর বয়সি মৎস্যজীবী সনাতন হালদার দাঁড়িয়ে ছিলেন রূপনারায়ণের সামনে । জল মাপছিলেন চোখের আন্দাজে । এই ভাবেই জল মেপে তিনি বুঝতে পারেন , নদী ভিতরে ভিতরে তৈরি হচ্ছে ইলিশের জন্য । মধুগুলগুলি বৃষ্টি নামল । ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিরই একটা রকমফের । এই বৃষ্টির পর ইলিশেরা উতলা হয়ে হঠে । প্রকৃতির এই ভাষা জানেন সনাতন হালদার । এই অধিবিদ্যা তার বাপ-ঠাকুরদার থেকে পাওয়া । মামারা থাকতেন সুন্দরবনে । ছোটবেলায় মামারবাড়ির দেশে বেড়াতে গেলে , দাদু নিয়ে যেতেন তাকে , ইলিশ ধরতে । কখনও নৌকো , কখনও ট্রলারে । দাদুই বলতেন , ইলিশ ধরতে গেলে জলের মন বুঝতে হয় , জলের গায়ের গন্ধ নিতে হয় ।

ইলিশ একা একা থাকতে পারে না । সপরিবার বেঁধে বেঁধে থাকে । ছোট-বড় সকলেই । মামাবাড়ির দাদু বলতেন ,
‘ গন্ধঝাঁক ’ । ইলিশরা এক সঙ্গে থাকলেই , জলের উপর দিয়ে একটা আলাদা আঁশটে গন্ধ ভেসে আসে । তখনই বোঝা যায় ইলিশের ঝাঁক আছে নদীর বুকে । আর জলের মন পড়তে গেলে চিনতে হয় জলের রং । তার আবার নানা নাম । ডাব জল , গাব জল , মাছ ধোয়া জল , চখা জল , কালো জল , চেরটা জল । চখা জল চোখের জলের মতো পরিষ্কার । আর চেরটা জলে থাকে অনেক শেওলা । সব জলেই কিছু না কিছু ইলিশ থাকেই । তবে ঘোলা জলে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।

স্মৃতিগুলো ঝাঁকিয়ে নিয়ে , পাড়ের বাঁধের উপর থেকে নামলেন , চরের উপর রাখা নৌকোর কাছে । এই নৌকো করেই প্রতি বার তিনি ইলিশ ধরতে যান । ভালবেসে নৌকোটার নাম দিয়েছিলেন ‘ সোহাগী ’ । ইলিশ মাছ ধরতে , এই আদরের নৌকোই তাঁর সঙ্গী । এ বার পৃথিবী কিছু দিনের জন্য বন্ধ ছিল । যারা পৃথিবীটাকে শাসন করত , তারা করোনা আতঙ্কে এখন ঘরবন্দি রেখেছে নিজেদের । তাই একটু দেরি হয়েছে বেরতে । আখেরে তাতে লাভই হল । ইলিশ নিজেকে আরও সুস্বাদু করে তুলল ।

‘ মাইগ্রের ’ একটা ল্যাটিন শব্দ , যার মানে ভ্রমণ । ইলিশ মাছ ভ্রমণপ্রিয় , তাই একে বলে মাইগ্রেটরি ফিশ । কিছু দিন সাগরে , তো কিছু দিন নদীতে । নোনা জলের দেশে থাকে ইলিশ । ওটা তার শ্বশুরবাড়ি । সন্তানের জন্ম দিতে ইলিশকে বাপের বাড়ি আসতে হয় । মিষ্টি জলের নদী ইলিশের বাপের বাড়ি । ইলিশের মা হল গঙ্গা আর মাসি পদ্মা । বছরে দু’বার বর্ষা আর শীতে , ডিম ফুটিয়ে সন্তানের জন্ম দিতে ইলিশকে আসতে হয় বাপের বাড়ি মা-মাসির কাছে । ঝাঁক বেঁধে সমুদ্র থেকে যখন ওরা ঢোকে নদীর বুকে , তখন তাকেই বলে অ্যানাড্রোমাস পরিযাণ । গঙ্গা , রূপনারায়ণ , ব্রহ্মপুত্র , গোদাবরী , নর্মদা , তাপ্তী , পদ্মা , যমুনা , মেঘনা , কর্ণফুলি , ইরাবতী সবেতেই সাগর উজিয়ে ইলিশ আসে ।

গঙ্গা, পদ্মা উজিয়ে যে ইলিশ আসে , তাকে ইলিশ বললেও অন্য নদীতে ইলিশ পাওয়া গেলে , তার আর ইলিশ নাম থাকে না । সৈয়দ মুজতবা আলী ‘ পঞ্চতন্ত্র ’ – এ লিখছেন , নর্মদা উজিয়ে যে ইলিশ আসে , ভৃগুকচ্ছের মানুষের কাছে তা ‘ মদার ’ । পার্সিদের কাছে তার নাম
‘ বিম ’ । সিন্ধু নদ উজিয়ে এলে ওই মাছের নাম ‘ পাল্লা ’ । তামিলরা ইলিশকে বলে ‘ উলম ’ । গুজরাতিরা পুরুষ ইলিশকে বলে ‘ পালভো ’ , স্ত্রী ইলিশকে বলে ‘ মোদেন ’ । তা ছাড়াও ইলিশের আরো অনেক নাম আছে : খয়রা ইলিশ , গৌরী ইলিশ , চন্দনা ইলিশ , গুর্তা ইলিশ , সকড়ি ইলিশ , জাটকা ইলিশ , ফ্যাসা ইলিশ , খ্যাপতা ইলিশ , মুখপোড়া ইলিশ এমন নানা রকম । বাংলাদেশে যে ইলিশ বিলে পাওয়া যায় , তাকে বলা হয়ে থাকে ‘ বিলিশ ’ ।

অন্য মাছের তুলনায় ইলিশের কৌলীন্য বেশি । সাহিত্যিক শঙ্করের কথায় মৎস্য সমাজে ইলিশই হলো একমাত্র উপবীতধারী । তার দু’পিঠে যে দুটো সুতো থাকে , তার নাম পৈতা । আজ থেকে প্রায় ন’শো বছর আগে জীমূতবাহন তাঁর ‘ কালবিবেক ’ গ্রন্থে এই বিখ্যাত মাছটির নাম দিয়েছিলেন ইলিশ । আর ১৮২২ সালে মৎস্যবিজ্ঞানী হ্যামিলটন সাহেব এই মাছটির বিজ্ঞানসম্মত নাম দিলেন , হিলসা হিলসা । ১৯৫৫ সালে এই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নামটি পাল্টে হল টেনুয়ালোসা হিলসা । এই
‘ টেনুয়ালোসা ’ শব্দটি ইলিশেরই উপযুক্ত । শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ টেনিয়াস ’ থেকে , যার অর্থ পাতলা বা স্লিম । ঝরঝরে চকচকে পাতলা শরীরের সুন্দরীর এমন নাম বেশ মানানসই ।

যা কিছুই সুন্দর , তাতে কাঁটা থাকে । যেমন গোলাপ । ইলিশ-সুন্দরীর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার । তার পেটের কাছের কাঁটা দেখে প্রজাতি ঠিক করা হয় । এই কাঁটাগুলো দেখতে ইংরেজি v অক্ষরের মতো । যাকে স্কুট বলা হয় । এই স্কুটের সংখ্যা অনুযায়ী ইলিশের প্রজাতি পাঁচ রকম । ইলিশের আবার বহুরূপী আছে । ইলিশ-সুন্দরীর মতো দেখতে হলেও স্বাদে-গন্ধে তারা কিন্তু ইলিশ নয় । যেমন , চাপিলা মাছ এবং কই-পুঁটি ।

ঘটি আর বাঙালদের মধ্যে চিরকালের এক লড়াই ইলিশ নিয়ে । বলা ভাল , ইলিশের স্বাদ নিয়ে । সমুদ্রে থাকার সময় ইলিশের শরীর ছোট , পাতলা আর কম স্বাদের হয় । নোনা জলের সংসার থেকে মিষ্টি জলের ঢোকার সময় থেকে ইলিশ পুষ্ট হতে থাকে । তার স্বাদ বাড়তে থাকে । আর লকডাউন ইলিশকে আরও একটু বেশি স্বাদ দিল । লকডাউনে নদীগুলো জলের গুণমান ফিরে পেয়েছে । গঙ্গাও অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে দূষণ । ইলিশ যে সব খাবার খেয়ে বাঁচে , তারা হল নীল-সবুজ শেওলা , কোপেপড , ক্লাদকেরা , রেটিফারের মতো জলে মিশে থাকা খাবার l নদীর জল ভাল হওয়ায় , নদীর জলে মিশে থাকা খাবারও উন্নত হয়েছে ।

ভাল মানের খাবার খেয়ে ইলিশের স্বাদ বাড়বে , এটাই মৎস্যবিজ্ঞানীদের মত । ইলিশ নদীর যত গভীরে যায় , তত খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয় । তখন সে তার শরীরে জমে থাকা ফ্যাট থেকে শক্তি সংগ্রহ করে । ফলে শরীরে চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে । আর ইলিশ নরম এবং সুস্বাদু হয়ে ওঠে । এ ছাড়াও মাছের শরীরে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্ম হয় ও তার নানা রূপান্তর ঘটে । এর ফলেও বাড়ে ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ ।

( একটি সংগৃহিত পোষ্ট )
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ১০, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ