আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে —
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে ।
————— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এখন আষাঢ়ের প্রথম ভাগ, তবে আষাঢ়ের যে রূপ আকাশের থাকার কথা ছিল ঠিক তেমন ছবি আষাঢ়ের প্রথম প্রথম ভাগ ফুঁটে উঠে নি, কিন্তু আষাঢ়ের আসল রূপে আষাঢ় আসবেই যেমন করে কবিগুরু আষাঢ় যেমন বর্ণনা দিয়েছেন-
” নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।”
যেমন তেমন একটি স্থানে দাঁড়িয়ে বা বসে আষাঢ়ের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় তো যায় না, অন্ততঃ ফিতার মত সবুজ মাঠের মাঝে শুয়ে থাকা একটি নদীর ধারে বহু বয়সের একটি বট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বা বসে আষাঢ়ের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বেশ, পাহাড়ের টিলায় বসে, বা টিনের ঘরের বারান্দায় বসে।
ছয় ঋতুর আমাদের এই দেশে আষাঢ় শ্রবন মিলে যে বর্ষা ঋতু, এই ঋতুর মত উন্নত সম্ভার, উন্নত সম্পদ আর বর্ণনার বাকি পাঁচ ঋতুতে আছে বলে মনে হয় না। সারা আকাশকে কাঁপিয়ে, বাতাসকে কাঁপিয়ে এই আষাঢ়ের আগমন। সকল মাস বা ঋতু থেকে ভিন্ন এক আকাশের ছবিতে আঁকা আষাঢ়। নদীতে, খালে, বিলে, মাঠে। একটি স্বতন্ত্রতা যেন কোন মাস বা ঋতুর সাথে মিল রাখে না।
মনে, চিন্তা চেতনায়, ভাবনায় আষাঢ় যে বড় একটি প্রভাব ফেলে নিজের মধ্যে একটি ছোট্ট একটি প্রমান আনার জন্য অন্ততঃ একদিন আষাঢ়ের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা উচিত। আলো ঝলমলে প্রসাদে, দালানে সময় দিন মাস বা ঋতু সময়ের স্রোতে চলে যাবে তবে যদি আষাঢ়ের সৌন্দর্যকে একদিনের জন্য উপভোগ করা না যায় তখন পৃথিবীতে ষোল আনাই মিছের মত জীবন হয় বা অনেকটা ও ভাবেই বেঁচে থাকা।
ঝলমলে প্রসাদে, উঁচা উঁচা দালানে থেকে শত বছর পার করিয়ে দেওয়া যাবে তবে প্রকৃতির বিচারে সেটাকে একটি পূর্নাংগ জীবন যাপন বলা যায় না। আষাঢ়ের ঝরঝর ধারায় একবার যদি বৃষ্টিতে ভিজা না যায় বা হাতে বৃষ্টির ছোঁয়া না লাগে তবে কেমন এ জীবন তবে !!!!
বড় সখের বড় শহুরবাসী হয়ে কবির আবেদনে সত্যি কি মনে সাড়া দিবে !!
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।
যদি সৌরম্য দালানের নিচে প্রতি দিনের মত ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় গাড়ি এসে দাঁড়ায়, গাড়ির দরজা-কপাট বন্দ রেখে, হাতে খবরের কাগজ রেখে, কানে মুঠো ফোন বা আধুনিক গানের সুর কি কবির আবেদনে সত্যি মনে সাড়া দিবে – ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে ।
যে দিন আকাশ ছেয়ে আষাঢ় আসবে সেদিন আপন মনে আমাদের মনে গেয়ে উঠবে নানান আষাঢ়ের গান
” আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে —
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে ।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে ।
রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের ‘পরে
নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে ।
এসেছে এসেছে এই কথা বলে প্রাণ ,
এসেছে এসেছে উঠিতেছে এই গান ,
নয়নে এসেছে , হৃদয়ে এসেছে ধেয়ে ।
আবার আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে ।”
———————- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তারিখ: জুন ১৬, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,