Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আবুল খায়ের গ্রুপ মুদিদোকান থেকে ভারী শিল্পের নেতৃত্বে (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: মাসুদ মিলাদ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর একটি আবুল খায়ের। ছোট একটি দোকানের মাধ্যমে এ শিল্প গ্রুপের ব্যবসার বীজ রোপণ করেছিলেন প্রয়াত আবুল খায়ের। পরে তাঁরই উত্তরসূরিদের হাত ধরে এটি পৌঁছে গেছে সাফল্যের অনন্য এক উচ্চতায়। সেই গল্প নিয়েই এবারের মূল প্রতিবেদন।

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী থেকে প্রায় শূন্য হাতে চট্টগ্রামে এসেছিলেন সদ্য তারুণ্যে পা রাখা এক যুবক। জীবিকা নির্বাহে প্রথম চাকরি নেন নগরীর পাহাড়তলী বাজারের এক মুদিদোকানে। পরে নিজেই সেখানে দোকান দিয়েছেন। সেই দোকানের লাভের টাকায় ওই এলাকাতেই গড়ে তোলেন বিড়ির কারখানা। দুজন কর্মী নিয়ে শুরু করেন হাতে বানানো বিড়ি। পরে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায়ও সম্প্রসারণ করেন বিড়ির কারখানা। এভাবে ব্যবসা একটু একটু করে বড় হতে শুরু করে। বিড়ি কারখানার বাইরে ইটভাটা ও লুঙ্গি তৈরির কারখানাও করেছেন। করেছেন সিনেমা হলে বিনিয়োগ। পণ্য বাণিজ্যও শুরু করেছিলেন। আবার শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে জমিও কিনে রেখেছিলেন। তবে বড় শিল্পের গোড়াপত্তনের আগে ১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের।

মৃত্যুর আগে আবুল খায়ের উত্তরসূরিদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার বীজ বুনে গিয়েছিলেন। তাঁর সন্তানেরা সেখান থেকে কঠোর পরিশ্রমে সেটিকে নিয়ে গেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের বেসরকারি খাত নিয়ে ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে আয়ের দিক থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এমন ২৩টি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। ওই প্রতিবেদনে যাদের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও এখন গ্রুপটির বার্ষিক আয় আরও অনেক বেশি।
আবুল খায়ের গ্রুপ বর্তমানে শিল্পের অনেক খাতেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলেই হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সিমেন্ট কারখানা শাহ সিমেন্ট আবুল খায়ের গ্রুপের মালিকানাধীন। ঢেউটিনের বাজারেও শীর্ষে আছে গরু মার্কা ঢেউটিন ব্র্যান্ড নিয়ে। আবার রডের বাজারে একেএস ব্র্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। দ্রুততম সময়ে স্যানিটারি পণ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে তাদের ব্র্যান্ড স্টেলা। মার্কস ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধসহ অনেক খাদ্যপণ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গ্রুপটি। তাদের চায়ের ব্র্যান্ড সিলন বর্তমানে বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে।
দোকানের চাকরি দিয়ে শুরু

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামের সেরাজুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে মেজ আবুল খায়ের। ব্রিটিশ আমলে ১৯২৯ সালে জন্ম তাঁর। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গ্রামের পরিচিত এক ব্যক্তির হাত ধরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে আসেন তিনি। সেটি ১৯৪৬ সালে। সেখানে গাফফার সাহেব নামের এক ব্যক্তির মুদিদোকানে চাকরি নেন। মাস শেষে যা বেতন পেতেন, খরচের জন্য কিছু টাকা রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। কয়েক বছর চাকরির পর নিজের দোকান করার স্বপ্ন জাগে আবুল খায়েরের। বাবা সেরাজুল হককে সে কথা জানালেন। বাবা ছেলের আশা পূরণের জন্য জমি বেচে ছেলের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। বাবার দেওয়া টাকা ও নিজের জমানো টাকা মিলিয়ে ১৯৫০-৫১ সালের দিকে পাহাড়তলী বাজারে মনিহারি পণ্যের দোকান দেন আবুল খায়ের। সে সময় পাহাড়তলীতে হজ ক্যাম্প চালু হয়। হাজিরা ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে হজ করার জন্য সৌদি আরবে যেতেন। হাজিদের আনাগোনায় দুই বছরে দোকানের ব্যবসায় বেশ লাভ হয়। তবে আবুল খায়েরের স্বপ্ন ছিল আরও বড়।

একনজরে
প্রতিষ্ঠাতা: আবুল খায়ের (১৯২৯–১৯৭৮)
সদর দপ্তর: পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
প্রথম প্রতিষ্ঠান: মুদিদোকান (১৯৫০–৫১ সালে)
প্রথম ক্ষুদ্র শিল্প: হাতে বানানো বিড়ি—৪২ নম্বর আবুল বিড়ি (১৯৫৩ সালে)
প্রতিষ্ঠাতার ব্যবসা: বিড়ি, ইটভাটা, লুঙ্গি ও চাদর, কারখানা ও ট্রেডিং
উত্তরসূরিদের হাতে প্রথম ভারী শিল্প: ঢেউটিন কারখানা (১৯৯৩ সালে)
বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান: ঢেউটিন, রড, সিমেন্ট, সিরামিকস পণ্য ও টোব্যাকো কারখানা
নিত্যব্যবহার্য পণ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা: চা, গুঁড়ো দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, জুস, স্ন্যাকস ও ক্যান্ডি
২০২০–২১ অর্থবছরে কর প্রদান: ৬,৫২১ কোটি টাকা
বার্ষিক আয়: ১৭০ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা (সূত্র: আইএফসি)

বিড়ি কারখানা দিয়ে শিল্পের হাতেখড়ি

পঞ্চাশের দশকে দেশজুড়ে ছিল পাট, বিড়িশিল্প, ইটভাটা ও হস্তচালিত তাঁতের কারখানার চল। দোকানের লাভের টাকায় পাহাড়তলী বাজারেই ১৯৫৩ সালে দুজন কর্মী নিয়ে বিড়ি বানাতে শুরু করেন তিনি। নিজেই আবার সেই বিড়ি বিক্রি করতেন। নাম দেন ‘৪২ নং আবুল বিড়ি’। বিড়ির ব্যবসা জমে ওঠে। তাতেই ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ফেনীর পাঁচগাছি, নোয়াখালীর চৌমুহনী ও কুমিল্লার লাকসামেও বিড়ির কারখানা চালু। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় হারাগাছ থেকে তামাকপাতা সংগ্রহ করতেন তিনি। পরে সেখানেও প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলেন।

বিড়ির কারখানা সম্প্রসারণের আগে ইটভাটার ব্যবসাও শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাট এলাকায় জমি কিনে গড়ে তোলেন ইটভাটা। দু-তিন বছর পর সেই ইটভাটা বন্ধ করে খুলশীতে মুরগি ফার্মের কাছ থেকে ৪৫ একর জমি কিনে ইটভাটা দেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেটি চালু ছিল।

শিল্পকারখানার গড়ে তোলার পাশাপাশি আমদানি বাণিজ্যেও যুক্ত হন আবুল খায়ের। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামে আমদানি বাণিজ্যে তখন অবাঙালিদের দাপট। বাঙালিরা অবাঙালিদের এজেন্সিতে চাকরি করতেন। সে সময়ে খাতুনগঞ্জের অদূরে জেল রোডে প্রতিষ্ঠান খুলে পণ্য বাণিজ্যের ব্যবসা শুরু করেন আবুল খায়ের। করাচি থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হতো সে সময়। ধীরে ধীরে আবুল খায়ের ইস্পাতের পাত, সিমেন্ট, নারকেল তেল, গুঁড়া দুধ, সিগারেটের কাগজ আমদানির ব্যবসায় যুক্ত হন। এখনো গ্রুপের আমদানি বাণিজ্য পরিচালিত হয় পুরোনো এই ভবন থেকে।

১৯৬৮ সালে পাহাড়তলী বাজারের কাছে চালু করেন লুঙ্গি কারখানা। নাম দেন শিশমহল। সে সময় শিশমহল লুঙ্গি খুব জনপ্রিয় ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে সুতার অভাবে লুঙ্গির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে কারখানার জায়গা ফেলে রাখেননি। বিড়ির কারখানা সম্প্রসারণ করেন সেই জায়গায়।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সিনেমা হলেও বিনিয়োগ করেন। ‘রূপ ভারতী’ নামের সেই সিনেমা হল ২০০৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। তবে আবুল খায়েরের কনিষ্ঠ সন্তান শাহ রফিকুল ইসলামের (টিটু) মৃত্যুর পরদিনই পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিনোদনসংক্রান্ত সিনেমা হলের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।

অল্প বয়সে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে আবুল খায়েরের শরীরে। তবু তিনি থেমে থাকেননি। চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকায় টেক্সটাইল কারখানার জন্য আবেদন করেছিলেন। সে সময় দেশে বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। উদ্যোক্তারা শিল্প খাতে পা রাখতে শুরু করেছিলেন। তবে বড় শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন আবুল খায়ের। এ সময় বিড়ির চার কারখানা, ইটভাটা, সিনেমা হল ও জেল রোডে ট্রেডিংয়ের ব্যবসা ছিল তাঁর। শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমিও রেখে যান।
টিকিয়ে রাখার লড়াই

আবুল খায়ের যখন মারা যান, তখন বড় সন্তান আবুল কাশেম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাই ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে আবুল খায়েরের স্ত্রী মাছুদা বেগমের তখন দিশেহারা অবস্থা। একদিকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা, অন্যদিকে আট ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। সব মিলিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় বড় ছেলে আবুল কাশেম পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত হন ব্যবসায়। গৃহিণী থেকে মাছুদা বেগম প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক গাজীউল হক ও আবুল খায়েরের ছোট ভাই আবুল হোসেন ব্যবসা টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ান।

কয়েক বছরের মাথায় আবুল খায়েরের রেখে যাওয়া শিল্প ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন উত্তরসূরিরা। এরপর হাত দেন ব্যবসা সম্প্রসারণে। সে সময় রাষ্ট্রমালিকানাধীন কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। দেশে বেসরকারীকরণ শুরুর দ্বিতীয় ধাপে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার বালাগাম ওয়ালা ভেজিটেবল প্রোডাক্টস কারখানা তাদের মালিকানায় আসে।

উত্তরসূরিদের এগিয়ে যাওয়া

বিড়ির কারখানা ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছিল আবুল খায়েরের। তাঁর উত্তরসূরিদের ক্ষেত্রে ছিল বালাগাম ওয়ালা ভেজিটেবল প্রোডাক্টস কারখানা। এই কারখানায় সয়াবিন তেল, শর্ষে ও ঘি তৈরি হতো। মূলত বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তা পরিশোধন করে বিক্রি হতো।

বড় ছেলে আবুল কাশেম তত দিনে ব্যবসায় বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। সয়াবিন তেলের কারখানা থেকেও মিলছিল ভালো মুনাফা। কারণ, সে সময় চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের কারখানা ছিল হাতে গোনা। এক দশক ভালো আয় হয় এই কারখানা থেকে। বড় সন্তানের পর ব্যবসায় যুক্ত হন আবুল খায়েরের দ্বিতীয় সন্তান আবুল হাশেম। পরবর্তীকালে ব্যবসায় যোগ দেন আবু সাঈদ চৌধুরী, শাহ শফিকুল ইসলাম ও শাহ রফিকুল ইসলাম। আগের ব্যবসা আর নতুন শিল্প মিলে বড় হওয়ার পথ তৈরি করে দেয় আবুল খায়ের গ্রুপকে।

বিনিয়োগ থেকে লাভের টাকায় নতুন শিল্প গড়ায় মনোযোগ দেন সন্তানেরা। বাবার মতো সন্তানদেরও ছিল শিল্পকারখানা গড়ার অদম্য স্পৃহা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সালে ফেনীর মহিপালে ইলিয়াছ ব্রাদার্স থেকে ঢেউটিন কারখানা কিনে নেন। এক বছর পর বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের নাসিরাবাদে জি এম স্টিল লিমিটেডের মালিকানা আসে আবুল খায়ের গ্রুপের হাতে। সেখানে কনডেন্সড মিল্ক ও গুঁড়া দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা করা হয়। পুরোনো কারখানা সরিয়ে ১৯৯৭ সালে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাটে দেওয়া হয় ঢেউটিনের বড় কারখানা। বিড়ির পর ১৯৯৮ সালে সিগারেট উৎপাদন শুরু করে গ্রুপটি।
বড় শিল্পে রূপান্তর

আবুল খায়েরের উত্তরসূরিদের ভারী শিল্পে হাতেখড়ি ১৯৯৩ সালে। ঢেউটিন দিয়ে শুরুর পর সেই দশকে ঢেউটিন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। কারখানা বড় করেছেন। পুরোনোদের ছাড়িয়ে শীর্ষে নিয়ে গেছেন আবুল খায়ের গ্রুপের ঢেউটিনের ব্র্যান্ড গরু মার্কা ঢেউটিনকে। ২০০২ সালে সিমেন্ট শিল্পে যুক্ত হয় এ গ্রুপ। মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে সিমেন্ট কারখানায় বিনিয়োগ করে তারা। ২০১৮ সালে ডেনমার্কের এফএলস্মিথ প্রযুক্তিতে বিশ্বের একক বৃহত্তম ভার্টিক্যাল রোলার মিল (ভিআরএম) স্থাপন করে শাহ সিমেন্ট গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পায়। বছরে অর্ধকোটি টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয় এই কারখানায়। ২০০৪ সালে চা বিপণনে যুক্ত হয় গ্রুপটি। চায়ের বাজারে শতবর্ষী অনেক প্রতিষ্ঠানকে ছাড়িয়ে খুব দ্রুত দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে গ্রুপটির সিলন ব্র্যান্ডের চা।

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি সীতাকুণ্ডে রড তৈরির কারখানায় বিনিয়োগ করে। দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস পদ্ধতিতে রড উৎপাদন শুরু করে। বার্ষিক ১২ লাখ টন রড উৎপাদনের এই কারখানার উৎপাদন দিয়ে একেএস ব্র্যান্ড বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০১১ সালে সিরামিকস শিল্পেও বিনিয়োগ করে গ্রুপটি। ফেনীর মহিপালে ঢেউটিনের পুরোনো কারখানায় ম্যাচ কারখানা গড়ে তুলেছেন উত্তরসূরিরা। সমুদ্র ও নৌপথে নিজস্ব জাহাজ ও নৌযানের পাশাপাশি সড়কপথে পণ্য পরিবহনে এই প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ রয়েছে।

শূন্য থেকে শীর্ষে

আবুল খায়েরের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানেরা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন। বড় ছেলে আবুল কাশেম এখন গ্রুপ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় ছেলে আবুল হাশেম আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তৃতীয় ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চতুর্থ ছেলে শাহ শফিকুল ইসলাম পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রুপের হাল ধরা চার সন্তানই পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবুল খায়েরের মৃত্যুর পর পড়াশোনা করা অবস্থাতেই যুক্ত হয়েছেন গ্রুপের ব্যবসা-বাণিজ্যে। অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার কারণে তাঁরা যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন।

আবুল খায়ের গ্রুপের হাত ধরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। গত অর্থবছরে গ্রুপটি সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৬ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর মিলে গত অর্থবছরের সরকারের যত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার আড়াই শতাংশ দিয়েছে গ্রুপটি। শুধু কর্মসংস্থানই নয়, করোনাকালে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রুপটি। দেশে যখন অক্সিজেনের সংকট, তখন দ্রুত গ্রুপটি সারা দেশে ১৭টি অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারখানায় উৎপাদিত অক্সিজেন বিনা মূল্যে বিতরণ করেছে। সমাজের কল্যাণে কাজের শুরুটাও করেছিলেন আবুল খায়ের। নিজ গ্রামে স্কুল গড়ে তুলেছিলেন।

১৯৬৮ সালে পাহাড়তলীতে আবুল খায়েরের গড়ে তোলা লুঙ্গি ও বিড়ি কারখানায় এখন আবুল খায়ের গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। ১৯৬৪ সালে তাঁর কেনা জমির সঙ্গে প্রয়োজনীয় জমি কিনে ভাটিয়ারিতে সন্তানেরা পরে প্রতিষ্ঠা করেন ঢেউটিন কারখানা। আবুল খায়েরের কেনা জমির পাশে ২০০৯ সালে রডের কারখানা গড়ে তুলেছেন সন্তানেরা। কুমিল্লার লাকসামে বিড়ি কারখানার জায়গা সম্প্রসারণ করে ১৯৯৮ সালে সিগারেট কারখানা গড়ে তুলেছেন। খুলশীতে ইটভাটার জায়গায় এখন রড ও চায়ের গুদাম। আবুল খায়ের পণ্যের ট্রেডিং শুরু করেছিলেন ১৯৬৫ সালে, জেল রোডে। তাঁর সন্তানেরা শিল্পের পাশাপাশি এখন বহুগুণ বড় করেছেন ট্রেডিং ব্যবসাকে। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে পাথর আমদানি। শিল্পে রূপ দিতে করেছেন রেডিমিক্স কারখানাও। সবকিছুর যেন বীজ বপন করে দিয়েছিলেন বাবা। সেটিকেই চারাগাছ থেকে মহিরুহে রূপান্তর করেছেন সন্তানেরা।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ২৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ