লেখক: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
করোনার কারণে দেড় বছর পর প্রথম ঘুরতে বের হয়ে সম্প্রতি দিয়াবাড়ির কাশফুল দেখতে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অবশ্য তাঁর মূল আগ্রহ ছিল পথে ঢাকা বোট ক্লাবটি একটু ঘুরে দেখার। চিত্রনায়িকা পরিমণি ইস্যুতে এখন বহুল আলোচিত এই ক্লাব। অবশ্য সেখানে গিয়ে ক্লাবটির ভেতরে ঢুকতে পারেননি তিনি। তবে পত্র পত্রিকায় ক্লাবটির ভেতরের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল তা পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর মনে হয়েছে এই পুরো অবকাঠামো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের জন্য খুব উপযোগী। এমন কিছু, যেখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকেরা কিছু সময়ের জন্য আবাসিক ফেলো হিসাবে এসে গবেষণার কাজ, শিল্প-সাহিত্য চর্চা, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে ভাবনার আদান প্রদান করতে পারবেন। এ বিষয়ে চমৎকার কিছু পরিকল্পনা দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই অর্থনীতিবিদ একটি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই পোস্ট এখানে তুলে ধরা হলো-
দেড় বছর পর বাসা থেকে প্রথম ঘুরতে বেরোলাম। গুগল ম্যাপ দেখে ভাবলাম আশুলিয়া পেরিয়ে দিয়াবাড়ির কাশফুল দেখতে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার থেকেও বড় আগ্রহের বিষয় হলো পথেই ইদানীং কালের বহুল আলোচিত “ঢাকা বোট ক্লাব”টি দেখার সুযোগ হবে। রাস্তার গেট থেকে সুদৃশ্য ক্লাব ভবন বেশ দূরে, সুসজ্জিত রাস্তা চলে গেছে সে পর্যন্ত। মূল ভবনের পাশে নদীর পাড়ে আরও বেশ কিছু জায়গা মনে হয় ক্লাবের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, দূর থেকে ভালো বোঝা গেল না। গেটে কড়া নিরাপত্তা। শুধু সামনের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একটু হেঁটে ঘুরে দেখা যায় কিনা সে অনুরোধ করাতে কোনো কাজ হলো না। আমার মতো বয়স্ক ছোটখাটো নিরীহ গোছের একজন মানুষকে গেটের ভেতর এক পা দিতেও কেন এত আপত্তি ভেবে হাসিই পেল।
আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল ভবনটি ও নদী তীরের জায়গাটায় পরিবেশের ও নান্দনিক সৌন্দর্য সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া। এক চিত্রনায়িকাকে নিয়ে সেখানকার একটি সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে যখন সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছিল, আমি লক্ষ্য রাখছিলাম ওই ক্লাবটির ভৌত কাঠামো নিয়ে যেটুকু জানা যাচ্ছিল তার ওপর। সম্ভবত ক্লাব কর্তৃপক্ষের বর্ণনাতেই জানা গিয়েছিল ক্লাব ঘরটি ক্লাবের সদস্য ও তাঁদের পরিবারের বিনোদনের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিশেষত দোতলার কিছু ঘর থেকে নাকি নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।
আমার তাৎক্ষণিক ভাবে মনে হয়েছিল এই পুরো অবকাঠামো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের জন্য খুব উপযোগী হতো, যেখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকেরা কিছু সময়ের জন্য আবাসিক ফেলো (resident fellow) হিসাবে এসে এই নান্দনিক পরিবেশে তাঁদের গবেষণার কাজ, শিল্প-সাহিত্য চর্চা, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে ভাবনার আদান প্রদান করতে পারবেন। এর জন্য অবশ্য আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থাও থাকতে হবে, যে কারণে আমি ভবনের পাশের নদী তীরের জায়গাটা লক্ষ্য করছিলাম।
ইতালির মিলান শহরের কাছে অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে Rockefeller Bellagio Center এ রকম একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র (আমার প্রয়াত স্ত্রী একাধিকবার সেখানে গবেষণার জন্য গিয়েছিলেন) আছে। প্রতিবেশী ভারতে এ রকম গবেষণা কেন্দ্রের দু’টি বহুল পরিচিত উদাহরণ মনে আসছে: দিল্লির Habitat Centre (ব্যক্তি মালিকানাধীন) এবং সিমলার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি নিবাসে স্থাপিত Indian Institute of Advanced Studies (ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই আমার দেখা।
সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এটাও দেখেছিলাম যে নদীর তীরের আইন অনুযায়ী এই সংরক্ষিত স্থানে কেবল “জনস্বার্থের” বিচারেই ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লাবটিকে জায়গাটি “বিশেষ বিবেচনায়” বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, অবশ্য এর সত্যাসত্য আমার জানা নেই। তবে “জনস্বার্থের” বিচারেই যদি আসলে এই অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে, তবে ক্লাবের সদস্যদের পরিবারের বিনোদনের চাইতে একটি আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক গবেষণা কেন্দ্র যে জ্ঞান ভিত্তিক সমৃদ্ধ জাতি গঠনে অবদান রাখার মাধ্যমে অনেক বেশি জনস্বার্থের অনুকূল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সন্দেহ নাই ক্লাবের সদস্যরা এখানে বেশ কিছু বিনিয়োগ করেছেন। তাঁরা এই বিনিয়োগকে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য endowment fund-এ রূপান্তরিত করে বাংলাদেশে করপোরেট philanthrophy-এর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সরকার ব্যয়ভারের অন্তত আংশিক দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্যোক্তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে পারে। দেশ-বিদেশের উৎস থেকেও (Rockefeller বা Gates ফাউন্ডেশন, ইত্যাদি) অর্থ সংগ্রহ সম্ভব। ক্লাব মালিকদের সম্মতি থাকলে এ রকম একটা উদ্যোগ নিয়ে এগোনো যেতে পারে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,