লেখক: ফরিদ মজুমদার
পৃথিবীতে যত বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে, তার বেশির ভাগই ছিল মিথ্যা অজুহাতে অন্য দেশের সম্পদ লুট করার জন্য বা অন্য দেশের ওপর জোরপূবর্ক নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্য। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে চীনের তনকিন উপসাগরে ভিয়েৎকংরা নাকি আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ এমএসএস ম্যাডক্স (MSS Maddox) এবং ইউএসএস টার্নার জয়কে (USS Turner Joy) আক্রমণ করেছিল। এই মিথ্যা অভিযোগে আমেরিকা সে বছর ৩১ জুলাই নর্থ ভিয়েৎনামের হ্যানয়ের ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করে। পরে আমেরিকার উপপররাষ্টমন্ত্রী ভিঠম্যান বল (Widman Ball) স্বীকার করেছিলেন, ভিয়েৎনামে যুদ্ধে জড়িয়ে ভিয়েৎকংদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই আমেরিকা উসকানি দিতে যুদ্ধজাহাজ দুটি তনকিন উপসাগরে পাঠিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালে ভিয়েৎনামে লজ্জাকর পরাজয়ের পর আমেরিকানদের সায়গন থেকে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আজও অনেকের মনে আছে।
আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ানদের (১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত) উৎখাতের জন্যে ওসামা বিন লাদেনকে দিয়ে তালেবান সৃষ্টি করে যত রকম দুষ্কৃতিমূলক কার্যকলাপ আমেরিকানরাই তালেবানদের শিখিয়েছিল। সেই তালেবানই আবার অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল আমেরিকানদের বিরুদ্ধে, যখন নাইন–ইলেভেনের অজুহাতে আমেরিকানরা ২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করেছিল। অথচ নাইন–ইলেভেনের সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনো সম্পর্কই ছিল না। আমেরিকার সঙ্গে লেপটে থাকা আরও কিছু পশ্চিমা দেশ আমেরিকার সঙ্গে আফগানিস্তানে গিয়ে হাজির হয়ে তালেবানের নামে হাজারো নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করেছে।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলে Mother of all Bombs আফগানিস্তানে ফেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প (সাবেক প্রেসিডেন্ট) যে কত নিরীহ মানুষ হত্যা করেছেন, তার কোনো খবর কোনো সাংবাদিক নিতে পারেননি। পৃথিবীর কোনো মানুষ কোনোদিন জানতে পারেনি, কত লোক তাদের মা, ভাই–বোন, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে। কোনো দেশ থেকে কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি, এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত চুপ ছিল।
১৫ আগস্ট আমেরিকানদের আফগানিস্তান থেকে ছেড়ে যাওয়া সেই সায়গনের দৃশ্য মনে পড়ে। আমেরিকার সঙ্গী দেশগুলোর অনেকেই চলে গেছে। এরা আফগানিস্তানের জনগণের জন্য কিছুই করেনি। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য।
কোথায় আজ হামিদ কারজাই এবং আশরাফ গনি! ডলার নিয়ে সবাই পালিয়েছে। আমেরিকা এবং কিছু পশ্চিমা দেশই মানবতার কারণ দেখিয়ে এদের আবার আশ্রয় দেবে, কারণ এরা চুরি করা ডলার তাদের দেশের ব্যাংকেই জমা রেখেছে।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পারেননি, ব্রিটিশরা পারেনি (১৯১৯ সালে পালিয়েছিল), রাশিয়া পারেনি, শেষ পর্যন্ত আমেরিকা এবং তার সঙ্গীরাও পারল না আফগানিস্তানকে বশ করতে। এখন আফগানিস্তানের জনগণ নিজেরাই ঠিক করবে, তারা কোন পথে যেতে চায়।
তালেবান যদি সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন, খাওয়া–দাওয়া, কাপড়চোপড়, কর্মসংস্থান এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের দিনও শেষ হতে বেশি দেরি নেই।
লেখক: ফরিদ মজুমদার, চিকিৎসক, ডার্মস্টাড, জার্মানি
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,