তিব্বতের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পদবি হলো দালাই লামা। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে বর্তমান দালাই লামা তেনজিন গিয়াৎসু নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। চীন সরকারের কাছ থেকে মাতৃভূমি তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন আদায়ের আশায় তিনি সংঘাতে জড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন সমঝোতা ও অহিংসার বাণী। ১৯৮৯ সালের এই দিনে তিনি শান্তিতে নোবেল জয় করেন।
তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের ‘গেলুগ’ নামের শাখাটির প্রধান ধর্মগুরুকে দালাই লামা নামে অভিহিত করা হয়। দালাই লামা শব্দের অর্থ এমন একজন দীক্ষাদাতা, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিকতা সমুদ্রের মতো গভীর। তিব্বতিদের কাছে তিনি শুধু প্রধান ধর্মগুরুই নন, তাঁদের আধ্যাত্মিক নেতা এবং শাসনতন্ত্রের শীর্ষ পদাধিকারী। তিব্বতি বিশ্বাস অনুসারে দালাই লামা হলেন স্বয়ং বুদ্ধের অবতার।
ত্রয়োদশ দালাই লামা মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তী দালাই লামার খোঁজে দ্বিতীয় প্রধান আধ্যাত্মিক গুরু পানচেন লামার নেতৃত্বে প্রধান লামারা সাড়ে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লামাও লা সো হ্রদের ধারে ধ্যান শুরু করেন। বলা হয়, দীর্ঘ চার বছর ধ্যান করে তাঁরা উত্তর-পূর্ব তিব্বতের একটি গ্রামে শিশু লামো থোনদুপকে খুঁজে পান। আর ওই শিশুকেই ত্রয়োদশ দালাই লামার পুনর্জন্ম অর্থাৎ চতুর্দশ দালাই লামা বলে ঘোষণা করা হয়। দালাই লামা নির্বাচিত হওয়ার পর শিশুটির নাম রাখা হয় তেনজিন গিয়াৎসু। ছয় বছর বয়সে তাঁকে তিব্বতের রাজধানী লাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রধান লামাদের অধীনে শুরু হয় শিক্ষাজীবন। ২৪ বছর বয়সে নতুন দালাই লামা বৌদ্ধ দর্শনের সর্বোচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
তিব্বতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে চীনারা বেশ কয়েকবার শান্তিপ্রিয় তিব্বতিদের ওপর আক্রমণ করে। চীনারা তিব্বতিদের সম্পদ লুট করে এবং বহুসংখ্যক মঠ ধ্বংস করে। ১৯৫০ সালে চীনা কমিউনিস্ট বাহিনী তিব্বত আক্রমণের মধ্য দিয়ে সমগ্র তিব্বত দখল করে নেয়। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের জনগণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন এবং চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তখন দালাই লামাকে তাঁর বাসভবন পোতালা প্রাসাদ থেকে উৎখাত করা হলে তিনি তাঁর কিছু অনুগামীসহ ভারতে পাড়ি জমান। ভারত সরকারের একজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে হিমালয়ের পাদদেশ ধর্মশালায় বসতি স্থাপন করেন তিনি।
১৯৮৯ সালের আজকের এই দিনে চতুর্দশ দালাই লামা তেনজিন গিয়াৎসু নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। নোবেল কমিটির ভাষ্যমতে, তাঁর অনুসারীদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাঁকে এ সম্মান দেওয়া হয়।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: অক্টোবর ০৫, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,