বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা বিস্তারিত খবর প্রকাশ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব গণমাধ্যম ও সংস্থার মধ্যে এএফপি, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস, আল–জাজিরা, ভারতের দ্য ইকোনমিক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা উল্লেখযোগ্য।
এএফপির প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা’। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনকারী নেতারা শনিবার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অসহযোগ আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিপুল মানুষ অংশ নিয়েছেন। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের সামনে রোববার দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। তাঁকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
এপির প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সরকারের পদত্যাগের দাবির মধ্যে বাংলাদেশে আবারও বিক্ষোভ ও সহিংসতা’। এতে বলা হয়েছে, গত মাসে সংঘাত-সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর প্রতিবাদ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আজ (গতকাল) শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকার সমর্থকেরাও মিছিল করেছেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনে আলোচনার দরজা খোলা বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার শিক্ষার্থীরা নয় দফা থেকে এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এখন তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রশাসনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা সাধারণ মানুষকে কর ও বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদির বিল না দিতে, অফিস ও কলকারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার সারা দেশে নিজ দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জমায়েত করার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এপির প্রতিবেদনে।
নিউইয়র্ক টাইমস কোটা আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে বড় প্রতিবেদন করেছে। এতে বিশেষজ্ঞদের মতামতও যুক্ত করা হয়েছে। আজ প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি আগে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির কথা উল্লেখ নেই। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নেতাদের গণভবনে আলোচনার জন্য যেতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘নির্মমভাবে বিক্ষোভ দমনের দু-এক সপ্তাহ পর আবারও বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ’।
কাতারভিত্তিক আল–জাজিরা শুরু থেকেই কোটা আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত-সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করে আসছে। সম্প্রচারমাধ্যমটির আজকের শিরোনাম ছিল ‘শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন’। এতে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি আজ কুমিল্লা ও গাজীপুরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের ইকোনমিকস টাইমসের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশে উত্তেজনা বাড়ছে’। হিন্দুস্তান টাইমসের শিরোনাম করা হয়েছে ‘হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে’। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ আবার রক্তাক্ত! কুমিল্লায় পড়ুয়াদের মিছিলে গুলি, আহত পাঁচ’।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ০৪, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,