তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পর থেকে দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। মহামারি করোনা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং দুর্যোগ খরার কারণে খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে কাবুল পতনের পর সাত দিন ধরে ব্যাংক বন্ধ থাকায় মানবিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে দেশটিতে অন্তত দেড় কোটি মানুষ অনাহারে ভুগছেন। চারদিকে খাদ্যের হাহাকার বাড়ছে।
এদিকে, কাবুল দখলের পর সরকার গঠনের তোড়জোড় চালানো তালেবান এখন অর্থের সন্ধান করছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি দেশ পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ, এএফপি ও দি হিন্দুর।
১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর পর থেকে দেশটির সব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোনো এটিএম বুথে টাকা নেই। চলছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন অফিস। এতে অর্থ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, অর্থের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন তারা। চারদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাজধানী ও শহরের দিকে ছুটছেন তারা।
সাবেক নৌ কর্মকর্তা পেন ফারথিং বর্তমানে কাবুলে একটি প্রাণী সহায়তা কেন্দ্র্র পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। তারা এখন খাবারের খোঁজে বাইরে চলে গেছেন।’
শুক্রবার একজন আফগান টুইট করে বলেন, ‘তিন শিশু নিয়ে আমরা খাদ্য সংকটে রয়েছি। আজ চিনি চা দিয়ে রুটি খেয়েছি। কাবুলে গ্যাসের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত, সব ব্যাংক বন্ধ, খাবারের দোকানে লোক নেই, মোবাইলে রিচার্জ করা যাচ্ছে না। আমরা জীবন নিয়ে শঙ্কিত।’
শুধু একজন আফগান নয়, হাজার হাজার মানুষ এখন খাবারের খোঁজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা করে মাত্র একটি প্রদেশে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করতে সমর্থ হয়েছে তারা।
ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির তিন কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে এক কোটি ৪০ লাখ বর্তমানে খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরি এলেন ম্যাকগ্রোয়ের্টি জানান, তিন বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো খরা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সহিংসতাকবলিত দেশটিতে করোনা মহামারি ও সামাজিক অবস্থার কারণে অর্থনীতিও ধসে পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থায় এখন আফগানিস্তানের প্রশাসনিক কাঠামো নেই। এরই মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর রিজার্ভ আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তা। এসব কারণে সেখানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মানুষের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে এবং প্রায় ২০ লাখ শিশুর পুষ্টিবিষয়ক বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন। এদিকে, দেশের ক্ষমতা দখলের পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা তালেবানের সামনে এখন বহু চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থ সংকুলান। দেশ ও সরকার চালাতে তাদের অর্থ প্রয়োজন। সাবেক সোভিয়েত সরকারের আমল থেকে শুরু করে হালের যুক্তরাষ্ট্র- সব সময়েই বিশ্বশক্তির তৈরি ‘পুতুল’ সরকার সব সময়ই বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। যেমন আশরাফ গনির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের ওপর নির্ভরশীল ছিল প্রবলভাবে। কিন্তু কাবুল দখলের পর তালেবান আর সেই ডলারের দেখা পাচ্ছে না। এমনকি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা আফগানিস্তানের প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের সম্পদ আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া তালেবান নিয়ন্ত্রিত দেশটিকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। অন্যান্য দেশ থেকে বৈদেশিক অর্থ সাহায্য পাওয়াও অনেক কঠিন এখন।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আটকে দেওয়া অর্থ আফগানিস্তানকে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান। সংগঠনটির মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আইএমএফের ঘোষণা অত্যন্ত অন্যায় ও অবিচারের শামিল। কারণ এ মুহূর্তে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য আমাদের অর্থ প্রয়োজন। এ জন্য আফগানদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে অর্থ ছাড়তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাস্তবে তারা এখন দেশ পরিচালনা জন্য অর্থ খুঁজছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালেবান মূলত অপরাধমূলক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করে থাকে। এর মধ্যে আছে মাদক চোরাচালান, আফিম উৎপাদন ও বিক্রি, চাঁদাবাজি ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। এভাবে বছরে ৩০০ মিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে তালেবান।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: আগষ্ট ২২ ,২০২১
রেটিং করুনঃ ,