Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইরাকে আগ্রাসন চালাতে মিথ্যা গল্প সাজান কলিন পাওয়েল (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: কামরুজ্জামান কামরুল।

২০০৩ সালের প্রথম দিককার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালাতে তলেতলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বমহলে চলছে কানাঘুষা। এ হামলাকে জায়েজ করতে বুশ প্রশাসন শুরু করে দিয়েছে জোরেশোরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও। সেই যুদ্ধে সিনেমার দৃশ্যপটে বুশের পাশাপাশি আরেকজন অন্যতম খেলোয়াড় হাজির হলেন, নাম তাঁর কলিন পাওয়েল। তিনি বুশ প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

পাওয়েলের ফাঁদা মিথ্যা গল্প ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পথ অনেকটাই সুগম করে বলে ধারণা অনেকের। সেই সঙ্গে ইরাকিদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আর সেই কারণেই কলিন পাওয়েল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে যতটা না ‘সুপার হিরো’, ইরাকিদের কাছে ঠিক ততটাই ‘ভিলেন’ বা খলনায়ক।

ইরাকের শাসকগোষ্ঠীর শায়েস্তা করতে দেশটিতে সামরিক অভিযানের স্বীকৃতি পেতে তৎকালীন বুশ প্রশাসন উঠেপড়ে লাগে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে সামরিক অভিযান চালানোর সম্মতি পেতে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল বৈঠকে বিভিন্ন ধরনের ডায়াগ্রাম ও ছবি তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ইরাক সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত রয়েছে। এটা শুধু ইরাকিদের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই মারাত্মক হুমকি। একটি ভায়াল (ছোট শিশি) দেখিয়ে পাওয়েল বলেছিলেন, এ রকম হাজার হাজার প্যাথোজেন অস্ত্রের ভান্ডার রয়েছে ইরাকে।

যদিও পাওয়েলের তখনকার বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করার উপায় ছিল না; তিনি মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে ওই দাবি করেছিলেন। যদিও তাঁর ওই দাবি নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য গ্রহণ করেনি। এ কারণে ইরাকে সামরিক অভিযানের সমর্থনে তোলা দ্বিতীয় প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রস্তাব পাস না হলেও বুশ ইরাকে আগ্রাসন চালাতে অবিচল ছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি না মিললেও শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেন সরকারকে উৎখাত করতে বিশাল অভিযান শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অনেকের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের সব পক্ষের মনোরঞ্জন করতে না পারলেও পাওয়েলের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের কারণে অনেক দেশের সমর্থন ও পাশে পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকে কলিন পাওয়েল আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা ও সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে যোগসূত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ জন্য তিনি বৈঠকের একটি পর্যায়ে জর্ডানের জিহাদি নেতা আবু মুসাব আল-জারকাওয়ির নাম ২১ বার উচ্চারণ করেন। তিনি দাবি করেন, মুসাবের সঙ্গে সাদ্দামের যোগাযোগ রয়েছে।

গতকাল সোমবার ৮৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক হাসপাতাল মারা গেছেন কলিন পাওয়েল। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

তবে মারা যাওয়ার অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক চার তারকা জেনারেল পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরার বিষয়ে অনুশোচনা করেছেন ঠিকই। ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইরাকে আগ্রাসন চালানোর বিষয়ে ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করার জন্য তিনি এখন অনুতপ্ত। এটাকে তাঁর পেশাজীবনে ‘বড় কলঙ্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া অনেক তথ্যই ভুল ছিল।

সাদ্দাম হোসেনের আটক হওয়া এবং ইরাকে কোনো ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্র না পাওয়ার পরই পাওয়েলের এই সরল স্বীকারোক্তি। তত দিনে ইরাকে বয়ে গেছে রক্তগঙ্গা। প্রাণ গেছে হাজারে হাজার। ইরাকের অর্থনীতি, অবকাঠামোর বারোটা বেজে গেছে। যুদ্ধ শুধু ধ্বংস আর রক্তই দিয়ে গেছে ইরাকিদের। সঙ্গে দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উত্থান। সমাজে হানাহানিও। অবশ্য, ইরাক আগ্রাসনের কারণ পাকাপোক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও পরে জানিয়েছিল, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল। তবে তা এক দশক আগেই ধ্বংস করে ফেলেন সাদ্দাম হোসেন।

অবশ্য, এই ভুলের আগে কলিন পাওয়েলের ক্যারিয়ার ছিল নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ পানামায় মার্কিন আগ্রাসনের তদারকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে কুয়েতে ইরাকি সেনাবাহিনীকে উৎখাত করতে মার্কিন অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মেয়াদের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন তিনি। এরপর জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের আমলে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রধান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে কলিন পাওয়েলের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে কলিন পাওয়েলকেই প্রথম মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবা হতো। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ইরাক যুদ্ধের পক্ষে জাতিসংঘে ভুল গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরায় তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। কলিন পাওয়েল তিনজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করলেও পরে আর তিনি রিপাবলিকান রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারেননি। তিনি ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাঁদের ভোটও দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব নেতাা কলিন পাওয়েলের প্রয়াণের পর তাঁকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও সাহসী নায়ক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, কলিন পাওয়েল পেশাগত জীবনে যে জাতীয়তাবোধ ও অখণ্ডতা নিজের মধ্যে ধারণ করে গেছেন, সে জন্য মানুষকে তাঁকে সারা জীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন।
বিজ্ঞাপন

ইরাকিরাও পাওয়েলকে স্মরণ করবেন, তবে বীর হিসেবে নন, একজন মিথ্যুক হিসেবে। তাঁরা মনে করেন, ইরাকে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ানো ব্যক্তিদের একজন পাওয়েল। হাজার হাজার ইরাকির জীবন তছনছ করে দেওয়ার জন্য তিনি দায়ী। তাই তাঁর মৃত্যুর খবরেও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে ইরাকিদের মধ্যে।

ইরাকি লেখক ও দুই সন্তানের জননী মরিয়ম (৫১) বলেছেন, ‘তিনি মিথ্যুক, মিথ্যুক, মিথ্যুক। তাঁর মিথ্যা বলার কারণে আমরা এমন এক যুদ্ধে ঢুকে গেছি, যেটা কখনো শেষ হওয়ার নয়।’

বুশের দিকে জুতা নিক্ষেপ করে আলোচনায় আসা ইরাকি সাংবাদিক মুনতাধার আল-জাইদি কলিন পাওয়েলের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরপরই টুইট করেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আল্লাহর আদালত তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন।’

ইরাকের বাগদাদে পোশাকের দোকানের মালিক আকেল আল-রুবাই (৪২) বলেছেন, ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মিথ্যা তথ্য প্রদানের জন্য পাওয়েল অনুতপ্ত কি না, সেটা মূল বিষয় নয়। তিনি যে যুদ্ধ বাধিয়ে গেছেন, তাতে আমি আমার বাবা, ভাই, চাচাতো ভাই হারিয়েছি। পুরো দেশ ধ্বংস হয়েছে। আমরা সেই যুদ্ধের চড়া মূল্য দিয়ে যাচ্ছি।’

*** তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, গার্ডিয়ান।

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ