ফিরোজা ও শফিউর রহমানের দাম্পত্য ৫৫ বছরের। ফিরোজার বয়স ৭৬ আর শফিউরের ৮৪ বছর। চার সন্তানের সবাই থাকেন দেশের বাইরে। ফিরোজা ও শফিউর এখন অবসরকালীন জীবন যাপন করছেন। কর্মজীবনে দুজনই শিক্ষকতা করতেন। অবসরের পর চাকরি থেকে পাওয়া অর্থে চলে এ দম্পতির সংসার। নিজেদের অর্থের বড় অংশই এ দম্পতি ব্যাংকে রেখেছেন। সেখান থেকে মাসে মাসে যে সুদ পান, তা–ই তাঁদের একমাত্র আয়ের উৎস।
ভালো অনেক ব্যাংকেও আমানতের সুদহার কমতে কমতে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছেন এ দম্পতি। আলাপকালে ফিরোজা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৪ সালে আমি যখন অবসরে যাই, তখন ব্যাংকে টাকা রেখে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পেতাম। জীবনযাত্রার খরচও ছিল কম। যখন অবসরে যাই, তখন আমার মাসে ৪০০ টাকার ওষুধ লাগত, এখন লাগে ৪ হাজার টাকার। তাই সরকারের ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত অবসরভোগী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য আলাদা সুদহারের ব্যবস্থা করা, যাতে আমাদের জীবনযাত্রায় সুদের কমবেশির প্রভাব না পড়ে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের আমানতের সুদহার এখন থেকে তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) দেশে মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ হিসাব বিবেচনায় নিলে এখন থেকে ব্যাংকে আমানতের সুদ হবে ন্যূনতম সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে সেটি তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে।
তাতেই আপাতত স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ফিরোজা রহমান। তবে তাঁর প্রশ্ন, ব্যাংক যদি মেয়াদি আমানতের সুদ বাড়াতে পারে, তাহলে অন্য আমানতের ক্ষেত্রে পারবে না কেন? অবসরভোগী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কথা ভেবে মেয়াদি আমানতের পাশাপাশি চলতি, সঞ্চয়ী ও মাসিক কিস্তিভিত্তিক স্কিমের সুদ বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। ফিরোজা রহমানের মতে, ‘আমরা অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের সঞ্চয়ের অর্থে বাকি জীবনটা নির্ভাবনায় পার করতে পারি, যদি সুদহারের ওঠা-নামায় আয় না কমে।’
ব্যাংকের পাশাপাশি ডাকঘর আমানতের বিষয়েও সরকারের নীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান ফিরোজা রহমান। ডাকঘর আমানতে সুদের হার সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মেয়াদি হিসাবের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। কিন্তু সেখানে একজন আমানতকারী নিজ নামে ১০ লাখ টাকার বেশি রাখতে পারেন না। আগে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাখা যেত। ফিরোজা রহমান বলেন, ‘সরকারের এ নীতি পরিবর্তনের কারণে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরাও বুঝি সরকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, ব্যাংক ব্যবসা করবে। কিন্তু তা যেন কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না হয়।’
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ১০,২০২১
রেটিং করুনঃ ,