Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আপনি কি একজন অত্যাচারী শাসক হতে চান (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: আনিসুল হক।

ইউটিউবে একধরনের ভিডিও অনেক দেখা যায়, আপনি কী করে একজন ভালো বক্তা হবেন বা কোটিপতি হওয়ার উপায় বা ঘরে বসে লাখ টাকা উপার্জন করা যাবে কী করে।

নেটফ্লিক্সে একটা সিরিজ দেখলাম, যার নাম ‘হাউ টু বিকাম আ টাইরান্ট’। কী করলে একজন উৎপীড়ক শাসক হওয়া যাবে। এটাকে বলা হচ্ছে অত্যাচারী শাসক হওয়ার হ্যান্ডবুক। ৩০ মিনিটের ৬ পর্বের সিরিজ। একটা এপিসোডে একেকজন মহা-উৎপীড়কের উৎপীড়ক হওয়ার কৌশল সম্পর্কে বলা হয়েছে।

‘একচ্ছত্র ক্ষমতা! দাঁড়ান, আপনি জানেন, আপনি এটা চান। শুধু আপনি জানেন না, কী করলে এটা আপনি পাবেন?’ ধারাভাষ্যকার পিটার ডিঙ্কলেজের কথাটা শুনে আগ্রহই তৈরি হয়। যদিও আমি নিজে অ্যাবসলিউট পাওয়ার বা চরম ক্ষমতা অর্জনও করতে চাই না, প্রয়োগও করতে চাই না; কিন্তু আমাদের দুনিয়ার ইতিহাসের নৃশংস স্বৈরশাসকেরা কী করে তা অর্জন করলেন, তা দেখার জন্য কৌতূহল বোধ করি। তবে এই সিরিজের শুরুতে আছে আরেকটা কথা, ‘স্বাধীনতা দুনিয়ার নিয়ম নয়। আমরা শাসিত হতে পছন্দ করি!’ কথাটা ভাবার মতো! পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষ কি কঠোর শক্তপোক্ত শাসকের শাসনকেই পছন্দ করে? অত্যাচারীর নৃশংসতা নিশ্চয়ই মানুষ পছন্দ করে না। তবে শাসকের কাছে রাজদণ্ড হাতে শক্তপোক্ত শাসনই হয়তো জনতা চায়, চায় যে দেশে যেন নৈরাজ্য না থাকে, একটা ‘সিস্টেম’ থাকে। হয় তো!

‘হাউ টু বিকাম আ টাইরান্ট’-এর ছয় পর্বে ছয়জন টাইরান্টের ক্ষমতা নেওয়া, ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা, ক্ষমতা ধরে রাখা ও ক্ষমতা প্রয়োগ করার কৌশলগুলো আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম পর্বে এসেছেন হিটলার। পর্বের নাম: ‘সিজ দ্য পাওয়ার’! ক্ষমতা দখল করো! হিটলার ছিলেন সামান্য একজন সৈনিক, যাঁর হাতের তালু ঘামত। ১৯৩৪ সালের মধ্যে তিনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও নৃশংস স্বৈরশাসক। জনগণের মধ্যে যে অসন্তোষ আছে, তা তোমার কণ্ঠে ধারণ করো, প্রকাশ করো, সব দুঃখের কারণ হিসেবে একটা শত্রুকে চিহ্নিত করো, ওই শত্রুর বিরুদ্ধে সবাইকে খেপিয়ে তোলো, একটা প্রতীক বানাও, ইউনিফর্ম বানাও, জনগণকে তোমার এই খ্যাপামির একটা অংশ করে ফেলো। এরপর সুযোগ বুঝে হামলে পড়ো।

দ্বিতীয় পর্বের উপজীব্য সাদ্দাম হোসেন, এই পর্বের নাম ‘ক্রাশ ইয়োর রাইভালস’। তোমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের গুঁড়িয়ে দাও। ১৯৭৯ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের খুন করতে থাকেন। তাঁর পার্টির ভেতরে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি এমনভাবে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন যে বাকি সবার জন্য এটা একটা ভয়াবহ শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। সবার সামনে থেকে ডেকে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সবাই দেখে, সবার মেরুদণ্ড দিয়ে ভয়ের সাপ নেমে যায়। নিজের আত্মীয়স্বজনকেও খুন করতেন সাদ্দাম, এমনকি খুন করেছেন নিজের জামাতাদের।

শাসন করো ভয় দেখিয়ে—ইদি আমিনকে নিয়ে পর্বের শিরোনাম। সত্যকে নিয়ন্ত্রণ করো—জোসেফ স্তালিনের কৌশল ছিল। গাদ্দাফির পর্বের শিরোনাম—একটা নতুন সমাজ গড়ে তোলো। চিরদিনের জন্য শাসন করো—উত্তর কোরিয়ার কিমকে নিয়ে পর্ব।

ধারাভাষ্যকার বর্ণনা দিচ্ছেন, সব স্বৈরশাসক একটা মন্ত্র প্রচার করে, আমি একাই কেবল সব সমস্যার সমাধান দিতে পারব। জনগণ তা অনেক সময় বিশ্বাসও করে। ইদি আমিনকে বলা হতো জেন্টল জায়ান্ট। এই টাইরান্টদের অনেকে ভীষণ জনপ্রিয়ও থাকে শুরুতে। (আমাদের সমাজবিজ্ঞানের ক্লাসে শিক্ষিকা পড়িয়েছিলেন, স্বৈরশাসক হওয়ার একটা উপাদান জনপ্রিয়তা।)

এই ছবির সমালোচকেরা বলছেন, এটা দেখতে দেখতে আমরা আমাদের সময়ের সঙ্গে মেলানোর অবকাশ পাই। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সত্যকে অপছন্দ করেন, তা তো আর এমনি এমনি নয়। ভারতেও আমরা দেখি শত্রু চিহ্নিত করা, ক্ষোভ উসকে দেওয়া, ইউনিফর্ম ধারণ করা…।

তো আপনি যদি সত্যি সত্যি একজন অত্যাচারী স্বৈরশাসক হতে চান, এই সিরিজটা দেখে অনুশীলন করা শুরু করতে পারেন। আপনাকে দয়ামায়াহীন হতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে, প্রচুর মানুষ মারতে হবে, সত্যের প্রকাশ বন্ধ করতে হবে, ক্ষমতা অর্জন করে তা স্থায়ী করতে হবে।

তবে আপনি যদি একজন নারী হন, তাহলে আপনার পক্ষে টাইরান্ট হওয়া সম্ভব নয় বলে এই সিরিজের ধারাভাষ্যকার বলে রেখেছেন। ইতিহাসে সব নৃশংস স্বৈরশাসকই ছিলেন পুরুষ। এই সিরিজের ছয় টাইরান্টের মধ্যে একজনও নারী নেই।

আমার সিরিজটা ভালোই লেগেছে। তবে একজন মানুষ তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য একের পর এক মানুষ মারছে, কখনো যুদ্ধ বাধাচ্ছে (যেমন ইরাকের কুয়েত দখল), হিটলার বা স্তালিনের মতো মানুষেরা কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিলেন, এসব দেখলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়!

মানুষ কি কোনো দিনও মানুষ হবে না! আমরা কি ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত’, সেই দেয়ালবিহীন পৃথিবী পাব না!

● আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ