ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান হামলাকে কেন্দ্র করে ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা চরমে। তবে ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখানে রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই দুটি দেশসহ ১৬টি দেশের নাগরিক এখানে কাজ করছেন।
রূপপুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৬ হাজার কর্মী কাজ করছেন। তাঁদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিদেশি নাগরিক। রাশিয়ার নাগরিক আছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ইউক্রেনের নাগরিক ২৫০ জনের মতো। রয়েছেন বেলারুশের নাগরিকেরাও।
রূপপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি নিয়েই ইউক্রেনের নাগরিকেরা এখানে এসেছেন। তাঁরা সবাই পেশাদারত্বের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
এ বিষয়ে রূপপুর প্রকল্পের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন ও অর্থ) অলোক চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো প্রভাব রূপপুর প্রকল্পের কাজে পড়েনি। এখানে দুই দেশের নাগরিকেরা পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সঙ্গে কাজ করছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পরমাণু শক্তি কমিশন। আর রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের নেতৃত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট।
গত মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রোসাটম বলেছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং কাজের শিডিউলে কোনো বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।’
২০২৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের আশা
রূপপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুরে। খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় রূপপুর কর্তৃপক্ষ। আর ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে আশা করা হচ্ছে।
রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। এগুলো নির্ধারিত সময় ধরে এগোচ্ছে। সময়মতো যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো হচ্ছে। দেশেও প্রতিটি কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কোনো কোনো কাজের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে এগিয়ে আছে রূপপুর। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। এটি স্থাপনে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার (আইইএ) মান অনুসরণ করতে হয়েছে। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ০৩, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,