Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায় – কবিকে শুভ জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

Share on Facebook

কবি জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ – ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪; ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ – ৫ কার্তিক, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।[১] মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।

বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘কবিতা’ পত্রিকায় কবিদের গদ্য রচনা প্রকাশের উদ্দেশ্যে একটি প্রবন্ধ সংখ্যা প্রকাশ করলে সেখানে জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রবন্ধ ‘কবিতার কথা’ স্থান পায়। সেই লেখার শুরুতেই জীবনানন্দ লিখলেন, ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি।’

জীবনানন্দ দাশ, যাঁকে রবীন্দ্র-নজরুল পরবর্তী যুগের প্রধান কবি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কাব্য সমালোচকেরা, জীবিত অবস্থায় কোনোরকম মর্যাদা তো পানইনি বরং অন্যায় সমালোচনার কশাঘাতে হয়েছিলেন ক্ষতবিক্ষত। আর এঁদের মধ্যে শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাস ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। ১৯৩১ সালে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল জীবনানন্দের কবিতা ‘ক্যাম্পে’। কবি বিষ্ণু দে তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন কবিতাটি। জ্যোৎস্না রাতে শিকার ছিল কবিতাটির মূল উপজীব্য। কবিতাটি প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে উঠল অশ্লীলতার অভিযোগে। খড়গ হাতে ময়দানে নেমে পড়লেন সজনীকান্ত।

এদিকে জীবনানন্দকে বুদ্ধদেব বসু বললেন ‘নির্জনতার কবি’, অন্নদাশঙ্কর রায় বললেন, ‘শুদ্ধতম কবি, কবিতা অনুরাগীরা আখ্যা দিলেন ‘প্রকৃতির কবি’ এবং ‘রূপসী বাংলার কবি’। বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সমর সেনের ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি। এই কবিতা পড়ে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেব বসুকে চিঠি লিখে বললেন যে এই কবিতাটি আসলে চিত্রময় রূপ। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ নামে একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করলেন আর তাতে জায়গা করে নিল জীবনানন্দ দাশের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি।

১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সালের জীবনানন্দ দাশের জন্ম অবিভক্ত বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) বরিশাল শহরে। তাঁদের আদি বাড়ি ছিল ঢাকা বিক্রমপুর। জীবনানন্দের পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত আদি বাড়ি ছেড়ে বরিশাল শহরে থাকতে শুরু করেন। সর্বানন্দ জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বরিশালের ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং তিনি সারাজীবন জনহিতকর কাজে ব্যাপৃত থাকতেন। বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক। তিনি ছিলেন প্রাবন্ধিক এবং বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও সমাজের মুখপত্র ‘ব্রাহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। জীবনানন্দের মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি। একটি কবিতার দুই লাইন বললেই পাঠক কবি কুসুমকুমারী দাশকে চিনতে পারবেন। কবিতাটি হল, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ জীবনানন্দের ছোটো ভাই অশোকানন্দ স্কুলে আবৃত্তি করবে। মায়ের কাছে জানতে চাইল কোন কবিতা আবৃত্তি করা যায়? মা সঙ্গে সঙ্গে ওই কবিতাটি লিখে ফেললেন।

ছোটোবেলায় খুব ভোরে বাবার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি এবং মায়ের গান শুনে ঘুম ভাঙতো জীবনানন্দের। বাবা সত্যানন্দ খুব ছোটোদের স্কুলে ভর্তি করার পক্ষপাতি ছিলেন না। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই লেখা ও ছবি আঁকার প্রতি ছিল তাঁর ঝোঁক। ১৯১৫ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করলেন। ১৯১৭ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করলেন প্রথম বিভাগে। এরপর পড়াশোনা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯১৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে বিএ পাস করলেন। ১৯১৯ সালে ‘ব্রাহ্মবাদী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম একটি কবিতা ছাপা হল। কবিতাটির নাম ‘বর্ষ আবাহন’। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করলেন। কিন্তু এবার পেলেন দ্বিতীয় শ্রেণি। অবশ্য এই পরীক্ষার আগে তিনি দীর্ঘদিন রক্ত আমাশয়ে ভুগেছিলেন। এমএ পাস করার পর ভর্তি হলেন আইন কলেজে। তবে আইন পড়া তিনি শেষ করেননি।

১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু হলে ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল তাঁর কবিতা ‘দেশবন্ধু স্মরণে’। কবিশেখর কালিদাস রায় ওই কবিতাটি পড়ে বললেন যে এই কবিতাটি নিশ্চয়ই কোনো প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে লেখা। শুধু কবিতাই নয়, তিনি অনেক প্রবন্ধ, গল্প এমনকী উপন্যাসও লিখেছিলেন। তাঁর লেখা অন্তত ২১ টি উপন্যাস এবং ১২৬ টি ছোটো গল্পের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ১৯২৫ সালেই ‘ব্রাহ্মবাদী’পত্রিকায় তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে’ প্রকাশিত হয়। এই প্রসঙ্গে বোধ হয় বলা দরকার যে তিনি তাঁর লেখা প্রবন্ধ, গল্প ইত্যাদি একটা সুটকেসে ভরে রেখে দিতেন কিন্তু প্রকাশ করতেন না। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে মঞ্জুশ্রী সুটকেস ভর্তি জীবনানন্দের অপ্রকাশিত রচনাগুলো নিয়ে মেচেদা থেকে হাওড়ায় আসছিলেন। সুটকেস রেখেছিলেন সিটের নিচে। হাওড়া স্টেশনে নামার সময় দেখলেন সুটকেস গায়েব। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ এক দোকানদারকে ধরল যে ওই সমস্ত পাণ্ডুলিপির পাতা ছিঁড়ে কিছু জিনিস বিক্রি করছিল। কিছু পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেলেও কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সেই দোকানদারের কাছ থেকে জানা গেল যে সুটকেস চোর গয়নাগাটি বা অন্যান্য দামী জিনিসের লোভে ওই সুটকেসটা চুরি করলেও পরে সাড়ে বারো টাকায় ওই পাণ্ডুলিপিগুলো ওই দোকানদারকে বিক্রি করে দেয়।

জীবনানন্দ পড়াশোনা শেষ করে সিটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করলেন। চাকরি জীবনে দুর্ভাগ্যের শুরু তখন থেকেই। হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারীদের ডাকে দলে দলে হিন্দু ছাত্ররা সিটি কলেজ ছেড়ে দিল। ছাত্র সংখ্যা কমে যাবার ফলে সিটি কলেজ থেকে অনেক অধ্যাপকের চাকরি গেল, জীবনানন্দরও। বাধ্য হয়ে তিনি বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে যোগ দিলেন। কিন্তু কলকাতার টানে আড়াই মাস পরেই ফিরে এলেন কলকাতায়। কিন্তু পড়লেন চরম আর্থিক দুরবস্থায়। গৃহশিক্ষকতা এবং লেখালিখির আয় থেকে শুরু হল দিন গুজরান। ১৯২৯ সালে যোগ দিলেন দিল্লির রামযশ কলেছে। সেখানে ছিলেন মাত্র চার মাস। আবার ফিরলেন কলকাতায়। ১৯৩০ সালে বিয়ে করলেন লাবণ্য দেবীকে। করলেন জীবন বীমার এজেন্টের কাছ। কিছুদিন ব্যবসাও করলেন। কিন্তু কোনোটাই স্থায়ী হল না। ১৯৩৫ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনা করলেন। আবার ফিরে এলেন। কিছুদিন খড়গপুর কলেজে, কিছুদিন বড়িশা কলেজে অধ্যাপনা করলেন। মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন হাওড়া গার্লস কলেজে।

দারিদ্র ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। এর মধ্যেই প্রকাশিত হল বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা, জাতি দাঙ্গার প্রেক্ষিতে লেখা ‘১৯৪৬-৪৭’ ও আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ। ভারত ভাগের সময় চলে এলেন কলকাতায়। ‘দৈনিক স্বরাজ’ পত্রিকার রোববারের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনা করলেন সাত মাস। কিন্তু সে চাকরিও গেল কাজী নজরুলের বিষয়ে একটি রচনা লেখার ‘অপরাধে’। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের সময়ই তিনি তাঁর পদবি ‘দাশগুপ্ত’ থেকে গুপ্ত ছেঁটে হয়ে গেলেন জীবনানন্দ দাশ।

১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর জীবনানন্দ মুখোমুখি হলেন এক ট্রাম দুর্ঘটনার। রাসবিহারী এভিনিউ ক্রস করার সময় ট্রামের ধাক্কায় মারাত্মক জখম হলেন তিনি। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর পাঁজরের হাড় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। পথচারী, সামনের চায়ের দোকানের মালিক-কর্মচারীরা ধরাধরি করে তাঁকে নিয়ে গেলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধান চন্দ্র রায় হাসপাতালে তাঁকে দেখতে এলেন। চিকাৎসার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সমস্ত চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২২ অক্টোবর তিনি মারা গেলেন।
সেই সময় এই মৃত্যূকে কেউ বললেন যে এটা আত্মহত্যা। আবার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেল যে রাস্তা পার হবার সময় তাঁর দু’হাতে ছিল দুটো ডাব। যদি আত্মহত্যাই করবেন তবে দুহাতে ডাব নিয়ে যাবেন কেন? তাছাড়া আত্মহত্যা করার জন্য ট্রাম বেছে নেওয়া কিছুটা অস্বাভাবিক। কারণ ট্রামে কাটা পড়ে মৃত্যুর আর কোনও নজির কলকাতায় নেই।

‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হল। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করল।

প্রাণ জাগানো কিছু কবিতা

বনলতা সেন
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।”

আবার আসিব ফিরে
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হ’য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হবো— কিশোরীর— ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায়;

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে;
হয়তো খৈয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়;-রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে-

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে।
লেখক : স্বপন ভট্টাচার্য

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: ফেব্রুয়ারী

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ