” আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়”
আজ ( অক্টোবর ২২ ) কবি জীবানানন্দ দাশের ৬৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
বিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাংলার অন্যতম প্রধান কবি জীবানানন্দ দাশ। মর্মগত, সুমিত, নিরাবেগ ও সুস্থির গদ্যরীতির জন্যে তিনি বিশিষ্ট। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি তাঁর কাব্যে রূপময় হয়ে উঠেছে। আধুনিক নাগরিক জীবনের হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিষাদ ও সংশয়ের চিত্র তাঁর কবিতায় দীপ্যমান। স্বচ্ছ, সুন্দর, শান্ত ও স্নিগ্ধ রোমান্টিক কবিতার স্রষ্টা হিসেবে তিনি স্মরণীয় ও বরণীয়। তাঁর নিসর্গ বিষয়ক কবিতা ষাটের দশকে বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সংগ্রামী জনতাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবানানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা “বনলতা সেন”। ব্যাপক পাঠক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কবিতাটি। মুখে মুখে ঘুরে ফিরে এই কবিতার পঙক্তি।
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের জেলাশহর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫৪ সালের আজকের দিনে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করেন তিনি। অন্ধকার আর নক্ষত্র দেখার আজীবন চলায় জীবনানন্দ থেকে যাবেন আমাদের মননে, চিন্তায়। মৃত্যুদিনে বনলতা সেন এর কবির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
প্রিয় কবির প্রিয় কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে ধরা হলো-
” হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সে”
অথবা,
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
অথবা,
” আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;”
অথবা,
” সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছ;
পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন;
কালো চোখ মেলে ওই নীলিমা দেখেছ;
গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন
শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা-নগরীরর গায়ে”
অথবা,
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ঐ যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা ,
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
আবারও প্রিয় কবির প্রতি আমাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
তারিখ: অক্টোবর ২২, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,