চলে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আজ মঙ্গলবার ভারতের কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্ধ্যা। পর দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। ঘটনাচক্রে তার দুদিন আগেই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে চলচ্চিত্রের গান, আধুনিক গানের অ্যালবাম-সব মিলিয়ে তাঁর কাজের পরিধি অনেকটাই। ১২ বছর বয়স থেকে গান গাইছেন। সংগীতের পেছনে জীবনের ৭৫টি বছর ব্যয় করেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর জুটি বহু বছর ধরে বাঙালির মনজুড়ে আছে। একসময় সুচিত্র সেনের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’, ‘মধুমালতী’, ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব’, ‘তুমি নাহয়’, ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’, ‘যমুনা কিনারে’সহ অনেক কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা। এ ছাড়া ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২২
মায়াবতী মেঘের রাজ্যে চির তন্দ্রায় গীতশ্রী, মিলিয়ে গেল সুরের আকাশের ইন্দ্রধনু
লেখক Suman Roy
৯০ বছরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
সঙ্গীত আবার এক নক্ষত্রপতন। লতা মঙ্গেশকরের পরে এবার গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ৯০ বছরে এসে পথচলা শেষ হল তাঁর। গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি শিল্পী।
১৯৩১ সালে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্ম হয় তাঁর। ছয় ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন তিনি। বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন রেলের অফিসার, মা হেমপ্রভা দেবী গৃহবধূ।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল। পণ্ডিত সন্তোষকুমার বসু, এটি কানন, চিন্ময় লাহিড়ির থেকে তিনি তালিম পেয়েছেন। তবে গুরু হিসাবে তিনি বারবার বলতেন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাহেবের কথা। ছোটবেলা থেকেই ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম শুরু হয় তাঁর।
যদিও ছোটবেলা থেকে ধ্রুপদী সঙ্গীতচর্চা দিয়ে শুরু করেছিলেন, কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বাংলা আধুনিক গান এবং চলচ্চিত্রের গানেও সমান মাপে জনপ্রিয়তা পান। শুধু বাংলাতেই নন, হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫০ সালে ‘তারানা’ ছবি দিয়ে শুরু করে একের পর এক হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৭টি হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
১৯৫২ সালে পাকাপাকিভাবে কলকাতায়ফিরে আসেন তিনি। শুরু করেন পর পর বাংলা ছবিতে গান গাওয়া। ১৯৬৬ সালে শ্যামল গুপ্তর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। শ্যামল গুপ্তর লেখা বহু গানও গেয়েছেন সন্ধ্যা।
বাংলা সিনেমার গান যত দিন থাকবে, তত দিন অমর থাকবেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একের পর এক কালজয়ী গান গেয়েছেন তিনি। উত্তম কুমারের ছবি মানেই, তাঁর কণ্ঠে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান এক সময়ে বাঙালির গানে বসে গিয়েছিল। সে গান না শুনলে বাঙালির মনের আশা মিটত না। হেমন্ত ছাড়াও সুরকার রবিন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষের সঙ্গেও বহু ছবিতে কাজ করেছেন সন্ধ্যা।
তবে শুধু গান নয়, রাজনৈতিক কারণেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মনে থেকে যাবেন অনেকেরই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দুঃস্থ আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। অর্থ তোলার বিষয়ে তিনি পুরোভাগে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে রেডিয়ো সেন্টার খোলার বিষয়েও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘তুমি ফিরে এলে’ বলে একটি গানও গান সন্ধ্যা। এপার বাংলার পাশাপাশি ওপার বাংলাতেও তাই তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল সমান মাপের।
কিছু দিন আগেই কোভিড সংক্রমণ হয় তাঁর। সেই সংক্রমণের পরেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এরই মধ্যে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার দেওয়ার কথা শোনা যায়। কিন্তু সন্ধ্যা জানিয়েছিলেন, ওই পুরস্কার তাঁর জন্য অসম্মানজনক। তাই তিনি সেটি নিতে চাননি।
এর কিছু দিন পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। শেষ হল একটি যুগের। মায়াবতী মেঘের রাজ্যে পাকাপাকিভাবে চলে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের হাতেখড়ি যে কয়েক জন কিংবদন্তির হাত ধরে, তাঁদের একেবারে পুরোভাগে থাকা
সূত্রঃ বাংলা হিন্দুসস্থান টাইমস ।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,